মৃতপ্রায় এক সময়কার খরস্রোতা জাফলংয়ের পিয়াইন……..

সুরমা টাইমস ডেস্ক::     পর্যটনের তীর্থস্থান খ্যাত সিলেট। আর এই তীর্থস্থানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান জাফলং। প্রতি বছর লাখো পর্যটক জাফলংয়ের সৌন্দর্যের টানে ছুটে যান সেখানে। একসময় জাফলংয়ে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের কাছে স্বচ্ছ জল বুকে নিয়ে প্রবহমান পিয়াইন নদী ছিল অমোঘ এক আকর্ষণ। কিন্তু সেই দিন আর নেই। এ নদী এখন মৃতপ্রায়। উৎসমুখে ভরাট আর পরিবেশ ধ্বংস করে অপরিকল্পিত পাথর উত্তোলনের ফলে পিয়াইন নদী ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে এ অবস্থা বিরাজমান থাকলেও এ নদীকে বাঁচাতে নেই কোনো উদ্যোগ।

সিলেটে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ভারতের ওম নদী বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ে প্রবেশ করে দুটি শাখায় প্রবাহিত হয়েছে। নদীটির একটি শাখা ডাউকি নাম ধারণ করে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে গোয়াইনঘাটের পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের মুখতলা এলাকায় সারি নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। অপর শাখাটি পিয়াইন নামে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশ ঘেঁষে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর সঙ্গে মিশেছে।

পিয়াইন নদী ছিল খরস্রোতা। জাফলংয়ে এসে পর্যটকরা নদীর স্বচ্ছ জলে নেমে জলকেলিতে মেতে উঠতেন। নৌকা দিয়ে নদীতে ঘুরতে ঘুরতে আয়নার মতো স্বচ্ছ জলের নিচে ঝাঁকে ঝাঁকে ভেসে চলা মাছ দেখে অন্যরকম এক আনন্দে ডুবে যেতেন। নির্মল প্রকৃতির মধ্যে থাকা অপরূপ এ নদীর বুকে অসংখ্য চলচ্চিত্রেরও শ্যুটিং হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে নদীটি পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে। নদীটির উৎসমুখ ভরাট হয়ে যাওয়ায় এর বুকে নেই জলের প্রবাহ। এ ছাড়া জাফলংয়ে অপরিকল্পিতভাবে পরিবেশবিধ্বংসী বোমা মেশিন ও এক্সাভেটর দিয়ে পাথর উত্তোলন করার ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে নদীতে। বালুর স্তূপ জমে নদীর বুকে পড়েছে চর। বর্ষাকালে যৎসামান্য পানি প্রবাহ থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে একেবারে ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়। স্থানীয় সংগ্রামপুঞ্জির বাসিন্দা বৃদ্ধ কেনাং মিচাং বলেন, ‘বহু বছর আগে এ নদী ছিল খরস্রোতা। নদীর বুক চিরে স্বচ্ছ জলের ধারা বয়ে যেত। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতেন। এ নদীর পানি নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করতেন আশপাশের বাসিন্দারা। এখানে চলচ্চিত্রের শুটিং হতেও দেখেছি আমরা। কিন্তু এখন সবই যেন স্মৃতি। পিয়াইন মরে যাচ্ছে। নদীটি বাঁচাতে কারও কোনো তৎপরতাও নেই।’ সিলেটে পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী আবদুল হাই বলেন, ‘একদিকে উৎসমুখ ভরাট হয়ে যাওয়া, অন্যদিকে অপরিকল্পিত পাথর উত্তোলন। ফলে নদী মৃতপ্রায়। একটি নদী মরে যাওয়া মানে প্রাণ ও পরিবেশের ওপর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়া। এ নদীকে রক্ষা করতে খননকাজসহ নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’ সিলেটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ভারতের ওম নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করে পিয়াইন ও ডাউকি নাম ধারণ করেছে। ১৯৮৮ সালে এক ভূমিকম্পে নদীর উৎসমুখ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে পানি প্রবাহ কমতে থাকে। পিয়াইন নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালে ডাউকি নদীতে পানির চাপ বেশি থাকে। এতে ওই নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়।’ তিনি বলেন, ‘পিয়াইন নদীর উৎসমুখ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় পড়েছে। এজন্য উৎসমুখ খনন করতে হলে যৌথ নদী কমিশন গঠন করতে হবে।’



from Sylhet News | সুরমা টাইমস https://ift.tt/2GcMAuo

March 27, 2018 at 02:29AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top