নিউ জার্সি, ২৫ মার্চ- বাবা-মা কেউই রাজনীতির সাথে জড়িত নন; তাঁরা ব্যবসায়ী। তবে তাহসিনা আহমেদের স্বজনদের অনেকেই জড়িয়ে আছেন রাজনীতির সাথে। দাদা মঈনউদ্দিন আহমদ দীর্ঘদিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন; মামা ইকবাল আহমদ চৌধুরী উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা, ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যানও। রাজনীতিতে তাহসিনার আগ্রহ তাই অবাক হওয়ার কিছু নয়। তবে বাংলাদেশের এই মেয়ের আমেরিকা জয় অবাক করার মতোই। টানা দ্বিতীয়বারের মতো আমেরিকার নিউ জার্সির হেলডন নগর থেকে স্থানীয় সরকারের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন তাহসিনা। তাহসিনা আহমেদের পৈত্রিক বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপাশা গ্রামে। তার বাবা আমিন আহমেদ ও মা দিলশান আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। দেশটির নিউ জার্সিতে তাহসিনার জন্ম, বেড়ে ওঠাও সেখানে। সেখানকার হেলডন স্কুলে তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু। পরে কমিউনিটি ও আন্তর্জাতিক সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতক শেষে নিউ জার্সির মনমাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সোশ্যাল ওয়ার্ক ও ডেভলাপমেন্ট বিষয়ে করেছেন স্নাতকোত্তর। শুরুর গল্প: স্কুলপর্যায়ে থাকাকালীন সময় থেকেই বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও সাংগঠকিন কাজে জড়িয়ে পড়েন তাহসিনা আহমেদ। নিজের শহরে স্বেচ্ছাসেবকের কাজেও জড়ান তখন থেকেই। ধাপে ধাপে প্যাসিক কান্ট্রি ইয়াং ডেমোক্রেটসর সাধারণ সম্পাদক, কমিউনিটি সার্ভিসের চেয়ারম্যান, রাজনৈতিক সংগঠন ইয়াং ডেমোক্রেটস অব আমেরিকার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানও হন তিনি। তাহসিনার ভাষায়, আমি হাইস্কুলে থাকার সময়ই সোশ্যালওয়ার্কে জড়িয়ে পড়ি, স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছি। লক্ষ্য ছিল অন্যের জন্য কিছু করা। একে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া বলতে পারেন, অন্য কিছুও বলতে পারেন। তাহসিনা বলেন, বারাক ওবামার নির্বাচনী প্রচারণা, স্থানীয় ডেমোক্রেটিক পার্টির কংগ্রেস সদস্যদের নির্বাচনেও কাজ করেছি আমি। ঐতিহাসিক সেই জয়: তাহসিনা আহমেদের বয়স তখন ২২; বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহদ্দিও পেরোননি। ডেমোক্রেটিক পার্টির স্থানীয় শহর কমিটিতের সাথে জড়িত তিনি। তাহসিনার কাজে মুগ্ধ পার্টির নীতিনির্ধারকরা তাঁকে প্রস্তাব দেন হেলডন নগর থেকে স্থানীয় সরকারের কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার। নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন তাহসিনা। বারাক ওবামার দল ডেমোক্রেটিক পার্টি ক্ষমতাসীন হওয়ার দুই বছর পর, ২০১৪ সালের ৪ নভেম্বর মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়। নির্বাচনে প্রতিপক্ষ রিপাবলিকানরা বড় জয় পায়। সেই বিরুদ্ধ স্রোতের মধ্যেও ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে বিজয়ী হন তাহসিনা আহমেদ। নির্বাচনে তিনি পান ৮৪৯ ভোট; তাঁর প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান জ্যাকব ফেবার পান ৫২৯ ভোট। দক্ষিণ এশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া কোন অভিবাসীর মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে নির্বাচিত কাউন্সিলর হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তাহসিনা। ওই সময় তাঁর এ বিজয়কে বিশ্লেষকরা ঐতিহাসিক বলে মন্তব্য করেছিলেন। সেই সময়কার স্মৃতি বর্ণণা করেন তাহসিনা, নির্বাচনে আগে শহরের প্রত্যেকটি বাসায় একাধিকবার গিয়ে বাসিন্দাদের সাথে কথা বলেছি। সবাই তখন উৎসাহ দিয়েছেন। নির্বাচনেও তাই বিজয়ী হই। আবারও জয়: গত বছরের ৭ নভেম্বর নিউ জার্সির হেলডন নগরীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনেও টানা দ্বিতীয়বারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তাহসিনা আহমেদ। তিনিই একমাত্র বাঙালি, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে টানা দ্বিতীয়বারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হওয়ার পর তাহসিনা গণমাধ্যমকে বলেন, মানুষের সেবা করার মানসিকতা থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের হেলডনে কাউন্সিলর নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। দ্বিতীয়বারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে কাজের পরিধি আরও বাড়ানোর আশাবাদ ছিল তাহসিনার কণ্ঠে। বাংলাদেশের জন্য মমত্ববোধ: জন্ম, বেড়ে ওঠা সব যুক্তরাষ্ট্রে হলেও নিজেকে বাঙালিই মনে করেন তাহসিনা আহমেদ। লিখতে না পারলেও বাংলা কথা বলতে পারেন ভালোভাবেই। এক সাক্ষাৎকারে তাহসিনা বলেছিলেন, ধামি নিজেকে একই সঙ্গে বাংলাদেশি ও আমেরিকান মনে করি। এখানে ভাগাভাগি নেই, এ দুইয়ের মধ্যে কোন দ্বন্দ্বও নেই। সময়-সুযোগ হলেই বাংলাদেশে ছুটে আসেন তাহসিনা। পাঁচবার দেশে এসেছেন তিনি। ২০১২ সালে বাংলাদেশে এসে লম্বা সময় কাটিয়েছিলেন তাহসিনা। বাবার বাড়ি ছাড়াও মায়ের বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জেও সময় কাটান তিনি। ওই সময় তাহসিনা বলেছিলেন, বাংলাদেশের প্রকৃতি আমাকে মুগ্ধ করে। এমন সবুজ-শ্যামল দেশ পৃথিবীতে কমই আছে। ২০১৫ সালের শুরুর দিকে সর্বশেষ দেশে এসেছিলেন তিনি। তাহসিনা মানেই বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে, যতোবার তাহসিনার নাম উচ্চারিত হয়, অদৃশ্য কণ্ঠে তখন বাংলাদেশের নামও উচ্চারিত হয়। তাহসিনার বিজয় তাই গর্বিত করে বাংলাদেশকেও। সূত্র: সিলেটভিউ২৪ডটকম আর/০৭:১৪/২৫ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2pFJqIx
March 25, 2018 at 01:12PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন