কলকাতা, ২৭ ফেব্রুয়ারি- একই রাজ্য৷ অথচ এতকাল অস্বাভাবিক প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনায় বাধ্যতামূলক যে ময়নাতদন্ত , তা চলে আসছিল ভিন্ন ভিন্ন নিয়মে৷ শহরের মেডিক্যাল কলেজে এক রকম , জেলায় অন্য রকম৷ এহেন বিচিত্র ব্যবস্থাটা এত কাল পরে বদলাতে চলেছে৷ গোটা রাজ্যে চালু হতে চলেছে ময়নাতদন্তের অভিন্ন নিয়ম, পদ্ধতি৷ মর্গ মানে তো হাসপাতাল চত্বরের চার দেওয়ালবন্দি একটা ঘর মাত্র নয়৷ অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে , এমন প্রতিটি দেহে বিশেষজ্ঞের বিশেষ নজরে উঠে আসার কথা মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ৷ যা পুলিশি তদন্তেও অত্যন্ত জরুরি৷ বিচারালয়েও ময়নাতদন্ত রিপোর্টের গুরুত্ব অসীম৷ এ হেন গুরুত্বপূর্ণ মর্গই এ যাবত চূড়ান্ত অবহেলিত ছিল রাজ্যে৷ ডাক্তারি শিক্ষার নিয়ামক সংস্থা মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার গুঁতোয় মেডিক্যাল কলেজগুলিতে মর্গের হাল ফিরলেও জেলায় অবস্থা কহতব্য নয়৷ ময়নাতদন্তের নিয়মকানুনেও এ পর্যন্ত ছিল না কোনও ইউনিফর্মিটি৷ দেহ কাটাছেঁড়া জেলার মর্গে হয় এক রকম ভাবে, আর মেডিক্যাল কলেজগুলিতে অন্য ভাবে৷ ময়নাতদন্তের মান স্বভাবতই তাতে নির্দিষ্ট রাখা সম্ভব হচ্ছিল না রাজ্যের সর্বত্র৷ এই প্রেক্ষিতেই ময়নাতদন্তের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিলেন শহরের কয়েক জন ফরেন্সিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ৷ স্বাস্থ্য দপ্তরের উদ্যোগে ২০১৫ সালে তৈরি হয় প্রথম খসড়া নিয়মাবলি৷ রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধানদের মতামত নেওয়ার পর তা ফিরে আসে স্বাস্থ্যভবনে৷ তার পর আচমকাই উধাও হয়ে যায় ফাইলটি৷ গত বছরের শেষে বেঙ্গল অ্যাকাডেমি অফ ফরেন্সিক সায়েন্সসের উদ্যোগে খুঁজে পাওয়া যায় সেই ফাইল৷ স্বাস্থ্য সচিবের উদ্যোগে শুরু হয় নিয়মাবলি চূড়ান্ত করার পালা৷ আরও পড়ুন: কয়েক লাখ মুসলিমকে তাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে আসাম কী থাকবে নয়া নিয়মাবলিতে ? খসড়া তৈরির অন্যতম কারিগর আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সোমনাথ দাস বলেন , প্রথমত, কোন পদ্ধতিতে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করবেন এক জন বিশেষজ্ঞ , সেটা চিহ্নিত করা রয়েছে৷ নতুন রীতি -নিয়ম মানতে হবে সর্বত্রই৷ তা জেলাতেই হোক বা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে৷ পাশাপাশি , মর্গের পরিবেশ কেমন হবে, আকার-আয়তন কেমন হবে , তা-ও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে ৫ পাতার এসওপিতে৷ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও দিশা দেখাতে চলেছে নয়া নিয়মাবলি৷ স্বাস্থ্য দন্তরের এক কর্তার কথায়, বেওয়ারিশ লাশ মাসের পর মাস জমে মর্গের পরিবেশ নষ্ট করে৷ এখন থেকে সাত দিন পরেই বেওয়ারিশ লাশের সত্কার করার নিয়ম চালু হতে চলেছে৷ আর এখন যেটা সব সময় হয় না, মানে বেওয়ারিশ লাশের ডিএনএ সংগ্রহ , সেটা অবশ্যই করতে হবে৷ আরও পড়ুন: দোল উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে কাটাতে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক মাস তিনেক হল , কলকাতার মর্গে হওয়া ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট সরাসরি ডাউনলোডের পদ্ধতি চালু হয়েছে৷ মৃতের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মোবাইল নম্বরে পাঠানো হয় একটি ওটিপি৷ সেই ওটিপি -র সাহায্যে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখন সরাসরি কলকাতা পুলিশের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করতে পারেন নিকটজনেরা৷ এই পদ্ধতি যাতে গোটা রাজ্যেই চালু হয়, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর৷ কোন পর্যায়ে রয়েছে এই এসওপি ? সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই তিন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল, ওই হাসপাতালেরই সোমনাথ দাস এবং এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তাপস বসুকে নিয়ে গঠিত এক্সপার্ট কমিটি তাঁদের মতামত জানিয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন৷ স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, আমার কাছে রিপোর্ট জমা পড়েছে৷ আশা করা যায়, সব ঠিক থাকলে, মার্চ মাসের মধ্যেই নতুন নিয়ম চালু হবে গোটা রাজ্যে৷ তাতে হাল ফিরবে কি রাজ্যের মর্গগুলির? সময়েই মিলবে উত্তর৷ সংশয় মূলত ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের অভাব নিয়ে৷ জেলা-মহকুমায় যে ভাবে হাসপাতালের সাধারণ সার্জেনকেই সময় বের করে ময়নাতদন্ত করতে হয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নির্ভর করতে হয় চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের উপরে সেই অবহেলার চির চেনা চেহারাটা কী বদলাবে, প্রশ্ন তা নিয়েই৷ তথ্যসূত্র: এই সময় এআর/১১:০০/২৭ ফেব্রুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2ot00Me
February 27, 2018 at 05:04PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন