ঢাকা, ২৪ মে- রোহিঙ্গা শিশুরা একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দাবিদার। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্বকে ভাবার আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত এবং ভারতীয় অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। বৃহস্পতিবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে চারদিনের সফর শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইউনিসেফের সহায়তায় বাংলাদেশে আসা আমার জন্য একটি লাইফ চেঞ্জিং ট্রিপ। ইউনিসেফের সঙ্গে আমার যাত্রা অনেক পুরনো। আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীর প্রতিটি শিশুরই একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রাপ্য। যাতে তারা মানবতার যাত্রায় কন্ট্রিবিউট করতে পারে। আমি চারদিন ছিলাম কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। ক্যাম্প পরিদর্শন করা আমার জন্য নতুন কিছু না। আমি এর আগেও বিশ্বের অনেক শরণার্থী ক্যাম্পে গিয়েছি। আমি সেখান থেকে অনেক গল্প আপনাদের বলতে পারবো। আমি আজকে সাত বছর বয়সী মনসুর আলীর গল্প বলতে চাই। আমি তাকে ক্যাম্পে ছবি আঁকতে দেখেছি। সে এখন প্রকৃতির ছবি আঁকে, বাংলাদেশের ছবি আঁকে। তাতে নানা রঙ দেয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এরকম একটি পরিস্থিতির মধ্যেও সে ছবি আঁকছে। আমাকে তা অভিভূত করেছে। আমি তার আরও কিছু আঁকা দেখেছি। আমি বলতে চাই প্রতিটি শিশুর প্রতি বিশ্বের একটি দায়িত্ব আছে। আমাদের ভবিষ্যৎ কিন্তু আমরা তাদের চোখ দিয়েই দেখি। একটি বিষয়ে আমার কাছে খারাপ লাগে এই ভেবে যে এই নিষ্পাপ শিশুদের কী দোষ যে তারা এমন আচরণের শিকার হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনেক সমস্যা আছে। এগুলো কমানোর জন্য দিন রাত ইউনিসেফ কাজ করছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি আশ্রয়, কেননা বৃষ্টির দিন অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছে। তাদের নিরাপদ পানি দরকার যাতে ডায়রিয়া কিংবা কলেরার মতো রোগ না ছড়ায়। তারা যেন অপুষ্টিতে না ভোগে সেজন্য পুষ্টিকর খাবারেরও প্রয়োজন আছে। আপনাদেরকে বলছি মনটা আরও প্রসারিত করুন এই শিশুদের প্রতি। আমি আজকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছি। বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছি এরকম একটি পরিস্থিতিতে মানবিক দিক বিবেচনা করে দরজা খুলে দেওয়ার জন্য। তিনি আমাকে উপহার দিয়েছেন। তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর লেখা বই। ছয় মাস আগেও ইউনিসেফের প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা শিবিরগুলো পরিদর্শন করার সময় শিশুদের ছবি আঁকতে বললে তারা রকেট, বোমা, বন্দুক, গুলি এগুলোর ছবি এঁকেছে। এখন তারা বাংলাদেশে এসে কিছু বেসিক বিষয় যেমন অংক, ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষা পাচ্ছে। এই শিক্ষা থেকেই তাদের ছবি আঁকার বিষয় পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন শিবিরের রোহিঙ্গা শিশুরা সূর্যের ছবি আঁকে, নদীর ছবি আঁকে। ছয় মাসের মধ্যে তাদের মানসিকতা বদলে গেছে, কেউ কি বিশ্বাস করবে? আপনি পৃথিবীর যেখানেই থাকুন না কেন এদের বিষয়ে আপনাকে ভাবতে হবে। এরাই এই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশের মানুষ আমাকে অনেক ভালবাসা দিয়েছে। আমি চাই তারা এই শিশুদেরকেও ভালবাসুক। ইউনিসেফ শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে খুব ভালো কাজ করছে। এজন্য আমি তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে কথা বলার কোন ইচ্ছে আছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বলেন, আমি শিশুদের তরফ থেকে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছি। রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলার জন্য আমি খুবই অল্প বয়সী। আমাদের তার থেকে বেশি জরুরি এই শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করা। বাংলাদেশে আসার আগে নিরাপত্তাজনিত কোনও কারণ বিবেচনায় ছিল কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশে এসে ক্যাম্পে কোনও অপ্রীতিকর অবস্থার সম্মুখীন হইনি। আর আমি কোনও কিছু নিয়েই ভয় করি না। বাংলাদেশের মানুষ অনেক ভালবাসতে জানে। আমি তাদের কাছ থেকে অনেক ভালবাসা পেয়েছি। এসময় ইউনিসেফ বাংলাদেশের অফিসার ইন চার্জ সীমা সেন গুপ্ত এবং ইউনিসেফের প্রধান কমিউনিকেশন অফিসার জন জেকিস সিমন উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন আর/১০:১৪/২৪ মে
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2GPIMib
May 25, 2018 at 06:09AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন