বার্লিন, ১৯ এপ্রিল- জার্মানিতে অবৈধ হয়ে পড়া ১ হাজার বাংলাদেশিকে দেশে ফিরতে হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশটির উদ্যোগে দুটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ৬৭ জনকে ঢাকায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ দুবছরের আলোচনায় জার্মানিসহ ইউরোপের দেশে দেশে থাকা অবৈধ বা অনিয়মিত বাংলাদেশিদের ফেরানোর বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে চুক্তি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস-এসওপি) সই হয়েছে। ওই চুক্তির আওতায় জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধরা দেশে ফিরছেন। গত সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইড লাইনে সই হওয়া এসওপি মতে, স্বেচ্ছায় ফিরতে আগ্রহীদের দেশগুলোর নিজস্ব খরচে ঢাকায় পৌঁছানো হচ্ছে। এসওপি মতে জার্মানিও দুটি ভাড়া করা বিমানে দুদফায় মোট ৬৭ জনকে ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। একই সঙ্গে আইওএম এর মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়ায় দেশটি সহায়তা করছে বলে জানান সরকারের প্রতিনিধিরা। তারা এ-ও বলেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের প্রায় ১ লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন, যারা দেশগুলোতে বৈধ হওয়ার জন্য দফায় দফায় চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়ায় তারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তাদের সবাইকে দেশে ফিরতে হবে। বাংলাদেশ সরকার চাপে পড়ে কিংবা নিজে থেকেই হোক এখন অবৈধ অভিবাসনকে নিরুৎসাহিত করছে জানিয়ে সরকারের এক প্রতিনিধি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা অনিয়মিত বাংলাদেশিদের ফেরাতে চায় সরকার। আর এতে বৈধ অভিবাসনের পথ উন্মুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, জার্মানি থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে অন্তত ৩ বছর আগে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশটির সরকার এ সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৬ সালের এক ঘোষণায় জার্মান সরকার এক লাখ অনিবন্ধিত অভিবাসীকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে উদ্যোগী হয়। সেই সময়ে জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থমাস ডি মেইজার বলেন, ২০১৫-তে জার্মানিতে রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসীর আগমন ঘটেছে। সেই বিবেচনায় তারা এ কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু যে পরিমাণ অবৈধ অভিবাসী জার্মানিতে রয়েছেন তার তুলনায় মাত্র ১ লাখকে বিতাড়ন, এটি মোটেও যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। জার্মান সরকারের কঠোর এ অবস্থানের ব্যাখ্যা করে ঢাকার এক কর্মকর্তা দাবি করেন- অবৈধদের ফেরানোর বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার বরাবরই ইতিবাচক। আর এ কারণে জার্মান সরকারের ঢাকার প্রতি ততটা কঠিন হয়নি। তারা বাংলাদেশ দূতাবাস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করে পর্যায়ক্রমে অবৈধ বাংলাদেশিদের দেশে ফেরাতে রাজি হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানে জার্মান সরকার সন্তুষ্ট এবং দেশটিতে বাংলাদেশিদের বৈধ অভিবাসনের পথ সহজ হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। ওই কর্মকর্তা জানান, বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে জার্মান সরকারের দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বৈঠকে দেশটিতে ৫০০ বাংলাদেশি থাকার কথা বলা হলেও সামপ্রতিক সময়ে বলা হচ্ছে সেই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। প্রায় ১০০০ জনের বৈধতা পাওয়ার আইনি লড়াইয়ের শেষ ধাপ অতিক্রান্ত হয়েছে জানিয়ে জার্মান সরকার বাংলাদেশকে আড়াইশ জনের একটি তালিকা দিয়েছে। এরমধ্যে থেকে ২০০ জনের ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হয়েছে। তাদের যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত নোট পাওয়ার পর বার্লিনের বাংলাদেশ দূতাবাস ১৮০ জনের ট্রাভেল পাস ইস্যু করেছেন। ওই তালিকার ৩৬ জন গত ডিসেম্বরে ফিরেছেন। আর দ্বিতীয় দফায় ৩১ জনকে গত ১১ই এপ্রিল ঢাকায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ৬৯ জনকে ফেরানোর কথা থাকলেও ৩৮ জন ফের আইনি লড়াইয়ের সূযোগ চাওয়ায় তাদের সেটি নিশ্চিত করতে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। উল্লেখ্য, ইউরোপ থেকে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরানোর বিষয়ে গেল বছরে এতটাই চাপে ছিল ঢাকা ইইউ রীতিমতো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে এ সংক্রান্ত আইনি কাঠামো স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস বা এসওপির সইয়ে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। ইউরোপের ২৮ রাষ্ট্রের জোট ইইউর তরফে সেই সময় বলা হয়েছিল ইউরোপের দেশগুলোতে থাকা আনডকুমেন্টেড বা অবৈধ অভিবাসীদের অবশ্যই ফিরিয়ে নিতে হবে। অন্যথায় সাধারণ নাগরিকদের ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর করা হবে। ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, ইইউর চাপে নয়, বাংলাদেশ তার জাতীয় স্বার্থেই বিশ্বের কোথাও আন-ডকুমেন্টেড বা বৈধ ডকুমেন্টবিহীন কোনো বাংলাদেশি থাকুক- এটা চায় না। এদের বৈধকরণের প্রচেষ্টা নতুবা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নাগরিকত্ব যাছাই করে ফেরত নিয়ে আসার বিষয়ে সরকার নীতিগতভাবে সম্মত। সূত্র: মানবজমিন আর/০৭:১৪/১৯ এপ্রিল
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2HzqFBr
April 19, 2018 at 02:10PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন