সিডনি, ০২ মার্চ- অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল সংসদে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস জাতীয়ভাবে পালনের বিল পাসের পর এ বছর অস্ট্রেলিয়ায় নানা আয়োজন ও শ্রদ্ধাভরে পালিত হয়েছে দিবসটি। এ বছর আরও বেশি উজ্জীবিত হয়ে অন্যান্যদের সঙ্গে দিবসটি পালন করেছেন নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের সিডনিতে বসবাসরত বাংলাদেশিরা। এসব আয়োজনে মূলধারার কমিউনিটির অনেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছেন। প্রবাসীরা মনে করেন, বাংলাদেশের বাইরে অস্ট্রেলিয়াতেই এবার বড় আকারে দিবসটি পালিত হয়েছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি রোববার অ্যাশফিল্ড পার্কে দিনব্যাপী অমর একুশ পালন ও বইমেলার আয়োজন করে একুশে একাডেমি অস্ট্রেলিয়া। এখানে কর্মসূচি শুরু হয় প্রভাতফেরি ও পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে। এ ছাড়া দিনব্যাপী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ায় কর্মদিবস হওয়ায় ১৮ ফেব্রুয়ারি রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেই দিবসটি পালন করা হয়। একুশে একাডেমি অস্ট্রেলিয়ার নানা উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম একুশে বইমেলা আয়োজন। বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে চলে বইমেলা। এরই আদলে দিনব্যাপী একুশে বইমেলার আয়োজন করা হয় অ্যাশফিল্ড পার্কে। এই বইমেলার পরিসর ক্রমশ বাড়ছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ বইমেলায় বিভিন্ন লেখকের বই নিয়ে বসে স্টল। বিভিন্ন স্টলের পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রথমা প্রকাশনের বইয়ের স্টলও ছিল এবারের মেলায়। এই স্টলে ক্রেতাদের ভিড় পরিলক্ষিত হয়। স্টলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সিডনিপ্রবাসী সাংস্কৃতিক সংগঠক ও লেখিকা হ্যাপি রহমান। এ ছাড়া বিভিন্ন স্টলে বাংলাদেশের বরেণ্য লেখকদের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী লেখকদের বইও শোভা পায়। নতুন নতুন বইয়ের প্রতি বেশি ঝোঁক ছিল এবারের মেলায় আগতদের। বইমেলায় উপস্থিত ছিলেন এ বছর সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, লেখক ও ভাষাসৈনিক রণেশ মৈত্র। অন্যান্যের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান বিরোধী দল লেবার পার্টির অন্যতম মুখপাত্র টনি বার্কও উপস্থিত ছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে অ্যাশফিল্ড পার্কের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার ফুল হাতে নিয়ে ভিড় জমান সিডনির সর্বস্তরের বাঙালি। মধ্যরাতে সিডনির বিভিন্ন বাংলাদেশি সংগঠন ও বাংলাদেশিরা সমবেত হন অ্যাশফিল্ড পার্কে। এ ছাড়া ২১ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে ক্যানবেরার বাংলাদেশ হাইকমিশন। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ও অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে হাইকমিশনে দিবসটির পালনের কর্মসূচি শুরু হয়। দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে বাংলাদেশ হাইকমিশন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এক কর্মসূচির আয়োজন করে ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল। ২৫ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে দিবসটি পালন করে স্কুলটি। মিন্টোর স্কুল প্রাঙ্গণে দিবসটি পালিত হয়। প্রভাতফেরি দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। দিবসের এ অনুষ্ঠান শিশু-কিশোরদের মন মাতানো নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন ও স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়। অন্যদিকে, দিবসটি উপলক্ষে বাঙালি কমিউনিটি ইনক আয়োজন করে আরেক অনুষ্ঠানের। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইঙ্গেলবার্নের গ্রেগ পারসিভাল হলে ভাষাশহীদ দিবস পালন করে তারা। মাতৃভাষা দিবসের এ অনুষ্ঠানে শিশু-কিশোরদের ভাষাবিষয়ক প্রতিযোগিতা, বাংলা ভাষার গান, নাচ, কবিতা আবৃত্তি ও দলীয় সংগীতসহ স্থানীয় শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। পরদিন দিন ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ক্যানবেরায় পঞ্চমবারের মতো বার্ষিক মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ওয়াক ২০১৮ বা একুশের হাঁটা আয়োজিত হয়। ২ কিলোমিটারের এ পদযাত্রাটি ক্যানবেরার কিংস অ্যাভিনিউ ব্রিজ পার করে। এ পদযাত্রায় বাঙালিসহ বিভিন্ন জাতির ও ভাষাভাষীর মানুষেরা অংশগ্রহণ করেন। পদযাত্রাটির আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ মুভমেন্ট (আইএমএলএম)। এ ছাড়া গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অস্ট্রেলিয়া ও সিডনি শাখা। সিডনির রকডেলের এ উপলক্ষে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে তারা। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি। সভায় ভাষা দিবসের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা। সিডনিতে আরও অনেকগুলো সংগঠন এ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন শোকগাথা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ ছাড়া, মেলবোর্ন, পার্থ, অ্যাডিলেড, ব্রিসবেন ও হোভার্টসহ অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন রাজ্যের প্রধান শহরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের খবর পাওয়া গেছে। সূত্র: প্রথম আলো এমএ/ ০২:১১/ ০২ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2t9cYDw
March 02, 2018 at 08:33PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন