লন্ডন, ৩০ এপ্রিল- ব্রিটেনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশিরা বসবাস করেন টাওয়ার হ্যামলেটসে। সেই টাওয়ার হ্যামলেটস বারায় মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচন আগামী ৩ মে। ভোটগ্রহণের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, ততটাই যেন বাস্তবতার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে পুরনো একটি প্রচলিত প্রবাদ। সেটি হল বাঙালির শত্রু বাঙালিই। কথাটি বলার কারণও রয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে তিন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী ডা. আনোয়ারা আলী, এস্পায়ার পার্টির ব্যানারে সাবেক ডেপুটি মেয়র অহিদ আহমদ, পিপলস অ্যালায়েন্স অব টাওয়ার হ্যামলেটসের ব্যানারে রাবিনা খান। ডা. আনোয়ারা আলীর চিকিৎসক হিসেবে কমিউনিটিতে পরিচিতি রয়েছে। তার বেড়ে উঠাও এ বারায়। অহিদ আহমদকে কমিউনিটির মানুষজন চেনেন একজন সজ্জন, বিনয়ী মানুষ হিসেবে। আর রাবিনা খান গত নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে আলোচনায় আসেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এ তিন প্রার্থীই এ বারার সাবেক কাউন্সিলর। আবার তিন প্রার্থীরই গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। এ নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান মেয়র জন বিগস। মেয়র পদে তিন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী থাকার কারণে জন বিগস এবারও অনেকটা হেসে-খেলে নির্বাচনি বৈতরণী পার হবেনএমন ধারণা প্রবাসী ভোটারদের। উল্লেখ্য, এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে সর্বমোট সাত প্রার্থী ও ৪৫টি কাউন্সিলর পদে ২৫৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কাউন্সিলর পদে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী ১১৩ জন। ২০১০ সালে ব্রিটেনে ইতিহাস সৃষ্টি করে এ বারায় প্রথম নির্বাহী মেয়র নির্বাচিত হন লুতফুর রহমান। ২০১৪ সালে জন বিগসকে হারিয়ে পুনরায় নির্বাচিত হলেও দুর্নীতির অভিযোগে আদালতের রায়ে মেয়র পদ হারান তিনি। আর মেয়র লুতফুরের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়েরকারীদের অন্যতম ব্যক্তিটিও ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন ব্যবসায়ী। আদালতের রায়ে সে সময় দুই মেয়াদে নির্বাচনে প্রার্থী হতে অযোগ্য ঘোষিত হন লুতফুর রহমান। তখন লুতফুর রহমান সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২৬,৩৮৪ ভোট পান রাবিনা খান। কিন্তু, এবারের নির্বাচনে লুতফুর রহমান আর রাবিনাকে সমর্থন দেননি। তিনি সমর্থন দেন সাবেক ডেপুটি মেয়র অহিদ আহমদকে। বারার স্টেপনি ওয়ার্ডের ভোটার টিপু আহমেদ বলেন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিনজন প্রার্থী না থেকে একক প্রার্থী থাকলে মেয়র পদে তিনি নিশ্চিতভাবে বিজয়ী হতেন। পাল্টাপাল্টি চ্যালেঞ্জ করতে গিয়ে কাউন্সিলর পদে এমন সব প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে যারা ঠিকমতো বাংলা বা ইংরেজি কোনোটাই বলতে পারেন না। অনেকের বিরুদ্ধে আবার কমিউনিটির মানুষের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আছে। টিপু আরও বলেন, রাবিনা বা অহিদের মধ্যে যে কোনও একজন প্রার্থী হলে এবার ফল অন্যরকম হতে পারত। কেন লুৎফুর নিজের দুই প্রার্থীকে এক করতে পারলেন না বা করলেন না সেটিও একটি বড় প্রশ্ন। লন্ডন থেকে প্রকাশিত বাংলাভাষী পত্রিকার সম্পাদক অলিউর রহমান খান বলেন, বাংলাদেশি তিন প্রার্থীর মধ্যে কারোরই বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে জিতে আসার সম্ভাবনা নেই। আমরা আশা করেছিলাম, অহিদ আর রাবিনা যেহেতু একই বলয়ের প্রার্থী অন্তত তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে একজন প্রার্থিতায় থাকবেন। তাতে জয়ের সম্ভাবনা থাকত। আমাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসত। কিন্তু এ নির্বাচনকে ঘিরে কোন্দল, হাতাহাতি আর হামলার ঘটনায় আমরা লজ্জিত। এখানে আমাদের শত্রু আমরাই। টাওয়ার হ্যামলেটসে লেবার পার্টির সঙ্গে গত ৪২ বছর ধরে সম্পৃক্ত মো. লোকমান উদ্দীন। তিনি বলেন, আজকে এখানে যারা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মেয়র প্রার্থী তারা সবাই একসময় লেবার পার্টি করতেন। আর এবারের ভোটে তিনজনের জায়গায় বাঙালি একজন প্রার্থী থাকলে জয়ের সমূহ সম্ভাবনা থাকত। বাংলাদেশি তিন প্রার্থীর সঙ্গে পৃথকভাবে আলাপ হয় বাংলা ট্রিবিউনের। তারা প্রত্যেকেই নিজেদের জয়ের সম্ভাবনা পুনর্ব্যক্ত করে সবার দোয়া ও কমিউনিটির সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন আর/১০:১৪/৩০ এপ্রিল



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2HLyam0
May 01, 2018 at 05:04AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top