সুরমা টাইমস ডেস্ক:: পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেল গত শুক্রবার গোপালগঞ্জ গিয়েছিলেন চিত্রনায়ক বাপ্পী চৌধুরী। যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। আহত হয়ে বর্তমানে রয়েছেন বিশ্রামে। আহত অবস্থায় তাকে রাজনীতিবিদ শেখ ফজলুর রহমান মারুফ উদ্ধার করে প্রথমে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নিয়ে যান নিজের বাসায়।
সেখানেই দুদিন চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সামলে উঠেছেন বাপ্পী। আজ রোববার (১লা এপ্রিল) ফিরেছেন ঢাকায় নিজের বাসায়। আজ দুপুরে আলাপকালে বাপ্পী জানালেন সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন, ‘বেঁচে আছি এটাই বিশ্বাস হচ্ছিলো না। একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম। মৃত্যু যেন বুকে টেনে আবার ফিরিয়ে দিয়ে গেল। মায়ের দোয়া, মানুষের ভালোবাসার জন্যই ঈশ্বর আমাকে এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দিয়েছেন। আর শেখ ফজলুর রহমান মারুফ ভাইয়ের কথা না বললেই নয়। তিনি আমাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। হাসপাতালে আমাকে দেখতে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকলে তিনি আমাকে নিজের বাসায় নিয়ে যান। সেখানেই দুদিন আমার চিকিৎসা চলেছে। আস্তে আস্তে সেখানেও লোকের ভিড় বাড়তে থাকায় আজ ঢাকায় ফিরে এলাম। আমি চিরকাল শেখ মারুফ ভাইয়ের কাছে ঋণী হয়ে থাকবো।’
বাপ্পী দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা ১০-১২টি গাড়ির বহর নিয়ে যাচ্ছিলাম। সামনে পেছনে পুলিশও ছিলো। হঠাৎ একটি মোটরবাইক গিয়ে ধাক্কা মারে শেখ ফজলুর রহমান মারুফ ভাইয়ের গাড়িতে। বাইকটি তখনই রাস্তায় পড়ে যায়। আর সেই মুহূর্তে আমার গাড়িটির সামনে চলে আসে। ফাঁকা রাস্তা ছিলো বলে আমাদের প্রত্যেকেরই গাড়ির অনেক গতি ছিলো। প্রায় ৮০-১০০ মাইল বেগে চলছিলো আমার গাড়িটিও। আমি দেখছিলাম যে আমার গাড়িটি মোটরবাইকটির উপরে উঠে যাচ্ছে। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করলাম যাতে লোকটি চাপা পড়ে মারা না যায়। গাড়িটি রাস্তার পাশে ঘুরিয়ে নিলাম। তারপর আর মনে নেই। কেবল দেখলাম কিছু গাছ আর বিদ্যুতের একটি খাম্বার ভেতর দিয়ে গাড়ি নেমে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাথায় প্রচণ্ড আঘাত অনুভব করলাম। আমার মনে হচ্ছিলো কয়েক যুগ কেটে গেল। কিন্তু দুই তিন মিনিট পরই নিজেকে ফিরে পেলাম। গাড়ি থেকে নামলাম। দেখি সবাই ছুটে আসছে আমার দিকে। আমি ঠিক আছি কী না জিজ্ঞেস করছে। ঠিক আছি বলে দেখছিলাম মোটরবাইকের মালিককে আটক করেছে আমাদের লোকজন। আমি তার কোনো দোষ নেই বলতে বলতে পড়ে যাচ্ছিলাম। শেখ ফজলুর রহমান মারুফ ভাইয়ের চিৎকারে তার বডিগার্ডরা আমাকে এসে কোলে তুলে নিয়ে তার গাড়িতে উঠিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমি কোনোদিন এই ঘটনা ভুলবো না। মৃত্যুকে এত কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা কোনোদিন ভুলতে পারবোও না। এখনো ঘটনার কথা ভাবলে শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠে।’
বাপ্পী আরও বলেন, ‘এই সফরটা জীবনের স্মরণীয় সফর হয়ে থাকবে। মৃত্যুর মুখে পড়ার অভিজ্ঞতার পাশাপাশি সফরের প্রাপ্তিও কম নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মভিটা, তার বাড়িঘর ও সমাধিস্থল দেখার উচ্ছ্বাস নিয়ে গিয়েছিলাম। অসুস্থ শরীর নিয়েই গতকাল সেগুলো দেখেছি। অন্যরকম এক অনুভূতি নিজের ভেতর কাজ করেছে। আহত অবস্থায় শেখ মারুফ ভাইয়ের রুমে শুয়ে থেকে কেবল ভেবেছি পাশের ঘরটাতেই বঙ্গবন্ধু জন্মেছিলেন, এখানেই তিনি বেড়ে উঠেছেন বাবা-মা আর ভাইবোনদের নিয়ে। এখানেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সময় কাটে। টুঙ্গিপাড়া এলে যে বাড়িটিতে প্রধানমন্ত্রী থাকেন সেটিও ঘুরে ফিরে দেখলাম। বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থলে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম। সেইসঙ্গে জানা হয়েছে, শেখ পরিবারের আতিথেয়তার কথাও। বিশেষ করে শেখ মারুফ ভাইয়ের আতিথেয়তা ভুলবার নয়। তিনি দারুণ একজন মানুষ। ব্যস্ত একজন রাজনীতিবিদ হওয়া সত্বেও আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির খোঁজ খবর রাখেন। অনেক সিনেমার প্রশংসাও করলেন তিনি। খুব সহজেই মানুষকে আপন করে নিতে জানেন। এইসব গুণ যেন বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সবার মধ্যে জন্মগতই।’
বাপ্পী জানালেন, আরও দুই একটা দিন বিশ্রামে থাকতে হবে। মেজর কোনো আঘাত না পেলেও মাথাসহ শরীরের নানা স্থানে ব্যথা রয়েছে। সুস্থ হয়েই তিনি শুটিংয়ে ফিরবেন।
এদিকে বাপ্পী অভিনীত ‘পলকে পলকে তোমাকে চাই’ সিনেমাটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে চলতি এপ্রিলেই। এই ছবিতে বাপ্পীর বিপরীতে দীর্ঘ বিরতির পর পর্দায় ফিরছেন মাহিয়া মাহি। ছবিটির নির্মাতা শাহনেওয়াজ সানু।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস https://ift.tt/2pTNUwm
April 01, 2018 at 05:46PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন