সুরমা টাইমস ডেস্ক ঃঃ বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সিলেট সফরে যাওয়ার পথে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে বিভিন্ন স্থানে রাস্তার দুই পাশে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ চড়াও হয়েছে এবং অন্তত ১৯ জনকে আটক করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ সোমবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে ঢাকার গুলশানের নিজ বাসভবন থেকে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী মাজার জিয়ারতের জন্য সিলেটের পথে বের হন। এর পর নারায়ণগঞ্জের আড়াউহাজার উপজেলা, নরসিংদীর শিবপুর, কিশোরগঞ্জের ভৈরব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। এ সময় গুলির ঘটনাও ঘটে।
এ সময় আটককৃতদের মধ্যে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, নরসিংদী জেলা বিএনপির সহসভাপতি সুলতান উদ্দিন মোল্লা, শহর বিএনপির সভাপতি গোলাম কবির কামাল, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন, আড়াইহাজার উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জুয়েল আহমেদ, উপজেলা ছাত্রদল নেতা রাজীব আহমেদ, মনির হোসেন প্রমুখ রয়েছেন।
হজরত শাহজালাল (র.) ও হজরত শাহপরাণ (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করতে আজ সোমবার সিলেটের উদ্দেশে রওনা দেন খালেদা জিয়া। বিকেল ৩টার দিকে খালেদা জিয়ার সিলেটে পৌঁছার কথা রয়েছে। বিকেল ৪টার দিকে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করবেন বিএনপিনেত্রী। পরে হজরত শাহপরাণ (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত শেষে তিনি সিলেট সার্কিট হাউজে যাবেন। সেখানে রাত্রিযাপন শেষে পরের দিন সড়কপথেই ঢাকায় ফিরবেন খালেদা জিয়া।
নরসিংদী থেকে প্রতিনিধি বিশ্বজিৎ সাহা জানান, খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে আজ সকাল থেকে বিএনপি নেতাকর্মী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা মহাসড়কের ভেলানগর এলাকায় অবস্থান নেয়। অন্যদিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতিহত করতে মাঠে ছিল ছাত্রলীগ-যুবলীগ। এ সময় ছাত্রলীগ-যুবললীগ নৌকার পক্ষে মহাসড়কে মিছিল করে। এতে মুখোমুখি অবস্থান নেয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাকমীরা।
উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হলে পুলিশ দুই দলের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়। আইনজীবীরা খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে মহাসড়কের পাশে দাঁড়াতে চাইলে পুলিশ তাদের ব্যানার ও ফেস্টুন কেড়ে নেয়।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নরসিংদী অতিক্রম করেন। তখন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনসহ নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানান।
খালেদা জিয়ার গাড়িবহর যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা ঢিল ছুড়ে মারেন এবং সরকারের পক্ষে স্লোগান দেয়। এ সময় সেখান থেকে ১১ জনকে আটক করে।
এ দিকে বিএনপি অভিযোগ করেছে, শিবপুরের কামারটেক সবুজ পাহাড় কলেজ এলাকায় দলের নেতাকর্মীদের পুলিশ লাঠিপেটা করে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে নাফিজ আশরাফ জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া সিলেট যাওয়ার পথে নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মীরা সাইনবোর্ড, কাঁচপুর, আড়াইহাজারের পাঁচরুখী এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য জড়ো হন। এ সময় পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হয়। কেড়ে নেয় তাদের ব্যানার-ফেস্টুন। একপর্যায়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে গুলি চালায় পুলিশ।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম মোল্লা অভিযোগ করেন, পুলিশ প্রতিটি পয়েন্টে তাদের বাধা দিয়েছে। পাঁচরুখী এলাকায় পুলিশ নেতাকর্মীদের রাস্তায় দাঁড়াতে দেয়নি। পুলিশে বাধার মুখে নেতাকর্মীরা রাস্তা ছেড়ে নিচে নেমে গেলেও পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় পুলিশ কয়েকটি শটগানের গুলি ছুড়ে। আহত হয় অন্তত পাঁচজন। তারপর ওই এলাকায় নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালায় পুলিশ।
জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ কর্মকর্তা সরাফত উল্লাহ এনটিভি অনলাইনকে জানান, ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, ছাত্রদল নেতা জুয়েল আহম্মেদ, মনির হোসেন ও রাজীকে।
অপরদিকে সাইনবোর্ড এলাকা থেকে পুলিশ আটক করে মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন, অ্যাডভোকেট আনোয়ার প্রধান ও অ্যাডভোকেট মাঈনুদ্দিন রেজাকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে আক্তারুজ্জামান রঞ্জন জানান, আজ বেলা সাড়ে ১১টায় আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে তিন বিএনপি কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বদরুল আলম তালুকদার বিএনপির তিনজন কর্মীকে আটকের খবর নিশ্চিত করেছেন। তবে আটককৃতদের কারো নাম সাংবাদিকদের দিতে অস্বীকার করেন তিনি।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কৃষকদলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কৃষকদলের যুগ্ম সম্পাদক তকদীর হোসেন মো. জসিম বলেন, বিএনপি চেয়ারপরসন খালেদা জিয়া সড়কপথে ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়াকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিএনপি নেতাকর্মীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য উদগ্রীব ছিল। কিন্তু আশুগঞ্জ থেকে সরাইল কুট্টাপাড়া পর্যন্ত পুলিশ কোনো নেতাকর্মীকে দাঁড়াতে দেয়নি। রাস্তায় দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেই পুলিশ লাঠিপেটা করে তাড়িয়ে দেয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, যেখানে বিএনপির কর্মীরা দাঁড়ানোর কথা সেখানে তাঁরা দাঁড়িয়েছেন এবং পুলিশ তাদের কোনো বাধা দেয় নাই। তবে পুলিশ নিরাপত্তার যাতে কোনো ঘাটতি না থাকে সে ব্যাপারে সতর্ক ছিল।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2E1nNs8
February 05, 2018 at 02:30PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন