সুরমা টাইমস ডেস্ক ঃঃ :: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড – হয়েছে। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানসহ অন্যদের হয়েছে ১০ বছর করে কারাদণ্ড। সেই সঙ্গে তাদের অর্থদ- হয়েছে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা। ওই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হিসেবে কারান্তরিণ রয়েছেন খালেদা জিয়া। আর পলাতক রয়েছে মামলার অপর আসামী তারেক রহমান, জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান এবং কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী। দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর বিএনপির মধ্যেও দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, খালেদা জিয়ার কারান্তরিণ হওয়ার মধ্য দিয়ে ভাঙনের সুর বাজতে শুরু করেছে দলটির মধ্যে।
খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তারেক রহমানকে দলের দায়িত্ব দেয়ায় অখুশি দলের অনেক সিনিয়র নেতাও। তাদের মতে দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানের পরিবর্তে দেশে সক্রিয় কোন সিনিয়র নেতাকে দলের দায়িত্ব দেয়া হলে সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো গতিশীল করা সম্ভব হতো।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানকে দলের শীর্ষ দায়িত্ব দেয়া হলেও বর্তমানে বিএনপিতে বিরাজ করছে পাঁচটি ধারা। দলের এই দু:সময়ে নেতৃত্ব নিয়ে টানাপোড়েন দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলে দিয়েছে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। কারান্তরিণ থাকলেও দলের নেতাকর্মীদের অনেকেই এখনো দলের সর্বেসর্বা হিসেবে মানছেন খালেদা জিয়াকে। এছাড়া খালেদার অনুপস্থিতিতে কেউ কেউ যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তারেক রহমানকেই মানছেন দলের শীর্ষ নেতা হিসেবে। তবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়াও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদ ও রুহুল কবীর রিজভীকে কেন্দ্র করেও তৈরি হয়েছে আরও তিনটি বলয়। দলের এই দু:সময়ে অনেকে নিজেদেরকে আবার রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন বলে অভিযোগ নেতাকর্মীদের।
দলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, গেলো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ভুল করেছিল। এতে অনেকটা জনবিচ্ছিন্নও হয়ে পড়েছে দলটি। জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব না থাকায় গেলো চার বছর জনগণের কাছাকাছি যাওয়ারও খুব একটা সুযোগ পায়নি দলটি। ফলে দুর্বল হয়ে পড়েছে সাংগঠনিক শক্তিও। এতে বেড়েছে অর্ন্তকোন্দলও। দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ থাকায় আগামী নির্বাচন নিয়ে দলের পক্ষে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা নিয়েও শঙ্কিত তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। যে কারণে খালেদা জিয়া কারান্তরিণ হওয়ার পর জোরালো কোন আন্দোলনেও নামতে পারেনি বিএনপি।
দলীয় সূত্র জানায়, লাগাতার অবরোধ কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সময় খালেদা জিয়ার নেয়ার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বেকায়দায় পড়ে বিএনপি। সর্বশেষ খালেদা জিয়া কারাগারে যাবার মাত্র একঘণ্টার মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মতবিরোধ প্রকাশ্য হয়। একাধিক নেতা সংবাদ সম্মেলন ডেকে একেক রকম বক্তব্য দিয়েছেন। এতে বিভ্রান্ত হয়েছেন নেতাকর্মীরা। খালেদার অনুপস্থিতিতে তারেক জিয়াকেও অনেকে মেনে নিতে পারছেন না দলের প্রধান হিসেবে। তারেকের নেতৃত্ব নিয়ে আপত্তি তুলছেন অনেকেই। বিশেষ করে দলের সিনিয়র নেতারা কোনভাবেই নেতা মানতে পারছেন না তারেককে।
বিএনপির দলীয় ঘোষণায়ও রয়েছে বিভ্রান্তির ছাপ। ৭ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া রায় পরবর্তী আন্দোলনের কথা বললেও, মধ্যরাত নাগাদ রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিএনপির সিলপ্যাডের একটি ঘোষণায় নেতাকর্মীদের শান্ত থাকতে বলা হয়। ফলে দলীয় কমান্ডে বিভক্তি ছড়িয়ে পড়েছে বিএনপিতে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলও দিয়েছেন বিভ্রান্তিকর নির্দেশনা। দলীয় প্রধানের বিপক্ষে গিয়ে তিনি নেতা কর্মীদের ঘরে থাকার নির্দেশ দেন।
দলীয় চেয়ারপারসন ও বিএনপির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার ফারাকে বিভ্রান্ত ছিল নেতাকর্মীরা। তারা রায় পর্যন্ত ও পরবর্তীতে কোন দলীয় দিক নির্দেশনা পায়নি। তাহলে কি দলে চেয়ারপারসন বিদ্বেষী মনোভাব গড়ে উঠল? বিএনপির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নিয়ে জনমনে এমন প্রশ্নও উঠেছে।
খালেদা জিয়ার সাজার পর উদভ্রান্ত দিকনির্দেশনার জন্যই দিকভ্রষ্ট ছিল বিএনপির কর্মীরা। সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি নেতাকর্মীরা রাজপথে খুব একটা দাঁড়াতে পারেনি। ৯ তারিখের বিক্ষোভ সমাবেশও ছিল বিক্ষিপ্ত। বায়তুল মোকাররমের সামনে ৩-৫ মিনিটের বিক্ষোভ করে চলে যান মির্জা ফখরুল। ফখরুল চলে যাওয়ার পর নেতাকর্মীরাও ছত্রভঙ্গ হয়ে চলে যান।
বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিতর্কের পালে নতুন হাওয়া দিয়েছেন। সরকারি দলের সাথে সখ্যতা গড়ে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে চাচ্ছেন এ নেতা। চতুর্মুখী বিতর্কের পালে আবদ্ধ এখন বিএনপি। বারংবারের ভুল সিদ্ধান্ত দলটিকে সাংগঠনিকভাবে যেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে, একইভাবে জনসম্পৃক্ত হওয়া থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, খালেদা জিয়ার সাজাকে তার দলের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিকভাবে দেখলেও সচেতন নাগরিকরা তা দেখছেন ক্ষমতার অপব্যবহারের পরিণতি হিসেবে। ‘দুর্নীতিবাজ যতোই ক্ষমতাবান হোন না কেন, আইনের উর্ধ্বে নন তিনি’- এই রায়ের মাধ্যমে সেটিই প্রমাণিত হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2skIFJJ
February 11, 2018 at 01:29PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন