২০ বছর পর ফের বিয়ের আয়োজনে ব্যস্ত রায়নগর শিশু পরিবার
সুরমা টাইমস ডেস্কঃঃ আজ বিপাশার গায়েহলুদ। আগামীকাল শুক্রবার বিয়ে। নতুন এক ঠিকানায় যাচ্ছেন তিনি। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই দিনটিতে অন্য আর দশজন মেয়ের মতো মা-বাবা পাশে নেই বিপাশার। তবে রয়েছে আত্মার সম্পর্কের এক বিশাল পরিবার।
বলছি সেই বিপাশা আক্তারের কথা, ১০-১১ বছর বছর বয়সে যাঁর ঠাঁই হয়েছিল সিলেট সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত শিশু পরিবারে (সেফ হোম)। সে সময় নাম বিপাশা আর বাবার নাম জামাল, এতটুকুই কেবল বলতে পেরেছিলেন তিনি। গত সাত বছরেও মেলেনি তাঁর বাবা-মা কিংবা পরিবারের খোঁজ। সময়ের প্রবাহে শিশু পরিবারের বাসিন্দা হয়ে যান তিনি। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় এখানকার রীতি অনুযায়ী এখন বিয়ে ঠিক হয়েছে তাঁর।
সিলেটের রায়নগর এলাকায় শিশু পরিবার (সেফ হোম, বালিকা) প্রতিষ্ঠার পর প্রথম বিয়ের আয়োজন হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। প্রায় ২০ বছর পর আবার বিয়ের আয়োজনে ব্যস্ত হলো শিশু পরিবার। পুরো সেফ হোম যেন উৎসবে সেজেছে। বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রও ছাপা হয়েছে। সেগুলো শিশু পরিবারের কিছু শুভানুধ্যায়ীদের দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অতিথির তালিকায় আছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক, সিলেটের পুলিশ সুপার, মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তারা।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক নিবাশ রঞ্জন দাশ বলেন, ‘বিপাশার ভবিষ্যতের জন্য বিয়ের আয়োজনে পাওয়া উপহার থেকে সঞ্চয় করে রাখার পরিকল্পনা আছে। এ জন্য আমরা সমাজের বিত্তবানদেরও সহায়তা চাই।’
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গায়েহলুদ হবে। আগামীকাল শুক্রবার বিয়ের অনুষ্ঠান। বিপাশার হবু বর সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজনগরের আবদুল লতিফ (২৭)। পেশায় রংমিস্ত্রি। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট লতিফ। বড় ভাই বিয়ে করে আলাদা থাকেন। বড় দুই বোনের মধ্যে একজনের বিয়ে হয়েছে। অন্যজন উমানপ্রবাসী। পরিবারে সদস্য শুধু এখন মা আর লতিফ। এই পরিবারে নতুন সদস্য হয়ে যাচ্ছেন বিপাশা।
লতিফের মা মোসাম্মাত রাবেয়া বেগম বলেন, ‘সংসারে আমি এখন একা। ছেলেটা কাজের জন্য প্রায়ই বাড়ির বাইরে থাকে। এখন ছেলের বউ পেয়ে আমি খুশি। ছেলের বউ নয়, মেয়ের মতোই ভালোবাসব তাকে।’
রায়নগর শিশু পরিবারের তথ্য থেকে জানা যায়, দিরাই উপজেলার একটি গ্রাম থেকে নাম-পরিচয়হীন কিশোরীটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে আদালতের মাধ্যমে ২০১১ সালের ১১ই অক্টোবর সিলেট নগরের বাগবাড়ি শিশু পরিবারে (সেফ হোম, বালক-বালিকা) হস্তান্তর করা হয় তাঁকে। তখন তাঁর বয়স ১০ বছর ছিল বলে ধারণা করা হয়। পরে ২০১৪ সালের ২১শে আগস্ট থেকে তাঁর ঠিকানা হয় রায়নগরের সরকারি শিশু পরিবারে (বালিকা)। ২০১৪ সালে সরকারি নথিতে বিচারিক হাকিম বিপাশার বয়স ১৫ হিসেবে উল্লেখ করেন। ওই হিসেবেই জন্মনিবন্ধন হয় বিপাশার। দেওয়া হয় অক্ষরজ্ঞান ও ধর্মীয় শিক্ষা। ইউনিসেফের ছয় মাসব্যাপী কোর্স করে সেলাইয়ের কাজ শিখেছে তিনি।
শিশু পরিবারের রীতি অনুযায়ী, কোনো কিশোরীর বয়স ১৮ পার হলে শিশু পরিবারের মাধ্যমে বিয়ে দেওয়া হয়। বিপাশার বয়স ১৮ হওয়ার পর বিভিন্ন মাধ্যমে পাত্র খুঁজতে থাকেন এর পরিচালনায় থাকা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পরে সিলেট বাগবাড়ি শিশু পরিবারের এক কর্মচারীর মাধ্যমে আবদুল লতিফ আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিপাশার মায়ায় ভরা মুখখানা দেখে পছন্দ হয় লতিফের।
শিশু পরিবারে গিয়ে কথা হয় বিপাশার সঙ্গে। কিশোরী থেকে তরুণী—এত দিনের ঠিকানা তাঁর শিশু পরিবার। এই পরিবার ছেড়ে স্বামীর বাড়ি যেতে কষ্ট হলেও একটা ভালো লাগা রয়েছে। লাজুক কণ্ঠে বলেন, ‘নতুন জীবন, নতুন পরিবার পাচ্ছি। আনন্দ লাগছে। বড় বিষয় হলো ঠিকানা পেতে যাচ্ছি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন!’
from Sylhet News | সুরমা টাইমস https://ift.tt/2r1zXwC
April 26, 2018 at 10:26PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন