ঢাকা, ১৯ মার্চ- ১৬ মার্চ রাতে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ম্যাচের শেষ মুহূর্তে সেকি উত্তেজনা! তখন পুরো ম্যাচের ৪০তম ওভারের (শেষ ওভার) খেলা চলছে। লঙ্কান পেসার ইসুরু উদানার করা ওই ওভারের প্রথম দুই বলে ঘটে যাওয়া ঘটনা আর বাজে আম্পায়ারিংয়ের প্রতিবাদে ক্রিজে থাকা ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ ও রুবেল হোসেনকে মাঠ ছেড়ে উঠে আসতে বলছিলেন টাইগার ক্যাপ্টেন সাকিব। তাও ড্রেসিং রুমে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে নয়। ড্রেসিং রুম থেকে দৌড়ে একদম সীমানার কাছে এসে দুহাত নেড়ে ব্যাটসম্যানদের লক্ষ্য করে সাকিবের আহ্বান, রিয়াদ ভাই চলে আসেন। আমরা খেলবো না আর। খেলে লাভ কি? আম্পায়াররা নিশ্চিত নো বল দেয় না। উদানার পর পর দুই বল ব্যাটসম্যানের মাথার ওপর দিয়ে চলে গেল। অথচ আম্পায়ার নো ডাকলো না। দ্বিতীয় বল লেগ আম্পায়ার নো ডাকার পরও মূল আম্পায়ার তা আমলে নিলেন না। এমন অবস্থায় খেলে কি হবে? মাঠের পাশে টেন্টে বসে থাকা লঙ্কান রিজার্ভ আম্পায়ার বারবার সাকিবকে থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন। সাকিবের তখন একদমই অন্যরকম অবস্থা। চোখে মুখে আম্পায়ারদের প্রতি রাজ্যের ক্ষোভ। একটি হলে কথা ছিল, পরপর দুই বল চলে গেল ব্যাটসম্যান মোস্তাফিজের মাথার ওপর দিয়ে, ক্রিকেটের বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে কাঁধের ওপর দিয়ে একটি বল চলে গেলেই আম্পায়ার আঙুল তুলে বোলার ও স্কোরারকে জানিয়ে দেন, একটি ডেলিভারি কিন্তু কাঁধের ওপর দিয়ে চলে গেছে। তার মানে আরেকটা গেলেই নো ডাকবো। কিন্তু হায়! পরের বলও গেল মোস্তাফিজের মাথার ওপর দিয়ে। লেগ আম্পায়ার নোর সঙ্কেত দিলেও মূল আম্পায়ার তা আমলেই আনলেন না। তাতেই চরম অসন্তুষ্ট, উত্তেজিত আর ক্ষুব্ধ সাকিব। তার ডাকে ও হাতের ইশারায় হাতের ব্যাট ফেলে মাহমুদউল্লাহও সাজঘরের পথে দু-এক পা বাড়িয়েও ফেলেছিলেন। এর মধ্যে পিছন থেকে ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন ইশারায় মাঠে থাকার সঙ্কেত দেয়ায় খানিকটা সময় মাঠেই দাঁড়িয়ে থাকলেন মাহমুদউল্লাহ। এ সময় মাঠে ও মাঠের বাইরে সীমানার পাশে হঠাৎ জটলা। বাংলাদেশ দলের রিজার্ভ বেঞ্চের প্রায় সবাই ড্রেসিংরুম ও ডাগআউট ছেড়ে একদম সীমানার পাশে এসে দাঁড়ালেন। অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে দলীয় বার্তা নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেছিলেন নুরুল হাসান সোহান। তিনিও চলে এসেছিলেন জটলার কাছে। সেই জটলার মধ্যে হঠাৎ বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়লেন লঙ্কান অধিনায়ক থিসারা পেরেরা এবং বাংলাদেশেশের সোহান। হাতাহাতি না হলেও দুজনই আঙুল নাড়িয়ে আরেকজনকে শাসালেন। মনে হচ্ছিলো যে কোনো সময় একজন আরেকজনের ওপর চড়াও হতে পারেন। বিশেষ করে থিসারা পেরেরার দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে সোহানের উত্তেজিত হওয়ার ছবিই ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপরই শুরু হয় খেলা। পরের তিন বলে তো মহাকাব্য রচনা করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ওভারের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ডেলিভারি থেকে যথাক্রমে পয়েন্ট দিয়ে বাউন্ডারি, ডিপ মিড উইকেট আর স্কোয়ার লেগের মাঝামাঝি ঠেলে ডাবল ও শেষ বলে ফ্লিক করে স্কোয়ার লেগের ওপর দিয়ে হাঁকালেন রিয়াদ; বল গিয়ে আছড়ে পড়লো সোজা সীমানার ওপারে। ছক্কা। বাংলাদেশ পৌছে গেল জয়ের বন্দরে। মহাকাব্যিক জয়ের পরই শুরু হয় মাঠের মধ্যে উদ্দাম উদযাপন। সম্প্রতি বাজার পাওয়া নাগিন ড্যান্সের সঙ্গে মেতে উঠলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটার থেকে ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন পর্যন্ত। উত্তেজনা কিন্তু তাতে সব শেষ হলো না। দুদলের ক্রিকেটারদের কয়েকজন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করে বসলেন। শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা একা নন, কুশল মেন্ডিস আর বাংলাদেশের নুরুল হাসান সোহানকে বেশ উত্তেজিত দেখালো এ সময়। তামিম প্রথমে কুশল মেন্ডিসকে জড়িয়ে ধরে ঠান্ডা করার চেষ্টা করলেন; কিন্তু তাতেও নিবৃত্ত না হয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ওপর চড়াও হবার চেষ্টা করলেন কুশল মেন্ডিস। এরপর দেখা গেছে, নুরুল হাসান সোহানকে ডেকে নিয়ে বকাবকি করছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আসলে কী ঘটেছিল তখন মাঠে? কেন ক্ষেপে গিয়েছিলেন সোহান। তার সাথে লঙ্কান ক্যাপ্টেন থিসারা পেরেরার উত্তেজক কথা-বার্ত বিনিময় হলো কেন? কেনই বা দুজন দুজনকে শাসালেন? তা নিয়ে ভক্ত, সমর্থক ও ক্রিকেট অনুরাগিদের কৌতুহলের শেষ নেই। আরও পড়ুন: দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইলেন রুবেল আজ সকালে দেশে ফিরে সংবাদকর্মীদের কাছে সে প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন নুরুল হাসান সোহান। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে বেরিয়ে যাবার সময় সোহানের কাছে উপস্থিত সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসা, আসলে কি হয়েছিল? আপনার সাথে থিসারা পেরেরার কথা কাটাকাটি এবং বাদানুবাদ হলো কি নিয়ে? সোহান যে ব্যাখ্যা দিলেন তার সারমর্ম হলো, আসলে তিনি আম্পায়ারদের সাথে কথা বলছিলেন। প্রথম বলটি কাঁধের ওপর দিয়ে যাবার পর তাকে বাউন্সার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল কি-না? তা জানতে চাইলে পাশ থেকে থিসারা তাকে রীতিমতো চার্জ করে বসেন। জানতে চান, তুমি কে হে বাপু? তুমি এখানে কেন? যাও? এই বলে সমানে গালাগালি করতে থাকে পেরেরা। তাতেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন সোহান। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সেখান থেকেই। সোহানও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এ সম্পর্কে সোহানের ব্যাখ্যা, আমি মাঠে ঢুকে রিয়াদ ভাইয়ের সাথে কথা বলছিলাম। এমন সময় লেগ আম্পায়ার পাশ দিয়ে যাচিচ্ছলেন দেখে তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, প্রথম বলটা বাউন্স দেয়া হয়েছি কি না। তখন থিসারা এসে বলে তুমি কথা বলার কে? তুমি যাও। তোমার কথা বলা লাগবে না। আমি বলেছি তোমার সাথে আমি আমি কথা বলছি না। তখন ও আমাকে গালি দিয়েছে। আমি বলেছি এটা তোমার দেখার বিষয় নয়। শুধু ওইটুকু বলেছেন? এমন প্রশ্নর জবাবে সোহানের ব্যাখ্যা, আমার হয়তবা চুপ থাকা উচিত ছিল। রাগের মাথায় আমিও হয়তবা কথার জবাব দিয়েছি। এটাই ঘটনা। সূত্র: জাগোনিউজ২৪ আর/১৭:১৪/১৯ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2FU09ip
March 20, 2018 at 12:24AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন