কলকাতা, ০৬ মার্চ- শুন্যপদে বিচারপতি নিয়েগের দাবি নিয়ে চরম আন্দোলনের পথে আইনজীবীদের সংগঠনগুলি৷ তবে, আন্দোলনে এবার মতান্তর কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীদের সংগঠনেগুলির৷ কর্মবিরতির দিন নিয়ে এবার মত পার্থক্য প্রকাশ্যে এল তিন সংগঠনের৷ গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন, ইনকর্পোরেট ল সোসাইটি ও বার লাইব্রেরি যৌথভাবে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিল। একসঙ্গে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতও করেন তারা৷ সোমবার বার লাইব্রেরির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ১৩ মার্চ পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন তাঁরা । এর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই হাইকোর্টে আইনজীবীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বার অ্যাসোসিয়েশন একধাপ এগিয়ে ১৬ মার্চ পর্যন্ত কর্মবিরতি চলিয়ে যাওয়ার ডাক দিয়েছে । পাশাপাশি ১৬ মার্চেই রাজ্যের সমস্ত আদালতগুলোকে একদিনের প্রতীকী কর্মবিরতিতে সামিল হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উত্তম কুমার মজুমদার৷ ফলে রাজ্যের সমস্ত জেলার আদালতগুলোতেও আগামী ১৬ তারিখে কাজ বন্ধ থাকবে৷ এছাড়াও মঙ্গলবার বৈঠক করে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে নেওয়া হয়েছে । এরপর ১৬ মার্চ ফের বৈঠক করে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান হয়েছে । বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উত্তম কুমার মজুমদার এদিন সাংবাদিকদের বলেন, বিচারপ্রার্থীদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। গত চার বছর ধরে কলকাতা হাইকোর্টে কোনও স্থায়ী প্রধান বিচারপতি নেই। ফলে বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এতে কলেজিয়াম পরিকাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, কলকাতা হাইকোর্ট দেশের সবচেয়ে পুরনো এবং প্রথম হাইকোর্ট। তা সত্ত্বেও এখানে ৩৫ শতাংশের নীচে বিচারপতি রয়েছেন৷ এতে যেমন বিচারপ্রার্থীরা ভুক্তভুগি হচ্ছেন অন্যদিকে কর্মরত বিচারপতিদের উপরেও অমানুষিক চাপ বাড়ছে। বার অ্যাসোসিয়েশন সম্পাদক অমল কুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল ও রাজ্য সরকারি আইনজীবীরাও এই কর্মবিরতিকে সমর্থন করেছেন। তবে বিচারপতিদের সরাসরি এই আন্দোলনে যুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। অন্যদিকে তৃণমূল লিগ্যাল সেনের সভাপতি পন্টু দেবরায় বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার শিকার হয়েছে প্রাচীন এই হাইকোর্ট। মাত্র তিনজন বিচারপতির নাম দিয়েছে তারা৷ কিন্তু এবিষয়ে কোনও নথিপত্র পেশ করা হয় নি। সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা চুড়ান্ত নাকাল হচ্ছেন। এবছরে মাত্র তিনজন বিচারপতি নিয়োগ হয়েছে৷ বিচারপতি পদে আরও ৪২ টি আসন শুন্য রয়েছে। হাইকোর্টে তিন লক্ষের বেশি মামলা জমে রয়েছে । এতদিনে আরও মামলা জমে গিয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্র যদি দাবিগুলো না মানে সেক্ষেত্রে সর্বদল নির্বিশেষে দিল্লীর যন্তরমন্তরে ধরনা দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। এদিকে গতকাল সোমবারই কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবীদের সংগঠন বার লাইব্রেরীর তরফ থেকে কর্মবিরতির মেয়াদ আবার বাড়ানো হয়। আগামী ১৩ই মার্চ পর্যন্ত চলবে তাদের এই কর্মবিরতি। বিচারপতি কম থাকার কারণে গত ১৯ ই ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখেন হাইকোর্টের আইনজীবীরা। সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ফের ৫ই মার্চ পর্যন্ত বাড়ান হয় কর্মবিরতির মেয়াদ। এবার বার লাইব্রেরী আগামী ১৩ মার্চ ও বার অ্যাসোসিয়েশন আগামী ১৬ই মার্চ পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করছে৷ কলকাতা হাইকোর্টে যেখানে ৭২ জন বিচারপতি থাকার কথা, সেখানে এখন মাত্র ২৯ জন বিচারপতি আছেন। তার মধ্যে আবার ২ জন বিচারপতি আন্দামান নিকোবর সংক্রান্ত মামলা দেখেন। ডিভিশন বেঞ্চ সংক্রান্ত মামলা দেখে হিসাব করলে প্রতিদিন গড়ে মাত্র ১৯ ২০ জন বিচারপতি মামলার শুনানি শোনেন বলেই আইনজীবীদের অভিযোগ। ফলে হাইকোর্টে জমছে মামলার পাহাড়। দিনের পর দিন বিচার পাচ্ছেন না বিচারপ্রার্থীরা। অন্যদিকে, রোজগারও প্রায় বন্ধ জুনিয়ার ও অল্প অভিজ্ঞ তরুণ আইনজীবীদের। হাইকোর্টের আইনজীবীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের নজরে একাধিকবার বিষয়টি আনা হলেও বিচারপতির সংখ্যা বাড়ানো হয়নি৷ আইনজীবীদের বক্তব্য, হাইকোর্টে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মামলা চলছে৷ সেই তুলনায় বিচারপতি হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন৷ তাই বহূবার বলেও কাজ না হওয়ায়, শেষ রাস্তা হিসাবেই কাজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাঁদের। কিন্তু, বিচার পাবার জন্য বিচারব্যবস্থায় লালবাতি ঝুলিয়ে দেওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত বারবার প্রশ্ন উঠেছে সেটা নিয়েও। আরও পড়ুন: বিজয়ের পর ত্রিপুরায় বিজেপি সমর্থকদের তাণ্ডব তবে, আন্দোলনের সময় নিয়ে হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন, বার লাইব্রেরী ক্লাব ও ইনকর্পোরেটেড ল সোসাইটির মতান্তর থাকলেও তাঁরা একযোগে এই আন্দোলন অনির্দিষ্টকালের জন্য চালিয়ে নিয়ে যাবার পক্ষপাতী। কারণ, ওড়িশা ও কর্ণাটকেও আইনজীবীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে চলে যাবার পরই হাইকোর্টগুলিতে বিচারপতি নিয়োগ করেছে কেন্দ্র সরকার। কেন্দ্র সরকার কলকাতা হাইকোর্টেও বিচারপতি নিয়োগ না করলে লাগাতার আন্দোলনের হূমকি দিয়েছেন আইনজীবীরা৷ তথ্যসূত্র: কলকাতা২৪*৭ এআর/২০:৪৫/০৬ মার্চ



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2tlxaBZ
March 07, 2018 at 02:45AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top