আসাম, ০৯ মে- আসামে আর মাস দেড়েকের মধ্যেই চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা প্রকাশিত হওয়ার কথা। আর ওই তালিকা থেকে বেশ কয়েক লাখ মানুষ বাদ পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই আবার বাঙালি মুসলিম। খবর বিবিসি বাংলার। আসাম এদের অবৈধ বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করলেও বাংলাদেশ তাদের নিতে প্রস্তুত নয়। আর ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে কোনো প্রত্যাবাসন চুক্তিও নেই। ফলে এই লাখ লাখ তথাকথিত অবৈধ বিদেশিকে নিয়ে কী করা হবে, তা নিয়ে দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর গেলো সপ্তাহেই আলোচনা হয়েছে। ওই বৈঠকে একাধিক মুখ্যমন্ত্রী লাখ লাখ অবৈধ বাংলাদেশিদের বৈধভাবে কাজের সুবিধা করে দেয়ার জন্য প্রস্তাব করেছেন। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা জানিয়েছেন, সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকে দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। তিনি বলেন, এই ইস্যুটা অ্যাড্রেস করার জন্য একটা মেকানিজম লাগবেই- ফলে আমরা কেউ ইনার লাইন পারমিট, কেউ ওয়ার্ক পারমিটের কথা বলেছি। অবশ্য প্রতিটা প্রস্তাবেরই নানা সুবিধা-অসুবিধা আছে, কিন্তু এটা যে উপেক্ষা করা যাবে না তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এমনকি বিষয়টা মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা দরকার বলেও মনে করেন তিনি। সাংমা বলেন, ওই অঞ্চলের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থেই প্রয়োজনে নিয়মকানুনের কিছু পরিবর্তন করেও এই বিপুল সংখ্যক লোককে ওয়ার্ক পারমিট বা ওই জাতীয় কিছু দেয়ার কথা ভাবা যেতে পারে। তথাকথিত অবৈধ বাংলাদেশিদের ওয়ার্ক পারমিট দেয়ার প্রস্তাব করেছেন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোর্ডের সাবেক সদস্য ও বিএসএফের প্রাক্তন মহাপরিচালক প্রকাশ সিংও মনে করছেন, ওয়ার্ক পারমিট হলো দুটো চরম রাস্তার মধ্যে একটা মাঝামাঝি সমাধান। তিনি বলেন, একটা রাস্তা হলো এই লোকগুলোকে ছুঁড়ে ফেলা, যা অবশ্যই নিষ্ঠুর ও মানবাধিকারের দৃষ্টিতে আপত্তিজনক। আর একটা রাস্তা হলো ঠিক আছে তোমরা বিদেশি, থাকছো থাকো, আমরা কিছুই করলাম না, যেটা দেশের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপস করা। প্রকাশ সিং আরও বলেন, কিন্তু এই দুটোর মাঝে একটা মধ্যপন্থা হতে পারে বিদেশি হিসেবে এদেশে দুবছর বা তিন বছর ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ করো, থাক আর মেয়াদ ফুরালে ফিরে যাও! কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তারা কোথায় যাবেন? আসামের সিভিল সোসাইটি অ্যাক্টিভিস্ট ও অর্থনীতিবিদ জয়দীপ বিশ্বাস এই কারণেই বলছেন প্রস্তাবটা গ্রহণযোগ্য নয়। অধ্যাপক বিশ্বাস বলছিলেন, প্রস্তাবটা পুরনো। এক সময় প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীও এই ওয়ার্ক পারমিট দেয়ার কথা বলেছিলেন। এমনিতে মাইগ্র্যান্ট (অভিবাসী) ওয়ার্কারদের জন্য সারা বিশ্বেই ওয়ার্ক পারমিট স্বীকৃত একটি পন্থা- কিন্তু আসামের ব্যাপারটা একেবারেই স্বতন্ত্র! তিনি বলেন, সাতচল্লিশ বছর ধরেও যিনি এ রাজ্যে আছেন, যার নাম ভোটার তালিকাতেও আছে, আমি রাতারাতি তার নাগরিকত্বের দাবি খারিজ করে দিয়ে হাতে একটা ওয়ার্ক পারমিট ধরিয়ে দিলাম। এটা তো সম্পূর্ণ বেআইনি! বিশ্বাস আরও বলেন, ধরা যাক নাগরিক তালিকা থেকে পাঁচ লাখ মানুষ বাদ পড়লেন। এখন এই পাঁচ লাখ মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হলে তারা কিন্তু রাষ্ট্রহীন নাগরিকেও পরিণত হবেন। বিশ্বের একটি অন্যতম বৃহৎ ও দায়িত্বশীল গণতন্ত্র হিসেবে ভারত কিছুতেই এতোগুলো লোককে রাষ্ট্রহীন বানাতে পারে না ... সেটা অন্যায়, অনৈতিক ও অবৈধ। আসামের গৌহাটিতে নতুন নাগরিক তালিকার খসড়ায় নিজের নাম খুঁজে দেখছেন একজন মুসলিম আসামে মুসলিমদের দল হিসেবে পরিচিত এআইইউডিএফের কার্যকরী সভাপতি ড. আদিত্য লাংথাসা অবশ্য বিষয়টাকে একটু ভিন্ন চোখে দেখছেন। তিনি বলেন, ওয়ার্ক পারমিট তো একটা সমাধান হতেই পারে। কারণ আমেরিকা-ইউরোপের পশ্চিমা দেশগুলোও তো একই জিনিস করে। আর যারা বিদেশি তারা বিদেশি, তাদের নাগরিকত্ব দেয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসে না! ড. লাংথাসা আরও বলছেন, এখানে তো বিদেশিদেরও এখন ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা মনে করি, হিন্দু-খ্রিস্টান-মুসলিম সব ধর্মের বিদেশিরাই বিদেশি, তাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার কোনো অধিকার নেই। আপনি বলুন তো আমেরিকা-ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়া কোন দেশে এভাবে বিদেশিদের নাগরিকত্ব দেবে? হ্যাঁ, ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে আপনি বড়জোর কাজ করতে পারবেন, সেটুকুই যথেষ্ট। কিন্তু এক্ষেত্রে এই ওয়ার্ক পারমিট তাদের না দেবে ভারতের, না দেবে বাংলাদেশের নাগরিক অধিকার। ফলে ওয়ার্ক পারমিটের প্রস্তাব গৃহীত হলে আসামের কয়েক লাখ তথাকথিত বিদেশি হয়তো কিছু সময়ের জন্য ভারতে কাজ করার সুযোগ পাবেন কিন্তু একইসঙ্গে তাদের ওপর পাকাপাকিভাবে পড়ে যাবে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর ছাপ। তথ্যসূত্র: আরটিভি অনলাইন আরএস/০৯:০০/ ৯ মে



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2FWGNZd
May 09, 2018 at 07:41PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top