বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি :: বাড়িতে লোকজন আছেন। তবুও শোকাবহ নিরবতা। থেমে থেমে ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ। সকলের চেহারায়ই প্রিয়জন হারানোর ষ্পষ্ট ছাপ। চোখের কোণে টলমল করছে অব্যক্ত বেদনার জল। উঠোনে পড়ে আছে পুড়ে যাওয়া বসতঘরের নানা আসবাবপত্র। বাড়ির লোকজনদের কেউ ঘরের বারান্দায়, কেউবা উঠোনে দাড়িয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে শুধুই চারপাশে চোখ বুলাচ্ছেন। খুঁজে ফিরছেন সদ্য হারিয়ে ফেলা অতি প্রিয়জনকে।
রবিবার দুপুরে সরজমিন এমনই শোকাবহ পরিবেশের দেখা মিলল সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় প্রতিপক্ষের হাতে খুন হওয়া কৃষক আজির উদ্দিনের গ্রামের বাড়িতে। ওইদিন উপজেলায় কর্মরত কয়েকজন সংবাদকর্মী আজিরের বাড়ি খাজাঞ্চী ইউনিয়নের রঘুপুর গ্রামে যান। গত শুক্রবার বিকেলে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে মারা যান এই গ্রামের মৃত তেরাব আলীর পুত্র ৯ সন্তানের জনক আজির উদ্দিন (৫০)।
কথা হয় স্থানীয় কয়েকজনের সাথে। তারা জানান, বাড়ির সীমানা ও রাস্তা নিয়ে চাচা ইছাক আলীর সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে আজির উদ্দিনদের। তার ছোটভাই গিয়াস উদ্দিন জানান, হোসেনপুর গ্রামের মৃত হারিছ মিয়ার পুত্র আ.লীগ নেতা কবির আহমদ কুব্বার, তবলপুর গ্রামের মৃত খুশিদ আলীর পুত্র দুদু মিয়া ও তাদের বাহিনীর উপস্থিতিতে ইছাক আলীরা বিভিন্ন সময়ে তাদের গাছ কর্তন, ঘর পোড়ানো এবং রাস্তা বন্ধ করে দেয়াল নির্মাণ করেছেন। ইছাক আলী এসব ভাড়াটে লোকের শেল্টারে আমাদের বিরুদ্ধে কয়েকটি মিথ্যা মামলাও করেছে।
এসময় সংবাদকর্মীদের সাথে কথা হয় নিহত আজির উদ্দিনের স্ত্রী সিতারা বেগমের। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ইছাক আলী তার ভাড়াটে আনা আ.লীগ নেতা কবির আহমদ কুব্বার, দুদু মিয়া ও তাদের বাহিনীর সরাসরি উপস্থিতিতে রাস্তা বন্ধ করে বাড়ির মধ্যস্থানের দেয়াল নির্মাণ করে। প্রতিবাদ করলে কুব্বার, দুদু ও ইছাক আলী প্রকাশ্যে আজির উদ্দিনকে খুন করে ফেলার হুমকী দেয়। ওই দিন রাতে কবির আহমদ কুব্বারের নেতৃত্বে আজির উদ্দিনকে ঘর থেকে বের করে গাছের সঙ্গে বেঁধে তার বসতঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। খবর পেয়ে ওই এলাকায় টহলরত থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আগুনের বিষয়টিকে ‘নাটক’ বলে আখ্যা দেয়। পুলিশের এমন ভূমিকায় আজির উদ্দিন থানায় মামলা না দিয়ে ইছাক আলী, কবির আহমদ কুব্বার ও দুদু মিয়াসহ ১৪ জনের নামে সিলেট আদালতে মামলা করেন।
সিতারা বেগম আরও জানান, ‘ঘর পুড়ে যাওয়ার পর আমাদেরকে নিয়ে মায়ের ঘরে বসবাস করতেন আজির উদ্দিন। শুক্রবার দুপুরে পার্শ্ববর্তী আজির উদ্দিনের চাচা মজর আলীর ঘরে আমি উঠতে চাইলে তিনি প্রথমে থাকার অনুমতি দেন। পরে ইছাক আলী, মজর আলী ও তার ছেলে জয়নাল এসে আমার সাথে বাগবিতন্ডা শুরু করেন। এসময় ঘাস কেটে ঘরে ফেরা আজির উদ্দিন তাদেরকে বাঁধা দিলে তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার উপর হামলা করে। সিতারা বেগম এ ঘটনার হুকুমদাতা হিসেবে কবির আহমদ কুব্বার ও দুদু মিয়াকে দায়ী করে স্বামী হত্যার বিচার দাবী করেন। তিনি জানান, হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
এব্যাপারে কথা বলার জন্যে ইছাক আলী ও মজর আলীর খোঁজ করা হলে তাদের কাউকেই বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তবে, ইছাক আলীর মা শরীফুল নেছা বলেন, ঘটনার সময় আমার ছেলে দু’পক্ষকেই নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছে। মজর আলী ও তার ছেলে আজির উদ্দিনের সাথে মারামারি করেছে।
আ.লীগ নেতা কবির আহমদ কুব্বার বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে বলেন, তাদের দু’পক্ষের মারামারি ঘটনা নিষ্পত্তি করতে যাওয়ায় আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বসতঘরে আগুনের ঘটনাকে নাটক আখ্যা দেয়ার অভিযোগটি অস্বীকার করে টহলে থাকা পুলিশের এএসআই জামাল খান বলেন, আমি এরকম কিছু বলার প্রশ্নই ওঠেনা।
থানার ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএম বলেন, ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করতে পুলিশি চেষ্ঠা অব্যাহত আছে।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2GHoFo2
March 18, 2018 at 10:05PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন