নিজস্ব প্রতিনিধি:: হবিগঞ্জের বাহুবলে তিন শিশু-কিশোর নির্মম ভাবে হত্যা করলো অপর এক শিশুকে। হত্যাকান্ডের মূলহোতা শামীম আদালতে দেয়া জবানবন্ধীতে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা তোলে ধরে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বাহুবল মডেল থানায় অনুষ্ঠিত প্রেস বিফিং-এ এমনটাই জানালেন বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সিনিয়র এএসপি নাজিম উদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাহুবল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাসুক আলী, সার্কেল অফিসের ইন্সপেক্টর বিশ্বজিৎ দেব, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) গোলাম দস্তগীর ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মহরম আলী।
গত রোববার দুপুরে পুলিশ উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের বানিয়াগাঁও গ্রামের পূর্ববর্তী বেন্দারবন্দ নামক হাওর থেকে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র হাবিবুর রহমানের পুরুষাঙ্গ কাটা মৃত দেহ উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের খোজারগাঁও গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নানের পুত্র হাবিবুর রহমান পার্শ্ববর্তী বিহারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। শিশু বয়সেই হাবিবুর প্রেম-ভালবাসায় জড়িয়ে পড়ে এক সহপাঠী ছাত্রীর সাথে। অনুমান একমাস আগে ওই ছাত্রীর সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখতে পায় ছাত্রীর ভাই একই গ্রামের আমির আলীর পুত্র শামীম আহমদ (পুলিশ তার বয়স ১৮ উল্লেখ করলেও স্বজনদের দাবি তার বয়স ১৭-এর কম)। বিষয়টি সহজভাবে নিতে পড়েনি শামীম। সাথে সাথেই সে আক্রমনাত্মক হয়ে উঠলেও দ্রুত পালিয়ে যায় হাবিবুর। এ ঘটনার পর থেকেই শামীম তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। বিষয়টি শামীম গোপন রেখেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ খোঁজতে থাকে। কোন ভাবেই সে সুযোগ পাচ্ছি না শামীম।
এ অবস্থায় গত শুক্রবার (৯ই ফেব্রুয়ারি) থেকে তিনদিন ব্যাপী তফসির সম্মেলন শুরু হয় পার্শ্ববর্তী বানিয়াগাঁও মাদরাসা সংলগ্ন মাঠে। পরিকল্পনা অনুযায়ী শামীম নিজ গ্রামের ইউনুছ মিয়ার পুত্র শাহজাহান মিয়া (১২) ও জয়নুল্লাহ-এর পুত্র জুয়েল মিয়া (১২) কে ফুসলিয়ে তার সহযোগি করে। শাহজাহান ও জুয়েলকে দায়িত্ব দেয় হাবিবুর রহমানকে ওই তফসির সম্মেলনে নিয়ে আসার। পরিকল্পনা মতো শুক্রবার হাবিবুরকে তফসিরে নিয়ে আসতে ব্যর্থ হলেও শাহজাহান ও জুয়েল শনিবার সফল হয়। শনিবার বিকেলে তারা তাকে নিয়ে বানিয়াগাঁও মাদরাসা সংলগ্ন তফসির সম্মেলনে নিয়ে যায়। সেখানেই তাদের সাথে দেখা করে শামীম। এক পর্যায়ে সকলকে একটি দোকানে নিয়ে চা-বিস্কুট খাইয়ে বন্ধুত্ব জমিয়ে তোলে শামীম। রাত ৯টার দিকে শামীম আহমেদ বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে হাবিবুর, শাহজাহান ও জুয়েলকে নিয়ে রওনা হয়। হাওরের মধ্যবর্তী স্থানের একটি মেটোপথ ধরে তারা ৪ জন বাড়ি ফেরা শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা বেন্দারবন্দ হাওরে একটি সেচপাম্পের কাছে পৌঁছামাত্র পূর্ব পরিকল্পনা মতে শামীম ঝাপটে ধরে হাবিবুরকে। এক পর্যায়ে শাহজাহান ও জুয়েলের সহযোগিতায় তাকে মাটিতে ফেলে গলাচেপে ধরে। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে হাবিবুর নিস্তেজ হয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ শামীম সাথে থাকা ধারালো ব্লেড দিয়ে হাবিবুরের পুরুষাঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর মরদেহ সেখানেই রেখে হাবিবুর নিজ দায়িত্বে শাহজাহান ও জুয়েলকে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে দেয়।
এদিকে, হাবিবুরের পিতা ওই রাতে তার অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ছিলেন। হাবিবুর নিখোঁজের খবর পেয়ে তিনি শনিবার রাত ১২টার দিকে বাড়ি ফিরে আসেন এবং খোঁজাখুজি শুরু করেন। ফজরের নামাজের পর গ্রামের মাইকযোগে নিখোঁজের খবরটি প্রচার করা হয়। সকাল ১০টার দিকে গ্রামের এক ইটভাটা শ্রমিক বেন্দারবন্দ হাওরে হাবিবুরের মৃতদেহ দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করেন। খবর পেয়ে বাহুবল মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিশু হাবিবুরের মৃতদেহ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে।
বিকেলে বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র এএসপি নাজিম উদ্দিন, বাহুবল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুক আলী ও কামাইছড়া পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই মহরম আলী নিহতের বাড়িতে যান। এ সময় তারা নিহতের পরিবার ও আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন নিহত হাবিবুর এবং একই গ্রামের শামীম, শাহজাহান ও জুয়েল আগের দিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী বানিয়াগাঁও মাদরাসা মাঠে অনুষ্ঠিত তফসির মাহফিলে ছিল। পরে পুলিশ কর্মকর্তারা শামীম, শাহজাহান ও জুয়েলকে ডেকে এনে গ্রামবাসীর সামনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় তাদের কথাবার্তায় অসংলগ্নতা পাওয়া গেলে আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তাদের নিকটবর্তী কামাইছড়া পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে শামীম ঘটনার ব্যাপারে স্বীকারোক্তি দিলে রোববার বিকেলে পুলিশ তাকে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে হাজির করে। এ সময় শামীম ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্ধীতে ঘটনার বর্ণনা তোলে ধরে।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2Chu5Cf
February 13, 2018 at 06:56PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন