নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেট নগরীর পূর্ব বন্দরবাজারের সন্ধ্যাবাজারের দ্বিতীয়তলায় অসামাজিক কার্যকলাপের ‘নিষিদ্ধ পল্লী হোটেল ব্যাচেলরে’ অভিযান চালিয়ে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সোমবার দুপুরে সেই নিষিদ্ধ পল্লী ভেঙে দিয়েছেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সিটি কর্পোরেশনের কয়েকজন কাউন্সিলর ও র্যাব-পুলিশের একটি টিম নিয়ে সেখানে হানা দেন মেয়র আরিফ। অভিযানকালে দেখাগেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে আড়াল করতে সেখানে নেয়া হয়েছিল অভিনব ব্যবস্থা। অভিনব ব্যবস্থাতেই দিনের পর দিন, বছরের পর পর এখানে চলে এসেছে অনৈতিক কর্মকান্ড, জুয়ার আসর, মাদকের আসর।
সোমবার দুপুরে সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন সন্ধ্যাবাজার মার্কেট দ্বিতীয়তলা পরিদর্শনে গিয়ে এই ‘নিষিদ্ধ পল্লী হোটেল ব্যাচেলরের’ সন্ধান পান মেয়র। তাৎক্ষণিক তিনি পুলিশ ডেকে অভিযান চালিয়ে ওই ‘ব্যাচেলর হোটেল’ নামের ওই ‘পাপরাজ্জি’ থেকে ৬ কিশোরী ও হোটেলের দুই কর্মচারীকে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে আবদুস শহীদ নামের এক কর্মচারী অভিযানকালে উপস্থিত সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে জানিয়েছে ওই ‘নিষিদ্ধ পল্লীর’ মালিক নগরীর মেন্দিবাগের আলাউদ্দিন আলো।
মেয়রসহ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি টের পেয়ে ওই হোটেলে থাকা ৬ নারী সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে নিচের একটি রুমে আত্মগোপন করেন। পরে সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা ওই রুম থেকে তাদেরকে বের করে আনেন। এছাড়া হোটেলের দুই কর্মচারীকেও আটকে রাখেন তারা। আর অন্যরা কাষ্টঘর এলাকার দিকে মুখ করে থাকা পৃথক আরেকটি সিড়ি দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
সুড়ঙ্গটি হোটেলের কয়েকটি কক্ষের একটি এক কোণে। লেপ-তোষক দিয়ে সবসময় ঢেকে রাখা হতো এটির মুখ। ছাদ কেটে মই দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল নিচে নামার রাস্তা। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী আসলেই সুড়ঙ্গের মুখে লেপ-তোষক সরিয়ে সেখানে অনৈতিক কাজে নিয়োজিত কিশোরী-নারীরা খুব সহজেই নিচের কক্ষগুলোতে লুকিয়ে যেতেন। পুলিশ এসে হোটেলের কক্ষগুলোতে কাউকে না পেয়ে নিস্ফল হয়েই ফিরে যেতো। পুলিশ চলে গেলে তারা আবার অনৈতিক কাজে নিয়োজিত হতেন। সোমবারের অভিযানে খোলাসা হলো সুড়ঙ্গ রহস্য।
পুলিশ সদস্যরা হোটেলের দুই কর্মচারী ও ৬ কিশোরীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এসময় হোটেলের ১৬টি কক্ষ থেকে জুয়া ও মাদক সামগ্রীও উদ্ধার করা হয়। সুড়ঙ্গের নিচে নেমে দেখা গেছে সেখানে আরোও ৩/৪টি কক্ষ রয়েছে। সেগুলোতে তীর শিলং নামক জুয়া খেলার বিভিন্ন উপকরণ পাওয়া গেছে। পুলিশ এগুলো উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছে। পাওয়া গেছে বিভিন্ন রকম বিদেশী মদের খালি বোতল, ফেনসিডিলের বোতল, হিরোইন সেবনের আলামতও সুড়ঙ্গের নিচের কক্ষগুলোতে পাওয়া গেছে।
অভিযানকালে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে হোটেলের কর্মচারী আবদুস শহীদ জানায়, মেন্দিবাগের আলাউদ্দিন আলো ওই হোটেলের মালিক। হোটেলটির তত্তাবধান করেন মালেক নামের এক ব্যক্তি। অভিযান টের পেয়ে মালেক হোটেল থেকে পালিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে আলাউদ্দিন আলো বলেন, ‘ব্যাচেলর হোটেল’র সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। সন্ধ্যাবাজার ব্যবসায়ী সমিতি সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ওই হোটেল পরিচালনা করে বলে দাবি করেন তিনি।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার ফয়সল মাহমুদ জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হোটেলের ভেতরে সুড়ঙ্গ তৈরী করে এরকম অসামজিক কার্যকলাপের পেছনের মদতদাতাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, পৌরবিপণী মার্কেট এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। এরমধ্যে দ্বিতীয়তলায় নির্মিত ঘরগুলোও অবৈধ। দীর্ঘদিন ধরে এসব অবৈধ ঘরের ভেতর অসামাজিক কার্যকলাপ চলে আসছে বলে স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছেন। তাই অবৈধ এই স্থাপনা সিটি করপোরেশন গুড়িয়ে দেয়ার কাজ শুরু করেছে। তাৎক্ষনিক অবৈধ স্থাপনাগুলো ভাঙ্গা শুরু করা হয়।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস https://ift.tt/2GPnzZW
April 03, 2018 at 03:44AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন