সুরমা টাইমস ডেস্কঃ বৃহস্পতিবার ইতালী প্রবাসী এক ছেলের সঙ্গে বিয়ের বিষয়ে পাকা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই মর্মান্তিক ভাবে বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে ফ্রিজের কমপ্রেসার বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে রাজনগরের শাহিনা। শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার সময় হৃদয়বিধারক এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভুজবল গ্রামে।
স্থানীয় লোকজন, মৌলভীবাজার ফায়ার সার্ভিস ও রাজনগর থানা পুলিশের তৎপরতায় আগুন নিভানো গেলেও বাঁচানো গেলনা মা মেয়েকে।
এদিকে আগুনে দগ্ধ হয়ে মা-বোন কে হারানো মুন্না আজিজের অবস্থা আশংকামুক্ত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্নার শয্যা পাশে থাকা মামা সারোওয়ার জাহান।
আগুনে দগ্ধ হয়ে মা-বোন মারা গেলেও বেচে যান মুন্না মিয়া। পরে থাকে আশংকাজনক অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে ঢামেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন মুন্না। সদ্য বাবা হারানো মুন্না এখনো জানেনা তার মা-বোন বেচে নেই। তিনি মুন্নার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া ছেয়েছেন। আগুনে দগ্ধ হয়ে মুন্নার মা-বোনের মৃত্যুতে মৌলভীবাজার জেলা জুড়ে চলছে শোকের মাতন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, কলাপসিবল গেটের সামনে দাঁড়িয়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিলেন শাহিনা। গেটের ফাঁক দিয়ে হাত বের করে লোকজনের হাতেও ধরেছিলেন। কিন্তু গেটের তালা ভেঙ্গে বের করার আগেই আগুনে পুড়ে মারা গেলেন কলেজ ছাত্রী শাহিনা আক্তার (২২)। কয়েকঘন্টা পর পুড়ে যাওয়া মা রুকেয়া বেগমও (৫৫) ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে। আর দগ্ধ ভাই মুন্না আজিজ (২০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পুড়ে যাওয়ার যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন।
মর্মান্তিক এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আকস্মিক এমন অগ্নিকান্ডে মা মেয়ের মৃত্যুতে মানুষের মাঝে আতঙ্ক ও ভয় ছেয়ে গেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পুলিশ ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাজনগর উপজেলার ভুজবল গ্রামের প্রবাসী ওয়াছির মিয়া গত একবছর আগে দেশে ফিরে এলে স্ট্রোক করে মারা যান। তার তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়েকে আগেই বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন।
এক ছেলে মুন্না আজিজ ও মেয়ে শাহিনা আক্তার ছিলেন বিয়ের বাকি। শাহিনা আক্তার মৌলভীবাজার মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। মুন্না মৌলভীবাজার সরকারী কলেজে বিবিএ প্রথম বর্ষে পড়ছেন। শাহিনা আক্তারকে তার ভাই মুন্না বৃধবার বিকালে নানার বাড়ি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলীলপুর ইউনিয়নের আলাপুর গ্রাম থেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে সকলেই ঘুমিয়ে পড়েন। এরপরেই ঘটে মর্মান্তিক এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা।
প্রত্যক্ষদর্শী রোকেয়া বেগমের প্রতিবেশি দেবর শামছুল হক (৫২) বলেন, গভীর রাতে বিস্ফোরনের শব্দ শুনে ঘর থেকে বের হন। বের হয়েই দেখতে পান রোকেয়া বেগম ও শাহিনা আক্তার কলাপসিবল গেটের সামনে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিলেন। তিনি সামনে যেতেই রোকেয়া বেগম ও শাহিনা আক্তার বাঁচানোর আকুতি জানান। এসময় তিনিও চিৎকার করতে থাকেন। বেরিয়ে আসেন আশেপাশের লোকজন।
কলাপসিবল গেট তালা দেয়া থাকায় দরজা খোলা যাচ্ছিল না। ঘরে আগুন জ¦লছিল দাউ দাউ করে। পাশের বাড়ির একজন শাবল নিয়ে আসেন। এর আগেই রোকেয়া বেগম ও শাহিনা আক্তারের গায়ে আগুন ধরে যায়। গেটের তালা ভাংতে ভাংতেই পুড়ে যান মা মেয়ে। তালা ভেঙ্গে যখন বের করা হয় তখন তারা সম্পূর্ণ পুড়ে গেছেন। ধরা যাচ্ছিল না।
শামছুল হক আরও বলেন, তার পরনে হাফ পেন্ট থাকায় লুঙ্গি খুলে তাদের কে ধরে ঘর থেকে বের করেন। এসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শাহিনা আক্তার। এদিকে ভাই মুন্না আজিজ ঘরের পূর্ব পাশের বাথরুমে ঢুকে পানি ঢালতে থাকেন। এরপরও তার পিঠ ও বাঁ পাশ পুড়ে গেছে। তাকেও বের করে নিয়ে আসেন। এরই মাঝে খবর পেয়ে রাজনগর থানার পুলিশ ও মৌলভীবাজার ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।
পরে এম্বুলেন্স আসার পর মুন্না আজিজ ও মা রোকেয়া বেগমকে সিলেট ওসমানী মেডকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ঢাকা নেয়ার পথে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল এলাকায় রোকেয়া বেগম মারা যান। পরে তাকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যার হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসা হয় এবং মুন্না আজিজকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। ভোরে শাহিনা আক্তারের লাশ রাজনগর থানা পুলিশ মৌলভীবাজার মর্গে পাঠিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে মা মেয়ের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। রোকেয়া বেগমের ভাই দুবাই থেকে দেশে আসার পর আজ (শুক্রবার) লাশ দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন রোকেয়া বেগমের ভাই।
রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, ফ্রিজের পাশে বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে কমপ্রেসার বিস্ফুরণ ঘটে। এতে ঘরে আগুন লেগে যায়। সে আগুনে দগ্ধ হয়ে শাহিনা আক্তার ঘটনাস্থলে ও মা রোকেয়া বেগম ঢাকা নেয়ার পথে মারা যান। উভয়ের লাশের ময়না তদন্ত শেষ হয়েছে। থানায় অপমৃত্যু মামলার প্রস্তুতি চলছে।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস https://ift.tt/2vNnthe
April 27, 2018 at 11:29AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন