কুয়েত, ৩১ জানুয়ারি- অবৈধ অভিবাসীদের দেশত্যাগে ২৯ জানুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে কুয়েত। এর আওতায় অবৈধ অভিবাসীরা ছাড়পত্র ও জরিমানা ছাড়াই সেদেশ ছাড়তে পারবেন। কুয়েত সরকারের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সেদেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত প্রায় ২৩ হাজার বাংলাদেশীকে দেশে ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এজন্য টিকিট বিক্রির সময় বৃদ্ধি, অভিবাসী বাংলাদেশীদের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সংস্থাটি। বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন কুয়েতে সংস্থার কান্ট্রি ম্যানেজার মো. হাফিজুল ইসলাম। চিঠিতে তিনি জানান, কুয়েতে বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত এক জরুরি বৈঠকে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরাতে বিমানকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে বলেছেন। এজন্য স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিমানের টিকিট বিক্রির বিশেষ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রদূতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অবৈধ বাংলাদেশীদের সুবিধার্থে তাদের কাছে বিমানের অফিস ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর, অফিস সময়সূচির তথ্য প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রায় ২৩ হাজার বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসী হিসেবে কুয়েতে কাজ করছেন। অভিবাসীরা কাগজপত্র বৈধ করতে ব্যর্থ হলে দূতাবাস তাদের কুয়েত ছাড়তে অস্থায়ী অনুমোদন (টিপি) দেবে বলে চিঠিতে জানানো হয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক (বিপণন ও বিক্রয়) মো. আলী আহসান বাবু এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, কুয়েতের বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত। এটি নিয়ে কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। যেকোনো জাতীয় সংকটে বিমান বরাবরই সক্রিয় ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রেও বিমান কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ ক্ষমার বিষয়টি উল্লেখ করে কুয়েতে বসবাসরত বাংলাদেশীদের জন্য ২৪ জানুয়ারি একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর মো. আনিসুজ্জামান। এতে বলা হয়, সাধারণ ক্ষমার আওতায় অবৈধভাবে বসবাসকারীরা, যাদের নামে কোনো মামলা অথবা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নেই, তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো ছাড়পত্র বা জরিমানা না দিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন। এছাড়া প্রতিদিনের জন্য ২ কেডি (কুয়েতি দিনার) ও সর্বোচ্চ ৬০০ কেডি জরিমানা দিয়ে তারা কুয়েতে বৈধ হতে পারবেন। যেসব বাংলাদেশী সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিতে চাইবেন, তাদের কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আউট পাস নিতে হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। জানা গেছে, বাংলাদেশীদের মতো কুয়েতে অবৈধভাবে থাকা ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা ও অন্যান্য দেশের শ্রমিকরাও এ সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিতে পারবেন। যারা এ সুযোগ নেবেন না তারা গ্রেফতার হলে জেল-জরিমানাসহ তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংরক্ষণ করা হবে। পরবর্তীতে তারা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে প্রবেশ করতে পারবেন না বলে সাধারণ ক্ষমার চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগেও কুয়েত সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিল। তখন এ সুযোগ অনেকে নিয়েছিলেন। আবার অনেকেই নেয়নি। বর্তমানে দেশটিতে বৈধভাবে প্রায় তিন লাখ বাংলাদেশী কর্মী আছেন। ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিএমইটি) সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে যাওয়া মোট শ্রমিকের সংখ্যা ৫ লাখ ৮৯ হাজার ১৪। এর মধ্যে নারী শ্রমিক ৮ হাজার ১৮৬ জন। ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশটিতে প্রতি বছর গড়ে ৩০-৪০ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক যান। ২০০৬ সালে কুয়েতে শ্রমিক গিয়েছিলেন ৩৫ হাজার ৭৭৫ জন। এর পর থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কুয়েতে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ হতে শুরু করে। ২০০৭ সালে দেশটিতে শ্রমিক পাঠানো হয় ৪ হাজার ২১২ জন, ২০০৮ সালে ৩১৯, ২০০৯ সালে ১০, ২০১০ সালে ৪৮, ২০১১ সালে ২৯ এবং ২০১২ ও ২০১৩ সালে যথাক্রমে মাত্র দুই ও ছয়জন। তবে ২০১৪ সালে দেশটিতে পুনরায় শ্রমিক রফতানি শুরু হয়। ওই বছর বিএমইটির ছাড়পত্র নিয়ে দেশটিতে যান মোট ৩ হাজার ৯৪ জন বাংলাদেশী। পরে ২০১৫ সালে যান ১৭ হাজার ৪৭২ জন, ২০১৬ সালে ৩৯ হাজার ১৮৮ এবং গত বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে যান ৪৯ হাজার ৬০৪ জন। সূত্র:বনিকবার্তা এমএ/১০:৪৬/৩১ জানুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2BJGyOL
February 01, 2018 at 04:59AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন