সুরমা টাইমস ডেস্ক:: বেসরকারি খাতের প্রিমিয়ার ব্যাংকের বিরুদ্ধে কাগজপত্রে অনিয়ম করে বড় অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংকটি গত পাঁচ বছরে পাঁচ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকার ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত সেবা দেয়ার কথা বললেও তার সপক্ষে প্রয়োজনীয় নথিপত্র কিংবা প্রমাণ দেখাতে পারেনি। ওই টাকার ওপর ১৫ শতাংশ হিসেবে ৮২২ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ব্যাংকটির কাছে পাঁচ বছরের অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও শূন্য হারের সেবা বিক্রি সংক্রান্ত সব নথি চেয়ে চিঠি দিয়েছে। এনবিআরের তদন্তে দেখা গেছে, ব্যাংকটি ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও শূন্য হারের সেবা বিক্রি করছে বলে দাখিলপত্রে (ভ্যাট রিটার্ন) উল্লেখ করেছে। কিন্তু এর স্বপক্ষে কোনো দলিলপত্র জমা দেয়নি।
এনবিআর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও শূন্য হারের সেবা বিক্রি করলেও এর পক্ষে দলিলপত্র জমা দেয়ার বিষয়টি নজরে আনা হলে ব্যাংকটি দলিলপত্র না দিয়ে আদালতের স্মরণাপন্ন হয়। ফলে এ খাতে বড় অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলে ধারণা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনস্থ বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-ভ্যাট)। এ অবস্থায় আদালতের সেই রিট আপাতত স্থগিত রয়েছে। এজন্য ব্যাংকটির কাছে দলিলপত্র চেয়ে দ্বিতীয় দফায় চিঠি দেয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার এলটিইউ-ভ্যাট থেকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সেবা ও পণ্য বিক্রির সপক্ষে দলিলপত্র জমা দিতে নোটিশ দেয়া হয়েছে। এর আগে দুই দফা নোটিশ দেয়া হয়। প্রথম দফার নোটিশের পর উচ্চ আদালতে রিট (৩৪৯/২০১৮) করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এলটিইউ-ভ্যাট থেকে আপিল বিভাগে সিএমপি দাখিল (৫১/২০১৮) করলে আদালত রিটটি স্থিতাবস্থা অকার্যকর (ভেকেট) করেন। এরপরই দ্বিতীয় নোটিশ করা হয়।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের দাখিলপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত সেবা বিক্রির তথ্য দিলেও এর সপক্ষে দীর্ঘদিন ধরে কাগজপত্র জমা দেয়নি। কাগজপত্র জমা দিতে গত বছরের ৭ ও ২৬শে ডিসেম্বর নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ আদালতে রিট করেন। পরে আপিল বিভাগ থেকে সিএমপি দাখিল করে রিট ভেকেট করা হয়। রিট ভেকেটের (স্থিতাবস্থা অকার্যকর) পর সেবা বিক্রির সপক্ষে কাজগপত্র জমা দিতে প্রিমিয়ার ব্যাংককে তিন কর্মদিবস সময় দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দলিলপত্র জমা দিতে না পারলে আইন অনুযায়ী ভ্যাট ফাঁকির প্রাথমিক দাবিনামা জারি করা হবে।
এ বিষয়ে এলটিইউ’র ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, অব্যাহতিপ্রাপ্ত সেবার সঙ্গে প্রায় ৮২২ কোটি টাকার ভ্যাট জড়িত। এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বর্তমানে ২৬টি সেবা ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত। এর মধ্যে উলে্লখযোগ্য হচ্ছে হিমাগার, সংবাদপত্রে প্রকাশিত মৃত্যু সংবাদ (এর বাইরে সব বিজ্ঞাপনের ওপর ভ্যাট আছে), ছাপাখানা (বই, সাময়িকী), ইন্টারনেট বিল (শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য), ভূমি বিক্রয়কারী, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, স্টক ও সিকিউরিটি, ট্যুর অপারেটর, মেডিটেশন সেবা ও অনলাইনে পণ্য বিক্রি। এর বাইরে সব সেবার ওপর ভ্যাট আরোপিত আছে। এছাড়া রফতানি খাতসংশ্লিষ্ট সেবা ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত (শূন্য হার)।
নোটিশ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দাখিলপত্রে ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও শূন্য হারের সেবা বিক্রি করছে প্রিমিয়ার ব্যাংক। এর মধ্যে ২০১৩ সালে ৯৯৮ কোটি টাকা, ২০১৪ সালে এক হাজার ৫১ কোটি টাকা, ২০১৫ সালে পাঁচ হাজার ২৯ কোটি টাকা, ২০১৬ সালে এক হাজার ২২০ কোটি টাকা এবং ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এক হাজার ২৪১ কোটি টাকার অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য ও সেবা এবং শূন্য হারের পণ্য ও সেবা বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিমিয়ার ব্যাংকের হেড অব অ্যাকাউন্টস মুশফিক আলম খান বলেন, প্রতি মাসে রিটার্ন জমার সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়া হয়েছে। এখন যেহেতু আবার কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে সেগুলো নিয়মানুযায়ী আবারও জমা দেয়া হবে।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2nsr5i6
February 01, 2018 at 04:53PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন