১১ দিনেও অধরা বিউটির খুনি লম্পট বাবুল…….!

  (অনুসন্ধানী প্রতিবেদন)-    নিজস্ব প্রতিনিধি::    সারাদেশে এখন আলোচিত বিষয় হবিগঞ্জের স্কুলছাত্রী বিউটিকে ধর্ষণের হত্যার ঘটনা। হাওরের সবুজ ঘাসের মধ্যে লাল জামা পরা বিউটির ক্ষতবিক্ষত লাশের ছবি ফেসবুকে ঘুরছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সারাদেশের মানুষদের ইতোমধ্যে নাড়া দিয়েছে।

ভার্চুয়াল জগতে বিউটির হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় বয়ে গেলেও বাস্তবে তেমন আঁচ পড়েনি, নাড়া পড়েনি প্রশাসনেও। হত্যাকাণ্ডের ১১দিন পার হলেও মূল আসামিকে এখনও ধরা হয়নি।

উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় প্রথমে বিউটিকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়, মামলা করলে তাকে তুলে নিয়ে ফের ধর্ষণের পর পৃথিবী থেকেই নিশ্চিহ্ন করে দেয় স্থানীয় বখাটে যুব্ক বাবুল মিয়া ও তার সহযোগীরা।

প্রধান আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় নিহত বিউটির স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভ আর হতাশা বিরাজ করছে।

এদিকে, এলাকায় আসামি বাবুল মিয়ার সম্পর্কে খোঁজ নিলে তার নারীঘটিত নানা অপকর্মের অভিযোগ পাওয়া যায়।

একাধিক নারীদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে প্রতারণা করার অভিযোগও রয়েছে। তবে তার ভয়ে কোনো নারী প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার নবগঠিত শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মনডোরা গ্রামে মৃত মলাই মিয়র ছেলে বাবুল মিয়া (৩০)। এলাকায় প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত বাবুল বিবাহিত যুবক। তার দুই সন্তান রয়েছে। বেকার বাবুল এলাকার বখাটে হিসেবে পরিচিত। একাধিক নারীর সঙ্গে গোপন সম্পর্ক স্থাপনের পর ব্ল্যাকমেইল করে নানা ধরণের অত্যাচার করত সে।

এছাড়া রাস্তাঘাটে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত করারও অনেক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সর্বশেষ গত ২১শে জানুয়ারি একই গ্রামের বিউটি আক্তারকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বাবুল মিয়াসহ তার লোকজন। তাকে অপহরণ করে বিভিন্ন স্থানে রেখে ধর্ষণ করে বাবুল। এ ঘটনার প্রায় ১ মাস পর বাবুল মিয়া কৌশলে বিউটিকে তার বাড়িতে রেখে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় ১লা মার্চ বিউটি আক্তারের বাবা সায়েদ আলী বাদী হয়ে বাবুল ও তার মা ব্রাহ্মনডোরা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য কলমচানের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। এতে বাবুল আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। প্রতিশোধ হিসেবে গত ১৬ই মার্চ বিউটিকে তার নানার বাড়ি উপজেলার গুনিপুর গ্রাম থেকে রাতের আঁধারে জোর করে তুলে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ হাওরে ফেলে দেয়।

পরদিন ১৭ই মার্চ সকালে শায়েস্তাগঞ্জ পুরাইকলা বাজার সংলগ্ন হাওর থেকে বিউটির ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়। হাওরে পড়ে থাকা সেই লাশের ছবিই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে।

এদিকে, বিউটিকে হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগে তার বাবা বাদী হয়ে ফের বাবুল মিয়াসহ ২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এ মামলায় গত ২১শে মার্চ পুলিশ বাবুলের মা ইউপি সদস্য কলম চান ও সন্দেহভাজন হিসেবে একই গ্রামের ঈসমাইল নামে এক যুবককে আটক করে। কিন্তু প্রধান আসামি বাবুলকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

এ ব্যাপারে নিহত বিউটির বাবা সায়েদ আলী জানান, বখাটে বাবুলের কারণে শুধু আমার মেয়ে নয়, এলাকার অনেক কন্যাই লাঞ্ছিত ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

তার মেয়ে বিউটি হত্যা ও ধর্ষণ মামলা করায় বাদী পক্ষের অব্যাহত হুমকি ধামকির কারণে এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান বিউটির বাবা।

রাস্তাঘাটে প্রায় সময়ই তাকেও হত্যার হুমকি দেয়া হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।

নিহত বিউটি আক্তারের মা হুসনে আরা বলেন, বখাটে বাবুলের অত্যাচারে আমার মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ করে ঘরে বন্দি অবস্থায় রেখেও রেহাই পাইনি।

বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে বাবুল তার অজান্তে স্থানীয় এক কিশোরীর মাধ্যমে বিউটির খবরাখবর রেখেছে। যখনই প্রতিবাদ করা হচ্ছে তখনই উল্টো তাদেরকে হয়রানি করা হতো।

তিনি বলেন, বাবুল এলাকার উঠতি বয়সের কিশোরীদের রাস্তাঘাটে পেলেই বিভিন্ন ভাষায় উত্ত্যক্ত করতো। কখনো কখনো গায়ে পর্যন্ত হাত দিয়ে যৌন হয়রানি করত। প্রভাবশালী হওয়ায় নিরীহ লোকজন কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি।

গ্রামের বাসিন্দা তাউছ মিয়া জানান, বখাটে বাবুলের অপকর্মের কারণে গ্রামের নিরীহ নারীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রায়ই সে বিভিন্ন জায়গা থেকে নারীদের নিয়ে এসে আড্ডার নামে অসামাজিক কার্যকলাপ করত।

ব্রাহ্মনডোরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জজ মিয়া জানান, স্কুলছাত্রী বিউটি হত্যাকাণ্ডে প্রধান আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় আমরাও হতাশ। বাবুল স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান বলেন, বিউটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মূলহোতা বাবুলের মা ইউপি সদস্য কলম চাঁন ও ঈসমাইল নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। পরে তাদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়াও দ্রুতই প্রধান আসামি বাবুলকে গ্রেফতার করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস https://ift.tt/2E2XZet

March 29, 2018 at 02:39AM
29 Mar 2018

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top