সিডনি, ১৫ এপ্রিল- চৈত্রের শেষে পাতা ঝরানো পথে বাঙালির বুকে হাজির বাংলা নতুন বছর ১৪২৫। ঢাক-ঢোল বাজিয়ে রঙে-ঢঙে সেজে উৎসব আমেজে দেশব্যাপী উদ্যাপিত হয়ে গেল পয়লা বৈশাখ ও বর্ষবরণ উৎসবের। জাতিসত্তার আনন্দঘন আত্মপ্রকাশে অস্ট্রেলিয়ার শিকড়সন্ধানী প্রবাসী বাঙালিরাও একই সুরে মেতে উঠেছেন বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় উৎসব পয়লা বৈশাখে। গত ২৬ বছরের ধারাবাহিকতায় অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এবারও হয়ে গেল দেশটির সবচেয়ে বড় বৈশাখী মেলার। আজ শনিবার পয়লা বৈশাখ এ দেশটিতে সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় ব্যাপক উৎসাহ দেখা যায় মেলায় আগত দর্শকদের। সিডনির বিখ্যাত এএনজেড অলিম্পিক স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হয় বাংলা বর্ষবরণ ও বৈশাখী মেলা। সিডনির রোদ ঝলমল দুপুরে মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ বর্ষবরণ উৎসবের। ঢোলের তালে-তালে মুখ-মুখোশের প্রকাশে শুভ বোধকে বরণ করে নিতে ঐতিহ্যবাহী এ শোভাযাত্রায় শত শত বাঙালি বৈশাখী সাজে অংশ নেন। লাল সাদা আর বর্ণিল পোশাকে উৎসবমুখর হয়ে উঠতে শুরু করে সিডনির অলিম্পিক পার্কসংলগ্ন রাস্তাঘাট। এবারের মেলার প্রচারণায় সিডনির প্রধান সড়কে বাংলা ও ইংরেজিতে নিমন্ত্রণ জানিয়ে স্থাপন করা হয়েছিল বিলবোর্ড। দুপুর গড়িয়ে বিকেলের আগেই মেলার উদ্বোধন করা হয়। মেলা উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল বিশেষ বাণী প্রদান করেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ প্রবাসী বাঙালিদের সার্বিক মঙ্গল কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী টার্নবুল তার বাণীতে প্রবাসী বাঙালিদের স্বদেশি সংস্কৃতি ধারণের জন্য সাধুবাদ জানান। বৈশাখী মেলা উপলক্ষে মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নতুন আর পুরোনো প্রজন্মের মিশেলে ব্যতিক্রমী ফ্যাশন আর নাচে-গানে হাজার হাজার দর্শক সরব হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে পথ প্রোডাকশনস শিল্পীদের তাক লাগানো পরিবেশনা প্রশংসা কুড়ায় মুহুর্মুহু হাত তালিতে। অনুষ্ঠানে এবার শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে মঞ্চনাটক চেরাগবিহীন খুদে আলাদিন পরিবেশনা প্রাণবন্ত করে তোলে মেলা প্রাঙ্গণ। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে রুপালি পর্দার স্বর্ণালি গান সংগীত পরিবেশনা মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন সকলে। এবারের মেলায় আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশের শিল্পী কিরণ চন্দ্র রায় ও চন্দনা মজুমদার। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় লোকসংগীত পরিবেশন করেন তারা। প্রবাস জীবনে ব্যস্ত সময়ের ফাঁকে আসা মানুষগুলো মেতে ওঠেন আড্ডা-খুনসুটিতে। চটপটি-ফুচকার সঙ্গে জিলাপি ঝালমুড়ির স্বাদ নেওয়ার পাশাপাশি উপভোগ করেছেন দেশীয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। মেলা সামগ্রী নিয়ে বসা বৈশাখী মেলার বিভিন্ন স্টলে ভিড় জমান মেলায় আগত দর্শকেরা। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। প্রতিবারের মতো এবারেও জমকালো আতশবাজির চোখধাঁধানো আয়োজনের মধ্য দিয়ে মেলার ইতি টানা হয়। দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সুবিশাল এ মেলার আয়োজন করে আসছে বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া। মেলায় প্রবাসী বাঙালিদের পাশাপাশি ভিন্ন জাতির মানুষের অংশগ্রহণও নজরে পড়ে। এ ছাড়া মেলায় রাজ্য ও ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, রাজনৈতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি ও বিরোধী দলীয় নেতার প্রতিনিধিসহ মেলায় আরও উপস্থিত ছিলেন নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের প্রিমিয়ার গ্ল্যাডিস বেরেজিক্লিয়ান। মেলার আয়োজক সংগঠনের সভাপতি শেখ শামীম মেলায় আগত সকলকেই ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। দেশীয় সংস্কৃতির লালন ও নতুন প্রজন্মের কাছে এ ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরার লক্ষ্যে ভবিষ্যতেও এ মেলার যথার্থ আয়োজন করা হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। সূত্র: প্রথম আলো আর/১৭:১৪/১৫ এপ্রিল
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2H0MvdG
April 15, 2018 at 11:40PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন