ঢাকা, ২৪ ফেব্রুয়ারি- কিছু গুঞ্জনের হিসাব মেলাতে গতকাল দুপুরের একটু পরে মোহাম্মদপুরে তাসকিন আহমেদের নতুন বাসায় যাওয়া। আগেই ফোনে সময় নেয়া হয়েছিল। অপেক্ষায় ছিলেন দেশের অন্যতম সেরা পেস বোলার। পৌঁছার সংবাদে হাসি মুখে দরজা খুলে স্বাগত জানালেন তাসকিন আহমেদ নিজেই। ফ্যামিলি রুমের সোফাতে বসা ছিলেন তার স্ত্রী সৈয়দা রাবেয়া নাঈমা। তিনিও হাসিমুখে বসতে বললেন। কিন্তু সেই হাসির আড়ালে যেন লুকিয়ে ছিল দীর্ঘশ্বাস ও বিষণ্নতা। কিছুক্ষণের মধ্যে তাসকিনের পিতা মো. আবদুর রশিদ এসে যোগ দিলেন। বাইরে গিয়েছিলেন, মোবাইল ফোনে ডেটা রিচার্জ করে ছেলের সম্পর্কে প্রকাশিত সংবাদটি পড়ার জন্য। বিষয়টি আগে শুনেছিলেন লোকমুখে, আর পড়ার পরে তিনি যারপরনাই বিস্মিত। কিছুক্ষণ আগেই ছেলের বউকে তিনি দেখে গেছেন হাসিখুশি। তাসকিন কখন তার স্ত্রী পেটালো? এমন খবরে পরিবারটির ঘনিষ্ঠজনের কাছে লজ্জায় মাথা নত হয়ে গেছে। তাদের প্রশ্ন, কিভাবে এ ধরনের সংবাদ সম্ভব। দেশের তরুণ পেসার তাসকিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ক্যারিয়ার শুরুর আগেই পেয়ে গিয়েছিলেন তারকাখ্যাতি। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলে অভিষেকের আগে থেকেই তাকে ঘিরে প্রকাশিত হয়েছে নানা সংবাদ। কিন্তু সে সবই ছিল ক্রিকেটকেন্দ্রিক। কিন্তু গেল বছর হঠাৎ করেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিনি। তারপর থেকেই তাসকিন ও তার স্ত্রীকে নিয়ে নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদ আসতে থাকে। তবে গতকাল একটি পত্রিকায় বউ পেটানো অভিযোগ দিয়ে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তাতে তরুণ ক্রিকেটারের জীবনের ভিতই যেন নড়ে উঠেছে। দেশের প্রথম সারির একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া একান্ত সক্ষাৎকারে তাসকিন ও তার স্ত্রী তুলে ধরেছেন তাদের মনের কষ্টের কথা। আরও পড়ুন: বিসিবির অনুরোধে সাড়া দেননি মাশরাফী স্ত্রীকে মারধর প্রসঙ্গে তাসকিন বলেন, কী বলবো, যখন নিউজটা দেখলাম তখন হাসি পেয়েছিল। কিভাবে মানুষ এমন মিথ্যা কথা লিখে? আবার কষ্টও লাগছে, দেশের জন্য জীবন উজাড় করে খেলি। একটিবারও নিজের কথা ভাবি না। সেই দেশের মানুষের কাছে এভাবে আমাকে ছোট করা কেন? এখনতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম অনেক শক্তিশালী। তাই সত্যি, মিথ্যা যাচাই না করেই অনেক মানুষ ভুল বোঝে। আমার স্ত্রীতো আমার পাশে বসা, তাকেই জিজ্ঞেস করুন আমাদের সম্পর্কটা কেমন। এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর থেকেই আমাদের সম্পর্ক। সাত বছর পর বিয়ে করেছি। মান-অভিমান থাকতে পারে। কিন্তু বউকে পেটানো! আমি ক্রিকেটার আমার অনেক মেয়ে ভক্ত আছে। তারপরও ওর (নাঈমা) ভালোবাসা সবার চেয়ে আলাদা। ওকে আমি ভালোইবাসি না সম্মানও করি। তাই ওকে আমি মারবো সেটি নিজেও বিশ্বাস করি না। মিথ্যা সংবাদে বিব্রত তাসকিন মনে করেন এটি তার ক্রিকেট জীবনেও প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, দেখেন, দেশের জন্য খেলি, দিন শেষে আমি এ দেশেরই সম্পদ। আমি ভালো খেলে দল জিতলে এ মানুষগুলোতো আনন্দ করে। তাহলে কেন এমন মিথ্যা কথা? সত্যি হলে মাথা পেতে নিতাম। যখন মিথ্যা হয় তখন নিজের খারাপ লাগে। মানসিকভাবে শক্ত থাকতে পারি না। নিউজিল্যান্ড থেকে ফিরে বিয়ে করলাম। পরে শুনলাম আমার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা বলে তড়িঘড়ি করে বিয়ে করেছি। এবার শুনলাম বউকে মেরেছি। এমন হলে তো আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়বো। খেলতে গেলে এ সব ভেবে ভাল করতে পারবো না। ভুল তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশে বিব্রত ও ক্ষুব্ধ তাসকিন পরিবার। এরই মধ্যে তাসকিন আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা চিন্তা করছেন। তিনি বলেন, দেশবাসীর কাছে একটা কথাই বলতে চাই, যদি কোনোদিন সত্যি ভুল করি তাহলে তাদের যে কোনো শাস্তি মাথা পেতে নেবো। আর অনুরোধ করবো ভুল ও মিথ্যাতে যেন কেউ আমাকে ভুল না বুঝে। আর সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা লিখেন তাদের কাছে অনুরোধ করবো যেন সত্যিটা লিখেন। আমি চিন্তা করেছি যারা এ ধরনের সংবাদ লিখছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবো। যারা এইসব লিখেন তাদের বলতে চাই, দিন শেষে আমরা মানুষ; আপনারাও। আমার ও আমার স্ত্রীর যেমন পরিবার আছে আপনাদেরও আছে। তাই কোনো কিছু লিখার আগে একটু ভেবে নিবেন। তাসকিনের স্ত্রী সৈয়দা রাবেয়া নাঈমা ক্রিকেট বুঝেন না। যে তাসকিনের পেছনে তরুণী ও কিশোরীরা মরিয়া হয়ে ঘোরে, সেই তাসকিনকে একটা সময় তিনি পাত্তাই দিতেন না। কিন্তু যখন সম্পর্ক হয়েছে তারপর থেকে নিজের ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছেন এ তরুণকে। তাকে মারধর করার সংবাদ নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিস্মিত নাঈমা নিজেই। তিনি বলেন, আমি আসলে কী লিখেছে তা পড়িনি, দেখিওনি। ওর (তাসকিন) মুখে শুনে নিজের হাত পা দেখলাম, বললাম ও আমাকে কখন মারলো! কেন মানুষ এইগুলো ছড়াচ্ছে আমি জানিনা। সত্যি হলে মেনে নিতাম বা আমি নিজেই বলতাম। অন্যদিকে স্বামীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে কতটা সুখে আছেন তা নিয়ে নাঈমা বলেন, বিয়ে হয়েছে সাড়ে চার মাস। এর মধ্যে আমি একবার শুধু বাবার বাসাতে গিয়েছি। সত্যি কথা বললে হয়তো আমার বাবা-মা কষ্ট পাবেন। কিন্তু এটাই সত্যি যে আমি আমার বাবার বাড়ির চেয়েও এখানে সুখে আছি। এত ভালোবাসা আমি আমার বাবার বাড়িতে পেয়েছি কিনা জানি না। চাওয়ার আগেই আব্বা-আম্মা (তাসকিনের বাবা, মা) সব হাজির করে দেন। তাই দেশবাসীর কাছে অনুরোধ করবো এসব মিথ্যা সংবাদে কান দিবেন না। আমাদের জন্য দোয়া করবেন, আমার স্বামীর জন্য দোয়া করবেন সে যেন ভালো ক্রিকেট খেলে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনে। দুজনের সম্পর্কটা কত মধুর তা নিয়ে নাঈমা বলেন, ও আমাকে কী পেটাবে, আমিই তো মাঝে মাঝে ওকে দুষ্টমি করে মারি। সত্যি কথা বলতে তাসকিন মানুষ হিসেবে অনেক অনেক ভালো। সূত্র: মানবজমিন আর/১০:১৪/২৪ ফেব্রুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2F5irQv
February 25, 2018 at 04:32AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন