ঢাকা, ০২ মে- বিয়ে, সংসার ও সন্তানএসব বিষয়ে দেশে দেশে নায়ক-নায়িকারা লুকোচুরির আশ্রয় নেন। প্রেমের ব্যাপারে থাকে অনেক গোপনীয়তা, অনেক ক্ষেত্রে বিয়ের ব্যাপারে তাঁরা মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন। বেশির ভাগেরই ধারণা, বিয়ের পর দর্শকের কাছে চাহিদা কমে যাবে, এমনটা ভেবে তো সন্তানের বিষয়টিও অনেকে লুকিয়ে রাখেন। এ তালিকায় ঢালিউডে সর্বশেষ যাঁদের নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত, তাঁরা হলেন অপু বিশ্বাস ও শাকিব খান। সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। একমাত্র মেয়ে সায়রাকে নিয়ে ছবির মহরতে হাজির হয়ে সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন বাঁধন। ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী মিলনায়তনে গত সোমবার সন্ধ্যায় তেমনটাই দেখা গেল। চলচ্চিত্রে নতুন করে নায়িকা হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার দিনে বাঁধনকে দেখা গেল একমাত্র কন্যা সায়রাকে নিয়ে হাজির হতে। ঢালিউডে এমন কয়েকজন মা আছেন, যাঁরা এখনো নায়িকা হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তেমন কয়েকজনকে নিয়ে আমাদের এই আয়োজন। বাঁধন বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে নায়িকার খাতায় নতুন করে নাম লেখালেন বাঁধন। জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত এই ছবির নাম দহন। ১৫ মে থেকে শুটিং শুরু হবে। এই ছবির অন্য দুজন নায়ক-নায়িকা সিয়াম ও পূজা। সোমবার ঢাকার একটি ক্লাবে ছবির পরিচিতি অনুষ্ঠানে নায়িকা হিসেবে বাঁধনকে সবার সামনে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। আনুষ্ঠানিক পরিচিতি পর্বের আগে ছবিতে নিজের অভিনয়ের ব্যাপারে কারও কাছে মুখ খোলেননি। তবে নিজের মতো করে নায়িকা হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। ছয় মাসে ১৬ কেজি ওজন কমিয়েছেন। শুধু কি তা-ই, ছবিতে নিজের চরিত্র ফুটিয়ে তোলার জন্য বাইক চালানো শিখেছেন। সাত বছর বয়সী বাঁধনের মেয়ে মিশেল আমানি সায়রা এখন ঢাকার একটি স্কুলে কেজি ওয়ানে পড়ছে। নিপুণ ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্রে কাজ করছেন চিত্রনায়িকা নিপুণ। রাশিয়ায় অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়া শেষ করে বাংলাদেশে ফিরে নায়িকার খাতায় নাম লেখান। প্রথম ছবির নাম রত্নগর্ভা মা, যা এখনো মুক্তি পায়নি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেত্রীর সম্মাননা অর্জন করেন তৃতীয় ছবি সাজঘর-এ অভিনয় করে। ২০০৬ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেন মান্না। এর ঠিক দুই বছর পর চাঁদের মতো বউ ছবিতে অভিনয় করে দ্বিতীয়বারের মতো পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেত্রীর সম্মাননা অর্জন করেন নিপুণ। সেই থেকে টানা ছবিতে অভিনয় করছেন এই নায়িকা। দীর্ঘ অভিনয়জীবনে সহশিল্পী হিসেবে পেয়েছেন মান্না, শাকিব খান, রিয়াজ, ফেরদৌস, রুবেল, বাপ্পারাজ, আমিন খান, সম্রাট ও কাজী মারুফের মতো নায়কদের। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি টেলিভিশন নাটক এবং বিজ্ঞাপনচিত্রে নিয়মিত কাজ করছেন নিপুণ। এই নায়িকার মুক্তিপ্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র ধূসর কুয়াশা। ছবিটি এরই মধ্যে সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে। নিপুণের একমাত্র মেয়ে তানিশা ঢাকার আইএসডি স্কুলে পড়ছে। অপু বিশ্বাস নিজের বিয়ের খবর কয়েক বছর গোপন রাখলেও সন্তান জন্মের সাত মাসের মাথায় টেলিভিশন চ্যানেলে হাজির হন অপু বিশ্বাস। তাঁর দাবি, ক্যারিয়ারের কথা ভেবে তিনি এমনটা করেছিলেন। প্রখ্যাত নির্মাতা আমজাদ হোসেনের কাল সকালে ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক হয় অপুর। ২০০৬ সালে এফ আই মানিক পরিচালিত কোটি টাকার কাবিন ছবিতে প্রধান নায়িকা হয়ে অভিনয় করেন এ সময়ের জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খানের বিপরীতে। টানা ১১ বছর জুটি হয়ে অভিনয় করেন তাঁরা। এই জুটির মোট ছবির সংখ্যা ৭২। ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে অপু ও শাকিব প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। এরপর তাঁরা বিয়ের কাজটিও সেরে নেন। ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল শাকিবের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। ভারতের কলকাতার একটি হাসপাতালে ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তাঁদের ছেলের জন্ম হয়। কিন্তু বিয়ে আর সন্তানের বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসায় শাকিব ও অপুর সম্পর্কে ভাঙন সৃষ্টি হয়। একসময় আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে বিয়ের ইতি টানেন অপু ও শাকিব। বিচ্ছেদের পর অপু তাঁর মতো ছবিতে অভিনয়ে ব্যস্ত হওয়ার চেষ্টায় আছেন। চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ ২, ওপারে চন্দ্রাবতী এবং কানাগলি ছবিতে। ছবিগুলোতে কাজ শুরু করার অপেক্ষায় আছেন বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এই নায়িকা। পূর্ণিমা চলচ্চিত্র জগতে পূর্ণিমার পথচলা শুরু হয় এ জীবন তোমার আমার ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে। জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত এই ছবিতে পূর্ণিমার নায়ক ছিলেন রিয়াজ। ২০০৩ সালে মতিউর রহমান পানু পরিচালিত মনের মাঝে তুমি ছবিটি পূর্ণিমাকে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা এনে দেয়। এরপর শুধুই এগিয়ে চলা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অনেকগুলো ব্যবসাসফল ছবির অংশীদার হয়ে যান এই নায়িকা। চট্টগ্রামের মেয়ে পূর্ণিমা চলচ্চিত্রে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর সম্মাননা অর্জন করেন। কাজী হায়াৎ পরিচালিত ওরা আমাকে ভালো হতে দিল না চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ২০১০ সালে এই সম্মাননা পান। পূর্ণিমা অভিনীত প্রশংসিত ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে লাল দরিয়া, শাস্তি, মেঘের পরে মেঘ, সুভা, হৃদয়ের কথা আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা, শুভ বিবাহ, আমার স্বপ্ন আমার সংসার। চলচ্চিত্রের অভিনয়ের এক ফাঁকে ২০০৭ সালে হঠাৎ করেই বিয়ের ঘোষণা দেন পূর্ণিমা। পারিবারিকভাবে আহমেদ জামাল ফাহাদকে বিয়ে করেন এই নায়িকা। ২০১৪ সালের এপ্রিলে কন্যাসন্তানের মা হন। একমাত্র মেয়ে আরশিয়ার জন্য একটা সময় অভিনয় কমিয়ে দেন। চলচ্চিত্রে অভিনয় না করলেও পূর্ণিমা নাটক আর বিজ্ঞাপনচিত্রে ঠিকই কাজ করছেন। তবে বছর দু-এক ধরে পূর্ণিমার উজ্জ্বল উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে স্টেজ শোতে। উপস্থাপক হিসেবে তিনি মাতিয়ে চলছেন। এর মধ্যে অনেক পরিচালক ঢালিউডের মেধাবী এই নায়িকাকে নিয়ে নতুন করে চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্ন দেখছেন। আর পূর্ণিমা অপেক্ষায় আছেন ভালো গল্প ও চরিত্রের সন্ধানে। ব্যাটে-বলে মিলে গেলে হয়তো আবারও বড় পর্দা মাতাতে আসবেন এই নায়িকা। মৌসুমী নব্বইয়ের দশকে কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবিতে ঢালিউডে অভিষিক্ত হয় মৌসুমীর। ১৯৯৩ সালের মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে মৌসুমীর নায়ক ছিলেন সালমান শাহ। ২৫ বছর ধরে মৌসুমী এখনো নায়িকা হয়ে লড়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ অভিনয়জীবনে দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করে গেছেন তিনি। চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরুর তিন বছরের মাথায় বিয়ের কাজ সেরে নেন মৌসুমী। সেই সময়ের আরেক দাপুটে নায়ক ওমর সানীকে প্রেম করে বিয়ে করেন তিনি। তাঁর সংসারে ফারদীন নামের একজন ছেলে আর ফাইজা নামের এক মেয়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি ছেলে ফারদীন শুরুর দিকে নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এখন রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করেছেন। মেয়ে স্কুলে ঢাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ক্লাস সিক্সে পড়ছে। চলচ্চিত্রে শুধু অভিনয় নয়, অভিনয়ের একপর্যায়ে এসে চলচ্চিত্র পরিচালনা ও প্রযোজনা করেছেন মৌসুমী। মম লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় ২০০৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হন জাকিয়া বারী মম। এরপর থেকে নাটকে নিয়মিত অভিনয় করছেন। একই সঙ্গে গল্প পছন্দ হলে ছবিতেও অভিনয় করছেন। তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা দারুচিনি দ্বীপ। ছবিটি পরিচালনা করেন তৌকীর আহমেদ। প্রথম ছবিতে অভিনয় করে বাজিমাত করেন মম। ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর সম্মাননা পান। নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাঁচ বছরের মাথায় ২০১০ সালের মার্চে নির্মাতা এজাজ মুন্নাকে ভালোবেসে বিয়ে করেন মম। ২০১১ সালে তাঁদের একমাত্র ছেলে উদ্ভাসের জন্ম হয়। প্রথম ছবি মুক্তির কয়েক বছর বিরতির পর মমকে আবার চলচ্চিত্রে দেখা যায়। ছবির নাম প্রেম করব তোমার সাথে। ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে মম অভিনয় করেন আনিসুর রহমান মিলনের বিপরীতে। দ্বিতীয় ছবিটি খুব একটা আলোচিত না হলেও অভিনয়জীবনের তিন নম্বর ছবিতে আবারও বাজিমাত করেন মম। ছুঁয়ে দিলে মন নামের এই ছবি দিয়ে মম দেশে ও দেশের বাইরের দর্শকদের মন ছুঁয়ে যান। কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছে এই অভিনেত্রীর নতুন ছবি আলতা বানু। কাজ শেষ হয়ে আছে স্বপ্নবাড়ি নামের আরেকটি ছবির। কাজ শুরুর অপেক্ষায় আছেন মনফড়িং ছবির। সূত্র : প্রথম আলো আর/১৭:১৪/০২ মে



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2I3oAy2
May 03, 2018 at 12:42AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top