সুরমা টাইমস ডেস্ক:: কড়া নিরাপত্তার মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় পড়া শুরু করেছেন বিশেষ আদালতের বিচারক।
এ মামলার বিচারক ড. আখতারুজ্জামান আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে এজলাসে বসেন। তারপরই তিনি আদালত কক্ষ থেকে চেয়ারপারসনের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত বিশেষ বাহিনীকে বের করে দেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দেন। দায়িত্বরত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তখন ষেখান থেকে চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সেস (সিএসএফ) সদস্যদের বের করে দেন।
এরপরই বিচারক জানান, ‘এ মামরায় মোট ৬৩২ পৃষ্টার রায় দেওয়া হবে। এখানে যেহেতু সবটুকু পড়া সম্ভব না তাই সংক্ষিপ্ত রায় পড়া হবে।’
প্রথমেই বিচারক রায়ের প্রসিকিউশনের অভিযোগগুলো পড়ে শোনান।
এর আগে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, টিয়ারশেল নিক্ষেপ আর ধরপাকড়ের মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় শুনতে দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতে এসে পৌঁছেছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী আদালতের কক্ষে প্রবেশ করার পর এজলাসের সামনে রাখা একটি চেয়ারে বসেন। চেয়ারের সামনে একটি টুল রাখা হয়েছে। টুলের উপর টিসু, পানির বোতল ও খালেদা জিয়ার ব্যবহৃত ব্যাগ রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়ার পাশেই রয়েছেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ।
এর আগে সকাল পৌনে ৯টার দিকে এ মামলার অপর দুই আসামি ব্যবসায়ী সলিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদকে আদালতে আনা হয়। এরপর সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বিচারক ড. আখতারুজ্জামান বিশেষ আদালতে এসে পৌঁছান।
এ মামলায় মোট আসামি ছয়জন। তার মধ্যে তিনজন পলাতক। এই তিনজন হলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
খালেদা জিয়া সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে তাঁর গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে বের হন বলে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা শামসুদ্দীন দিদার এনটিভি অনলাইনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
খালেদা জিয়ার গাড়িবহর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মগবাজার এলাকায় এলে শত শত নেতাকর্মী সেখানে যুক্ত হন। এ সময় রাস্তার পাশেও অনেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে সেখানে যুক্ত হন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের ধাওয়া-ধাওয়া পাল্টা, সংঘর্ষ ও আটকের ঘটনা ঘটে।
সূত্র জানিয়েছে, সকাল থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসার ভেতরে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাঁর আইনজীবী ও দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন ভেতরে প্রবেশ করেন। এর পর সেখানে যান খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার, তাঁর স্ত্রী, মরহুম সাঈদ এস্কান্দারের স্ত্রী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানসহ কয়েকজন আত্মীয়স্বজন।
এদিকে, রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শহরজুড়ে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। মোতায়েন রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন-আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন—মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
একনজরে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা:-
- রমনা থানায় ২০০৮ সালের ৩রা জুলাই মামলা দায়ের করা হয়।
- মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক হারুন-অর রশিদ।
- এজাহারে টাকা আত্মসাতের (ঘটনার) সময়কাল হিসেবে ১৩ই নভেম্বর ১৯৯৩ হতে ২৮শে মার্চ ২০০৭ সালকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
- ২০১০ সালের ৫ই আগস্ট অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
- মামলার কার্যদিবস ২৬১ দিন ।
- খালেদা জিয়া হাজিরা দেন ৪৩ দিন।
- খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেন আট দিন।
- গত ২৫শে জানুয়ারি ২০১৮ রায়ের দিন ধার্য করেন বিশেষ আদালত-৫-এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান।
- রায়ের দিন ধার্য ৮ই ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2BM3YHT
February 08, 2018 at 02:36PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন