সুরমা টাইমস ডেস্ক :: সরকারি এতিম তহবিলের টাকা এতিমদের কল্যাণে ব্যয় না করে পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়াসহ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামিরা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধ করেছেন বলে আদালতের রায়ে বলা হয়েছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, “এ ঘটনায় বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ মামলার ছয়জন আসামির প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে লাভবান হয়েছেন। তারা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন।”
অর্থনৈতিক দুর্নীতি রাষ্ট্রের অর্থনীতির স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করে এবং এর বাজে প্রভাব সমাজের প্রতিটি স্তরে সংক্রমিত হয় বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের এই মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত।
মামলার বাকি পাঁচ আসামি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রায় ঘোষণার ১১ দিন পর সোমবার বিকাল ৪টার দিকে হাজারের বেশি পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন বিচারক। এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের হাতে রায়ের সত্যায়িত কপি তুলে দেন আদালতের পেশকার মোকাররম হোসেন। পরে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলের হাতেও রায়ের কপি তুলে দেওয়া হয়।
এই রায় ঘোষণার পর থেকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কে পুরনো কারাগারে বন্দি আছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। দণ্ডিত অপর আসামিদের মধ্যে শুধু সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন কারাগারে বন্দি আছেন।
মুদ্রা পাচারের এক মামলায় সাত বছরের সাজার রায় মাথায় নিয়ে তারেক রহমান গত দশ বছর ধরে পালিয়ে আছেন দেশের বাইরে। কামাল সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানও পলাতক।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, “মামলার আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে এতিম তহবিলের ২ কোটি ৭১ লাখ ৬৩৪ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। পরিমাণের দিক থেকে এর বর্তমান মূল্য অধিক না হলেও ঘটনার সময়ে ওই টাকার পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট নামে কোনো এতিম খানার অস্তিত্ব পাওয়া যায় নাই। সেখানে কোনো এতিম বসবাস করে না। এতিমখানার কোনো দালান-কোঠা বা স্থাপনা নেই। ফলে আসামিদের কোনো যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। রাষ্ট্রের যুক্তি গ্রহণযোগ্য।”
রায়ে বলা হয়, নথি পর্যালোচনায় প্রমাণিত হয় খালেদা জিয়া এদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি স্বীকৃত মতেই সরকারি কর্মচারী। বাকি উপাদানগুলো এ মামলায় উপস্থিত আছে বলে ইতোমধ্যেই লক্ষ করা গেছে। ফলে খালেদা জিয়ার পক্ষে যে সমস্ত যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে তা বাস্তবতার নিরিখে গ্রহণ করার কোনো কারণ নেই।
“এছাড়া আসামিদের পক্ষে দাবি করা হয়েছে যে, তিনি (খালেদা জিয়া) আইনের বিধান লঙ্ঘন করেন নাই এবং সে দুটি ট্রাস্টের অর্থ প্রদান করেছেন তাও সঠিক আছে। কিন্তু নথির পর্যালোচনায় আসামিপক্ষ উপস্থাপিত যুক্তি গ্রহণযোগ্য হয়নি।”
বিচারক বলেন, সরকারি এতিম তহবিলের টাকা বিধি মোতাবেক এতিমদের কল্যাণে ব্যয় করা উচিত ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া তার ব্যত্যয় ঘটিয়ে নাম সর্বস্ব জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট্রের অনুকূলে এই টাকা স্থানাস্তর করেন।
“সব কিছু বিবেচনা করে এটা প্রতীয়মান হয় যে, আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৯ ও ১০৯ এবং দুদক আইনের ৫ (২) ধারা প্রমাণিত হয়েছে। ৪০৯ ধারার বিধান মতে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা যে কোনো বর্ণনায় কারাদণ্ডের মেয়াদ ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে। আসামিরা একে অপরের সহযোগিতায় অর্থনৈতিক অপরাধ করেছেন এবং সে কারণে তাদের সর্বোচ্চ সাজা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা প্রয়োজন। তবে আসামিদের বয়স ও সামাজিক অবস্থান এবং আত্মসাৎকৃত টাকার পরিমাণ বিবেচনায় তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা সমীচীন হবে না মর্মে আদালত মনে করেন।”
খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের বিষয়ে বিচারক বলেন, “আসামিদের মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া এদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন। তাছাড়াও তিনি একটি রাজনৈতিক দলের কণর্ধার। তিনি একজন বয়স্ক মহিলা। ফলে তার শারীরিক অবস্থা, বয়স এবং সামাজিক পরিচয় বিববেচনা করে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারার অধীনে ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা সমীচীন বলে মনে হয়।
“বাকি পাঁচ আসামির ক্ষেত্রেও তাদের বয়স ও সামাজিক অবস্থান বিবচনা করে প্রত্যেককে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারার অধীনে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা উচিৎ মর্মে আদালত মনে করেন।”
রায়ে বলা হয়েছে, দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় আসামিকে শাস্তি দেওযার ক্ষেত্রে ‘সশ্রম’ বা ‘বিনাশ্রম’ দণ্ডের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু লেখা নেই। সেখানে শুধু ‘ইমপ্রিজনমেন্ট’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এমতাবস্থায় আইন ব্যাখ্যার সূত্র অনুসারে সব আসামিকে সশ্রম কারাদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালে এই মামলা দায়ের করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল, খালেদা জিয়া ১৯৯১-১৯৯৬ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে বিদেশ থেকে এতিমদের সহায়তার জন্য আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছিল।
এজাহারে বলা হয়, খালেদা জিয়া তার প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম মেয়াদে ১৯৯১-১৯৯৬ সময়কালে এতিম তহবিল নামে সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখায় একটি হিসাব খোলেন। একটি বিদেশি সংস্থা ১৯৯১ সালের ৯ জুন ওই হিসাবে ইউনাইটেড সৌদি কর্মাশিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে অনুদান হিসেবে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা দেয়।
ওই টাকা দীর্ঘ দুই বছর কোনো এতিমখানায় না দিয়ে জমা রাখা হয়। এরপর জিয়া পরিবারের তিন সদস্য তারেক রহমান, তার ভাই আরাফাত রহমান এবং তাদের ফুপাতো ভাই মমিনুরকে দিয়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট গঠন করে ওই টাকা তাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
ওই ট্রাস্ট গঠনের ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা মানা হয়নি। এছাড়া ট্রাস্টের ঠিকানা হিসেবে খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের ৬ নম্বর মইনুল রোডের বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়।
পরে ওই টাকা দুইভাগে ভাগ করে ট্রাস্টের বগুড়া ও বাগেরহাট শাখার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫’শ টাকা ১৯৯৩ সালের নভেম্বরে বরাদ্দ দেওয়া হয় বগুড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে। ওই অর্থ থেকে ২ লাখ ৭৭ হাজার টাকায় ট্রাস্টের নামে বগুড়ার দাঁড়াইল মৌজায় ২.৭৯ একর জমি কেনা হয়।
কিন্তু অবশিষ্ট টাকা এতিমখানায় ব্যয় না করে ব্যাংকে জমা রাখা হয়। ২০০৬ সনের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত তা সুদে আসলে বেড়ে ৩ কেটি, ৩৭ লাখ ৭ শ ৫৭ টাকা ৩২ পয়সা হয়।
২০০৬ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা তার ছেলে তারেক রহমান ও মমিনুর রহমানকে দিয়ে তিন কিস্তিতে ছয়টি চেকের মাধ্যমে তিন কোটি ৩০ লাখ টাকা তুলে প্রাইম ব্যাংকের গুলশান শাখায় স্থায়ী আমানত (এফডিআর) করেন। এরপর ওই টাকা কাজী সালিমুল হক কামাল ও অন্যদের মাধ্যমে সরিয়ে অন্য খাতে ব্যবহার করা হয়।
এই মামলায় বিচার্য বিষয় ছিল ১১টি। সেগুলো হল-
# আসামি খালেদা জিয়া ১৯৯১-১৯৯৬ মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীকে দিয়ে ১৯৯১ সালের ২ জুন ‘প্রাইম মিনিস্টার অরফানেজ ফান্ড’ নামে সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখায় ৫৪১৬ নম্বর চলতি হিসাব খুলেছিলেন কি না?
# ওই হিসাবে ১৯৯১ সালের ৯ জুন ইউনাইটেড সৌদি কর্মাশিয়াল ব্যাংক থেকে ডিডি নম্বর ১৫৩৩৩৬৭৯৭০ মূলে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ইউএস ডলার জমা হয় কি না?
# ওই ১২ লাখ ৫৫ হাজার ডলারের সমপরিমাণ বাংলাদেশি টাকা ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের নামে মেয়াদি জমা রশিদ (এফডিআর) নম্বর- ৯৮৪১১২ এ জমা হয়েছিল কি না এবং ওই টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৪ কোটি ৬৬ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ টাকায় উন্নীত হয় কি না?
# ওই এফডিআরের ৪ কোটি ৬৬ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ টাকা পুনরায় ৫৪১৬ নম্বর চলতি হিসাবে জমা হয় কি না?
# প্রধানমন্ত্রীর বর্ণিত এতিম তহবিল থেকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে এসটিডি-৭ নম্বর হিসাবে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা স্থানান্তরিত হয় কি না বা ওই এসটিডি নম্বর ৭ হিসাব থেকে আসামি তারেক রহমান ও মমিনুর রহমান অবৈধভাবে টাকা প্রাইম ব্যাংকে স্থানান্তর করেছেন কি না?
# আসামি কাজী সালিমুল হক ওরফে কাজী কামাল প্রাইম ব্যাংক, গুলশান শাখা থেকে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিউ ইস্কাটন শাখায় টাকা হস্তান্তর করেন কি না?
# আসামি কাজী সালিমুল হক ওরফে কাজী কামাল অবৈধভাবে উক্ত টাকা আসামি শরফুদ্দিন আহমেদের ব্যক্তিগত হিসাবে স্থানান্তর করতে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করেন কি না?
# খালেদা জিয়াসহ মামলার অন্যান্য আসামিরা পরস্পর সহযোগিতায় অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে এবং অন্যকে অবৈধভাবে লাভবান করার অসৎ মানসে প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের অর্থ ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে স্থানান্তর করার কাজে সাহায্য করেন কি না এবং এভাবে ওই তহবিলের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা আত্মসাৎ করা হয় কি না?
# আসামীগন দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন কি না?
# প্রসিকিউশন পক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আণীত অভিযোগ সন্দেহাততীতভাবে প্রমাণে সক্ষম হয়েছে কি না?
# আসামিরা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য কি না?
এসব বিবেচনায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় খালেদা জিয়াসহ অন্যদের দণ্ডিত করে আদালত।
রায়ে বিচারক বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট কাগজে-কলমে প্রতিষ্ঠা করা হলেও বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই।এখানে কোনো এতিম বসবাস করে না। অথচ সরকারি এতিম তহবিলের টাকা বেআইনিভাবে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টকে দেওয়া হয়েছে। এজন্য খালেদা জিয়া ও কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী তাদের দায় এড়াতে পারেন না। কেননা সরকারি এতিম তহবিলের টাকা স্থানান্তরের পর সেই টাকা যথাযথভাবে খরচ হল কি না তা দেখভাল করা তাদের দায়িত্ব।
“সরকারি এতিম তহবিলের টাকা পাওয়ার পর তা সদ্ব্যবহার না করে তারেক রহমান ও মমিনুর রহমান সেই টাকা সোনালী ব্যাংক থেকে প্রাইম ব্যাংকে স্থানান্তর করেন। এমন কাজের দায় তারা কোনোভাবে এড়াতে পারেন না।”
রায়ে বলা হয়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে বগুড়ার গাবতলী থানার দাড়াইলে জমি কেনা হলেও সেখানে এখন পর্যন্ত কোনো স্থাপনা তৈরি করা হয়নি। আগে কিংবা বর্তমানে কোনো সময়ই সেখানে এতিমখানা স্থাপন করা হয়নি। অর্থাৎ খালেদা জিয়া ও কামাল সিদ্দিকী জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে দিয়েছেন অথচ কোনো এতিমখানা তৈরি করা হয়নি। নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার অপরাধের দায় তারা কোনোভাবে এড়াতে পারেন না। আর তারেক রহমান ও মমিনুর রহমান ওই ট্রাস্টের ট্রাস্টি হয়ে সরকারি টাকা থেকে চার লাখ টাকা তুলে নেন। এর মধ্যে ২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা দিয়ে ২ দশমিক ৭৯ একর জমি কিনলেও সেখানে কোনো স্থাপনা তৈরি করেননি কিংবা কোনো এতিমখানা বানাননি। এভাবে তারা টাকা আত্মসাৎ প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশ নিয়েছেন।
এতে বলা হয়, ১৯৯১ সালের ৯ জুন প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের অনুদান হিসেবে ইউনাইটেড সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে ১২ লাখ ৫৫ হাজার মার্কিন ডলার বাংলাদেশে আসে। এটা জমা হয় প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলে।
আসামিপক্ষ দাবি করেছিল, ওই টাকা এসেছিল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে, বাস্তবে তা প্রমাণ করতে পারেনি। ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে এফডিআর খোলা হয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ আদালতের।
রায়ে বলা হয়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দাপ্তরিক ঠিকানা ঢাকা সেনানিবাসের মইনুল রোড। অথচ এফডিআর খোলার ফরমে ট্রাস্টের দাপ্তরিক ঠিকানা কারওয়ান বাজারের বিসএসইসি ভবন লেখা আছে।
“অস্তিত্ববিহীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ঠিকানা ৬ মইনুল হোসেন রোড; যা ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আবাসিক ঠিকানা।ওই বাসা সরকারি বাসা না হলেও তিনি সেখানে বসবাস করতেন।একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পদের যাবতীয় সুযোগ গ্রহণ করে সরকারি দায়িত্ব পালন করেছেন বলে ধরে নিতে হবে। সে কারণে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের মতো বেসরকারি ট্রাস্টের ঠিকানা ব্যবহার করার কথা নয়।”
সাবেক সাংসদ সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন সম্পর্কে রায়ে বলা হয়েছে, তারা ট্রাস্টি না হয়েও পরস্পরের সহায়তায় সরকারি এতিম তহবিলের টাকা আত্মসাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছেন।
সৌদি আরব থেকে আসা টাকা কীভাবে সরকারি টাকা-সে বিষয়ে আদালত বলেছে, সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে যে টাকা আসে তা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন খালেদা জিয়া। তিনি তা ফেরত দিতে পারতেন, কিন্তু তা না করে গ্রহণ করার ফলে ওই টাকা সরকারি সম্পত্তিতে পরিণত হয়। টাকা জমা হয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি এতিম তহবিলের চলতি হিসাবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্যসচিব কামাল সিদ্দিকী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অনুমোদন গ্রহণ করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টকে টাকা দেন।এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার সচিব কামাল সিদ্দিকী সরকারি কর্মচারী হয়েও সরকারি অর্থ সরকারি উদ্দেশ্যে ব্যয় করেননি। বরং একটি বেসরকারি ট্রাস্টের অনুকূলে টাকা দিয়ে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ এর ২ ধারার অপরাধ করেছেন।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2ohDDZ0
February 20, 2018 at 02:02PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন