চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে বিএমডিএর ‘বরেন্দ্র এলাকায় খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পে’র কাজ এগিয়ে চলছে। ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমিয়ে নদী থেকে খালে পানি এনে জমিতে সেচ দেয়ায় এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, চলতি বছরের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এতে প্রায় ১৭০০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়া যাবে। এ প্রকল্পের ফলে খরা মৌসুমেও কৃষকরা নির্বিঘেœ চাষাবাদ করতে পারবেন। এদিকে প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু হলে সেচে বিপ্লব ঘটবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কৃষকরা। জানা গেছে, মাসখানেক আগে পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
জানা গেছে, বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির চাপ কমাতে এবং সেচ সংকট সমাধানের জন্য এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদিত এ প্রকল্পের বাস্তবায়নে আছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) রাজশাহী। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। সরকারি কোষাগার থেকে এ ব্যয় নির্বাহ করা হচ্ছে। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছেÑ মহানন্দা নদীতে পন্টুন নির্মাণ; নদী থেকে পূর্ব চন্দনা খাল পর্যন্ত নদীর পানি আনার জন্য ৭ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ পানির পাইপ লাইন নির্মাণ; ৬ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন ও সংস্কার; খালে ২টি ক্রস ড্যাম নির্মাণ; খননকৃত খালের দুই ধারে ১৮টি সোলার প্যানেল ও বিদ্যুৎচালিত লো লিফট পাম্প (এলএলপি) স্থাপন এবং এলএলপির অধিভুক্ত সেচ এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির পাইপ লাইন নির্মাণ। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছর। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারা প্রসঙ্গে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গতবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং কৃষকদের ধান কাটার জন্য প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সময় লাগছে।
নাচোল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে নাচোল-রহনপুর সড়কের পূর্ব চন্দনায় প্রকল্পের অবস্থান। সরেজমিন দেখা যায়, প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের পথে। ৬ কিলোমিটার জুড়ে খাল পুনঃখনন এবং সংস্কার করা হয়েছে। খালের প্রস্থ গড়ে প্রায় ৩৫ ফুট এবং গভীরতা প্রায় ১৫ ফুট। খালের মাটি দিয়ে দুই ধার বাঁধানো হয়েছে। এছাড়া স্থানীয়দের অনুরোধে তাদের ছেড়ে দেয়া জমিতে খালের মাটি দিয়ে ৫ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা বানানো হয়েছে। এই রাস্তারও সুফল পাচ্ছে স্থানীয় কৃষকরা। ১৯টি (পরবর্তীতে ১টি বাড়ানো হয়েছে) সোলার প্যানেল স্থাপন ও এলএলপি বসানো হয়েছে। বর্তমানে কয়েকটিতে ওয়ারিংয়ের কাজ চলছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এটি শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সাইটে অবস্থানকারী সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার বেনজির আহমেদ।
মহানন্দা নদী থেকে খাল পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ ৩টি পানির পাইপ লাইন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং নদী থেকে পানি আনা শুরু হয়েছে। ৩টি পাইপ লাইনের মধ্যে একটি লাইনে ৭টি পয়েন্ট রাখা হয়েছে; যাতে গোমস্তাপুর উপজেলার কৃষকরা এ লাইন থেকে সেচ সুবিধা পেতে পারেন। গোমস্তাপুরের বোগলাকাঁঠাল নামক জায়গায় নির্মিত পন্টুনে ওই উপজেলার সেচের বিল পরিশোধের জন্য প্রিপেইড মিটার বসানো হচ্ছে। খাল পারাপারের সুবিধার্থে একটি সেতুও করা হয়েছে। ৯টি এলএলপির অধিভুক্ত সেচ এলাকায় ভূগর্ভস্থ পাইপ লাইন ও ১১টি হেডার ট্যাংকির কাজ বাকি রয়েছে।
পূর্ব চন্দনা গ্রামের হাজী মো. মুসা হকের ছেলে আবদুল জলিল (৬০) বলেন, ‘আল্লাহ এতদিনে আমাদের দিকে মুখ তুলে চেয়েছে। এজন্য এ প্রকল্পটি হচ্ছে। এ খালে সবসময় পানি থাকার কারণে খরা মৌসুমে চাষাবাদ করতে আর সমস্যা হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার কৃষকদের উপকারের কথা ভেবে এ কাজ করেছে। আশা করবো খালের পাশ দিয়ে কৃষকদের ছেড়ে দেয়া জমিতে যে কাঁচা রাস্তাটি করা হয়েছে এটি যেন পাকা করে দেয়া হয়।’
স্থানীয় কৃষকরা জানান, এরই মধ্যে ৪টি এলএলপি থেকে জমিতে সেচ দেয়া শুরু হয়েছে। ১৬০ টাকার বিনিময়ে ১ ঘণ্টায় প্রায় ৪ বিঘা জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে, যা বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে সম্ভব হয়নি। তবে তারা দুটি দাবি তুলেছেন। একটি হলো হাজারদিঘী দাঁড়া থেকে বিশাখাত্তর পর্যন্ত খাল সংস্কার করা হলে খালের পানি উপচিয়ে বাইরে যাবে না। আরেকটি হলো হাজারদিঘী বিলের ইজারা পাওয়া ব্যক্তিরা মাছ ধরার জন্য পানি ছেঁচে খাল ভরাট করে ফেলছে, এটি বন্ধ করা দরকার।
এ বিষয়ে নাচোল বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী শাহ মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগটি পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়কে অবহিত করি এবং তাদেরকে নিয়ে সরেজমিন প্রকল্প এলাকায় যাই। তারা বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’
কসবা ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ড সদস্য আখতারুজ্জামান নাজিম জানান, এ প্রকল্পের ফলে কৃষক শতভাগ উপকৃত হবেন। সেচের সমাধানও হবে। আর রাস্তাটিও কৃষকদের খুবই উপকারে আসবে।
নাচোল উপজেলা কৃষি ও সেচবিষয়ক কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকবান্ধব, এ প্রকল্প তা আবারও প্রমাণ করে। বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচ সংকট সমাধানে এ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এর দ্বারা ওই এলাকার হাজার হাজার কৃষকও উপকৃত হবেন।’
রাজশাহী বিএমডিএর প্রকল্প পরিচালক শামশুল হুদা বলেন, ‘কিছু কাজ বাকি আছে, আগামী জুনের মধ্যেই তা শেষ হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং কৃষকদের ধান কাটার জন্য প্রকল্পের কাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে। প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু হলে কয়েকশ’ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়া সম্ভব হবে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক নাচোল/ ১৬-০৫-১৮
জানা গেছে, বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির চাপ কমাতে এবং সেচ সংকট সমাধানের জন্য এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদিত এ প্রকল্পের বাস্তবায়নে আছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) রাজশাহী। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। সরকারি কোষাগার থেকে এ ব্যয় নির্বাহ করা হচ্ছে। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছেÑ মহানন্দা নদীতে পন্টুন নির্মাণ; নদী থেকে পূর্ব চন্দনা খাল পর্যন্ত নদীর পানি আনার জন্য ৭ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ পানির পাইপ লাইন নির্মাণ; ৬ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন ও সংস্কার; খালে ২টি ক্রস ড্যাম নির্মাণ; খননকৃত খালের দুই ধারে ১৮টি সোলার প্যানেল ও বিদ্যুৎচালিত লো লিফট পাম্প (এলএলপি) স্থাপন এবং এলএলপির অধিভুক্ত সেচ এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির পাইপ লাইন নির্মাণ। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছর। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারা প্রসঙ্গে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গতবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং কৃষকদের ধান কাটার জন্য প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সময় লাগছে।
নাচোল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে নাচোল-রহনপুর সড়কের পূর্ব চন্দনায় প্রকল্পের অবস্থান। সরেজমিন দেখা যায়, প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের পথে। ৬ কিলোমিটার জুড়ে খাল পুনঃখনন এবং সংস্কার করা হয়েছে। খালের প্রস্থ গড়ে প্রায় ৩৫ ফুট এবং গভীরতা প্রায় ১৫ ফুট। খালের মাটি দিয়ে দুই ধার বাঁধানো হয়েছে। এছাড়া স্থানীয়দের অনুরোধে তাদের ছেড়ে দেয়া জমিতে খালের মাটি দিয়ে ৫ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা বানানো হয়েছে। এই রাস্তারও সুফল পাচ্ছে স্থানীয় কৃষকরা। ১৯টি (পরবর্তীতে ১টি বাড়ানো হয়েছে) সোলার প্যানেল স্থাপন ও এলএলপি বসানো হয়েছে। বর্তমানে কয়েকটিতে ওয়ারিংয়ের কাজ চলছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এটি শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সাইটে অবস্থানকারী সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার বেনজির আহমেদ।
মহানন্দা নদী থেকে খাল পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ ৩টি পানির পাইপ লাইন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং নদী থেকে পানি আনা শুরু হয়েছে। ৩টি পাইপ লাইনের মধ্যে একটি লাইনে ৭টি পয়েন্ট রাখা হয়েছে; যাতে গোমস্তাপুর উপজেলার কৃষকরা এ লাইন থেকে সেচ সুবিধা পেতে পারেন। গোমস্তাপুরের বোগলাকাঁঠাল নামক জায়গায় নির্মিত পন্টুনে ওই উপজেলার সেচের বিল পরিশোধের জন্য প্রিপেইড মিটার বসানো হচ্ছে। খাল পারাপারের সুবিধার্থে একটি সেতুও করা হয়েছে। ৯টি এলএলপির অধিভুক্ত সেচ এলাকায় ভূগর্ভস্থ পাইপ লাইন ও ১১টি হেডার ট্যাংকির কাজ বাকি রয়েছে।
পূর্ব চন্দনা গ্রামের হাজী মো. মুসা হকের ছেলে আবদুল জলিল (৬০) বলেন, ‘আল্লাহ এতদিনে আমাদের দিকে মুখ তুলে চেয়েছে। এজন্য এ প্রকল্পটি হচ্ছে। এ খালে সবসময় পানি থাকার কারণে খরা মৌসুমে চাষাবাদ করতে আর সমস্যা হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার কৃষকদের উপকারের কথা ভেবে এ কাজ করেছে। আশা করবো খালের পাশ দিয়ে কৃষকদের ছেড়ে দেয়া জমিতে যে কাঁচা রাস্তাটি করা হয়েছে এটি যেন পাকা করে দেয়া হয়।’
স্থানীয় কৃষকরা জানান, এরই মধ্যে ৪টি এলএলপি থেকে জমিতে সেচ দেয়া শুরু হয়েছে। ১৬০ টাকার বিনিময়ে ১ ঘণ্টায় প্রায় ৪ বিঘা জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে, যা বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে সম্ভব হয়নি। তবে তারা দুটি দাবি তুলেছেন। একটি হলো হাজারদিঘী দাঁড়া থেকে বিশাখাত্তর পর্যন্ত খাল সংস্কার করা হলে খালের পানি উপচিয়ে বাইরে যাবে না। আরেকটি হলো হাজারদিঘী বিলের ইজারা পাওয়া ব্যক্তিরা মাছ ধরার জন্য পানি ছেঁচে খাল ভরাট করে ফেলছে, এটি বন্ধ করা দরকার।
এ বিষয়ে নাচোল বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী শাহ মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগটি পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়কে অবহিত করি এবং তাদেরকে নিয়ে সরেজমিন প্রকল্প এলাকায় যাই। তারা বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’
কসবা ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ড সদস্য আখতারুজ্জামান নাজিম জানান, এ প্রকল্পের ফলে কৃষক শতভাগ উপকৃত হবেন। সেচের সমাধানও হবে। আর রাস্তাটিও কৃষকদের খুবই উপকারে আসবে।
নাচোল উপজেলা কৃষি ও সেচবিষয়ক কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকবান্ধব, এ প্রকল্প তা আবারও প্রমাণ করে। বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচ সংকট সমাধানে এ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এর দ্বারা ওই এলাকার হাজার হাজার কৃষকও উপকৃত হবেন।’
রাজশাহী বিএমডিএর প্রকল্প পরিচালক শামশুল হুদা বলেন, ‘কিছু কাজ বাকি আছে, আগামী জুনের মধ্যেই তা শেষ হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং কৃষকদের ধান কাটার জন্য প্রকল্পের কাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে। প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু হলে কয়েকশ’ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়া সম্ভব হবে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক নাচোল/ ১৬-০৫-১৮
from Chapainawabganjnews https://ift.tt/2KyNP8T
May 16, 2018 at 08:41PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন