ঢাকা, ১৯ ফেব্রুয়ারি- সময়ের ফারাক মোটেই বেশি নয়, মাত্র ১৩ মাস; কিন্তু পারফরমেন্স আর ফলের তফাৎ বিস্তর। গত বছর মার্চ-এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজের একটিতেও হারেনি টাইগরেরা। সমতা রেখে দেশে ফিরেছিল। এবার ঘরের মাঠে সেই লঙ্কানদের কাছেই নাকাল তামিম, মাহমুদউল্লাহ আর মুশফিকরা। তিন জাতি ক্রিকেটকে যদি অঘোষিত ওয়ানডে সিরিজ ধরা হয়, তাহলে টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি- তিন সিরিজেই জিতেছে শ্রীলঙ্কা। ত্রিদেশীয় ওয়ানডে টুর্নামেন্টের ফাইনালসহ তিনবার দেখা হয়েছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার। প্রথম পর্বে মাশরাফির দল ১৬৩ রানের রেকর্ড ব্যবধানে জিতলেও রাউন্ড রবিন লিগের ফিরতি লড়াইয়ে ৮২ রানে অলআউট আর ফাইনালে ৭৯ রানে হেরে প্রকারন্তে সিরিজই খুঁইয়েছে টাইগাররা। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজটিও লঙ্কানদের। মুমিনুল হকের উভয় ইনিংসে শতরান, আর মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ও লিটন দাসের দৃঢ়তায় চট্টগ্রামে প্রথম টেস্ট ড্র করা সম্ভব হলেও ঢাকায় শেষ টেস্টে চরমভাবে পর্যদুস্ত হয়েছে মাহমুদউল্লাহর দল। সবচেয়ে করুণ অবস্থা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। প্রথমদিন নিজেদের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সবচেয়ে বেশি ১৯৩ রান করেও শেষরক্ষা হয়নি। আলগা ও কমজোরি বোলিংয়ে ৬ উইকেটে হার মানা। আর সিলেটে শেষ ম্যাচে ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ। কেন এই বিপর্যয়? যে দল সেই ২০১৪ সালের পর থেকে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের সঙ্গে টেস্ট সিরিজ অমীমাংসিতভাবে শেষ করেছে, সেই দল এবার কেন ব্যর্থ? ওয়ানডেতে উড়ন্ত সূচনার পরও কী কারণে এমন ছন্দপতন? আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে রীতিমতো ছন্নছাড়া বাংলাদেশ। ক্রিকেট অনুরাগী, ভক্ত-সমর্থক সবাই চরম হতাশ। আশাভঙ্গের বেদনায় নীল গোটা দেশ, জাতি। এতটা খারাপ পারফরমেন্স ও করুণপরিণতির কারণ কী? চারদিকে প্রশ্ন। সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের অনুপস্থিতিই কি বিপর্যয়ের মূল? তার অভাবেই কি দল এতটা অবিন্যস্ত? ছন্নছাড়া? হাথুরুর অনুপস্থিতিতে দল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা খালেদ মাহমুদ সুজন আর রিচার্ড হ্যালসল কি চরম ব্যর্থ? নাকি দল সাজানো, ক্রিকেটার নির্বাচন ও গেম প্ল্যানে বড় ধরনের ত্রুটির কারণেই পারফরমেন্সের এমন অবনমন? রোববার সিলেটে শেষ ম্যাচের পর থেকে সবাই যে যার অবস্থান থেকে নিজেদের মতো করে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করছেন। অফিস-আদালত, রেস্টুরেন্ট, চায়ের দোকান, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি ড্রয়িং রুম-শোবার ঘরেও সেই সব প্রশ্ন উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছে। আরও পড়ুন: আরও বড় বিপদ দেখছেন মাহমুদুল্লাহ জাতীয় দলের সাবেক প্রশিক্ষক সারোয়ার ইমরান প্রতিবেদকের মুখোমুখি হয়ে জাতীয় দলের এই চরম ব্যর্থতার পোস্টমর্টেম করেছেন। এবারের প্রিমিয়ার লিগে শেখ জামাল ক্রীড়াচক্রের কোচের দায়িত্ব পালন করছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম সিনিয়র ও অভিজ্ঞ দ্রোনাচার্য সারোয়ার ইমরান। আজ (সোমবার) ফতুল্লা স্টেডিয়ামে নিজ দলের খেলা ছিল। সোমবার সন্ধ্যায় প্রতিবেদকের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপে জাতীয় দলের সাম্প্রতিক ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সারোয়ার ইমরান খোলাখুলি বলে বসেন, প্রথার বাইরে খানিক অপরিকল্পিত দল সাজানো এবং অতিমাত্রায় হাথুরুসিংহেকে নিয়ে মাথা ঘামানোর কারণেই আসলে পারফরমেন্স এত বেশি খারাপ হয়েছে। আর মাঠের পারফরমেন্স সম্পর্কে ইমরানের মূল্যায়ন, বোলিং ছিল যারপরনাই কমজোরি, ধারহীন। ব্যাটিংয়ে যাদের ওপর বেশি নির্ভর করা হয়েছে তারা সে অর্থে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি। তাই এত খারাপ করেছে বাংলাদেশ। মোটাদাগে বলতে গেলে, বাংলাদেশের ব্যর্থতার তিনটি কারণ চিহ্নিত করতে বলা হলে সারোয়ার ইমরান বলেন, এক নম্বর কারণ হাথুরুসিংহেকে বেশি ফোকাস করা। কেউ হয়ত হাথুরুকে দেখাতে চাইছে। আমরা অনেক ভালো দল। কেউ হয়ত চিন্তা করছে আমার সম্পর্কে হাথুরু অনেক কিছু জানে। প্রথম দুই ম্যাচ জেতার পর মনে করেছি আমরা অনেক ভালো। আর হাথুরুর প্রভাবটা ছিল দুরকম। কারো নেতিবাচক। কেউ কেউ ভেতরে বেশি চিন্তা করেছে যে, হাথুরু আমার সব জানে। কেউ আবার দেখিয়ে দিতে চাইছে। হাথুরুকে নিয়ে অনেকে বঞ্চিত ছিল। তারা দলে এসেছে। একটা নিউক্লিয়াস ছিল। সেটা নষ্ট হয়েছে। (দ্বিতীয় কারণ) আর বোলিংয়ের কোনো আগামাথা খুঁজে পাইনি আমি। বোলিংয়ে কোনো ধার ছিল না। প্ল্যানিংও খুঁজে পাইনি। সাকিবের অভাবও বোধ করেছে বাংলাদেশ। সারোয়ার ইমরান বলেন, সাকিব বাংলাদেশের অনেক বড় তারকা। অনেক নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটার। সেরা পারফরমারও। দলে তার প্রভাব ও কার্যকারিতাও অনেক। তাই বলে মাশরাফি, সাকিব ও তামিম ছাড়া দল খেলতে নামলেই যে পারবে না- এমনভাবে ব্যর্থ হবে, তা কেন? আমি কিছুতেই সাকিব না থাকাকে খুব বড় করে দেখতে নারাজ। যেকোনো দলের মূল ক্রিকেটার হঠাৎ ইনজুরিতে পড়ে বাইরে থাকতেই পারেন। সেটা কোনো বড় অজুহাত নয়। লঙ্কানরাও অ্যাঞ্জোলো ম্যাথিউজ ছাড়া খেলেছে। আরও ভালো খেলেছে। সূত্র: জাগোনিউজ২৪ আর/১০:১৪/১৯ ফেব্রুয়ারি



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2sKsc1C
February 20, 2018 at 05:17AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top