২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় : তারেক ও বাবরের সর্বোচ্চ শাস্তি চাওয়া


সুরমা টাইমস ডেস্ক :: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা মাথায় নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন কারাগারে। এ মামলায় তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানও ১০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন।

এদিকে চাঞ্চল্যকর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলাও শেষ পর্যায়ে। এ দুই মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ এই দলে থাকা হেভিওয়েট আসামিদের কী শাস্তি হতে পারে সেটাই ভাবনা সব মহলে। আইনজ্ঞরা বলছেন, বহুল আলোচিত এই মামলায় অভিযোগ প্রমাণ হলে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তিই হবে। দণ্ডবিধির ৩০২ ও ১২০-বি ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের কথা উল্লেখ রয়েছে। তারা বলেন, ভয়াবহ এই হামলার ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হলে ভবিষ্যতে আর কেউ এমন অপরাধে জড়াতে সাহস পাবে না। চাঞ্চল্যকর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলায় এরই মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। ২২৫ জন সাক্ষী উপস্থাপনের মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে দাবি করে মামলার ৪৯ আসামিরই সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন তারা। এখন আসামিপক্ষ তাদের যুক্তি উপস্থাপন করছে। এই যুক্তিতর্ক শেষ হলেই রায়ের জন্য দিন ঠিক করবেন বিচারক। বর্তমানে সপ্তাহে তিন দিন করে যুক্তি গ্রহণ করছেন বিচারক। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মার্চ-এপ্রিলেই এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ১৩ বছর আগের মামলাটি প্রথম দিকে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হয়ে ঢিলেঢালাভাবে চললেও বর্তমানে বিচার কার্যক্রম অনেক গতিশীল বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ তৎকালীন বিরোধী দলের পুরো নেতৃত্বকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা ছিল ওই হামলায়। তাই প্রধান আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা মামলাটি নিষ্ঠার সঙ্গে পরিচালনা করেছেন বলে জানান। তারা বলেন, আসামিপক্ষ বিচার দীর্ঘায়িত করতে আইনি মারপ্যাঁচে নানা কৌশল নিলেও বিচারকাজ এখন শেষ পর্যায়ে।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় একাধিক গ্রেনেড চার্জ করে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায় হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি) নামের একটি জঙ্গিগোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীর নেতা ও মামলার প্রধান আসামি মুফতি হান্নানের ইতিমধ্যে অন্য এক মামলার রায় অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়ে গেছে। রাজনৈতিকভাবে চাঞ্চল্যকর এ মামলার পর্যায়ক্রমে তদন্ত ও চার্জশিটে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রাজনৈতিক সচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নামও যুক্ত হয়েছে আসামির তালিকায়।

মামলার নথিসূত্রে জানা গেছে, দুটি মামলায় মোট আসামি ৫২ জন। তার মধ্যে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের এবং সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের ও শরীফ শাহেদুল ইসলাম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। ফলে এ মামলা থেকে তাদের নাম বাদ পড়েছে। অবশিষ্ট ৪৯ আসামির বিচার চলছে।

মামলা দুটিতে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৪১ আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০-বি, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ৩০২, ১০৯ ও ৩৪ এবং বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের ৩, ৪ ও ৬ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। এসব ধারায় হত্যা, হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, মারাত্মক অস্ত্র দিয়ে আঘাত, অপরাধে সহায়তা করা ইত্যাদি অভিযোগ আনা হয়েছে। ৪১ আসামির মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব পলাতক হারিছ চৌধুরী, সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তৎকালীন মহাপরিচালক আবদুর রহিম ও রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, হরকাতুল জিহাদ নেতা আবদুল মালেক, শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরের নাগরিক আবদুল মাজেদ ভাট প্রমুখ। সাবেক আইজিপি খোদাবক্স চৌধুরী, মো. আশরাফুল হুদাসহ আটজনের বিরুদ্ধে বিচার চলছে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে। তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মেজর জেনারেল (এলপিআর) এ টি এম আমিন, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দারসহ ১৮ জন এখনো পলাতক। লুত্ফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন। অন্য আট আসামি জামিনে রয়েছেন।

রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। গত বছর ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করে ২৫ কার্যদিবসে গত ১ জানুয়ারি যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ৪৪৫ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যালোচনা করে আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। ২ জানুয়ারি শুরু হয়েছে আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন। এর মধ্যে মামলার পলাতক আসামি তারেক রহমান, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হারিছ চৌধুরীসহ পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীরা তাদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেছেন। অন্য আসামিদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন অব্যাহত রয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা ২২৫ জন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করতে পেরেছি। তাদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে যে যুক্তি আদালতে দিয়েছি, এতে আমরা অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি বলেই আশা করি। আদালত বহুল আলোচিত এই মামলায় সব আসামিকেই সর্বোচ্চ শাস্তি দেবে, এটা রাষ্ট্রপক্ষের প্রত্যাশা।’ তিনি বলেন, ‘এ ধরনের মামলায় যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় তাহলে আর কেউ এমন ভয়ানক অপরাধে জড়াতে সাহস পাবে না।’

রাষ্ট্রপক্ষের আরেকজন আইনজীবী বিশেষ পিপি মোশাররফ হোসেন কাজল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা যেভাবে সাক্ষ্য-প্রমাণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছি তাতে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তিই হবে বলে আশা করি।’ আগামী মার্চ থেকে এপ্রিল নাগাদ মামলা দুটির বিচার শেষ হতে পারে বলে আশা ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানসহ ২৪ জন প্রাণ হারান। অল্পের জন্য বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2o0E5L1

February 11, 2018 at 01:41PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top