সিলেটে রেজিস্টার বিহীন দলিল দিয়ে ভূমি জালিয়াতির অভিযোগ এনে মো. ইউনুছ আলী চৌধুরীকে প্রধান আসামী ও সালেহ আহমদ চৌধুরীকে ২য় আসামী করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শাহপরাণ থানাধীন টিলাগড় এলাকার মৃত হাজী মো. তাজ খানের পুত্র রোকন উদ্দিন খান বাদি হয়ে এসএমপির কোতোয়ালী থানায় এ মামলা দায়ের করেন। যার নং- সি.আর মামলা নং- ৩২৬/২০১৭ইং।
এদিকে, মামলার প্রেক্ষিতে তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সারওয়ার জাহানকে দেওয়া হয়। মামলার তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পান ওই কর্মকর্তা।
কিন্তু পিবিআই তদন্তে মো. ইউনুছ আলী চৌধুরী ও সালেহ আহমদ চৌধুরী ছাড়া বাকী ১৫ জনের কোন অপরাধ প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তদন্ত অনুসারে জানা যায়, মামলার প্রধান আসামী মো. ইউনুছ আলী চৌধুরী ১৯৬১ সালে রেজিস্টার বিহীন জাল দলিল সৃষ্টি করে জমি আত্মসাৎ করে আসছেন। তিনি ভূমি খেকো সালেহ আহমদ চৌধুরীকে আমমোক্তার নিয়োগ দেন। এ সুযোগে সালেহ আহমদ চৌধুরী মামলার বাদী রোকন উদ্দিনের ভিটে মাটি পর্যন্ত দখল করার পায়তারা করছেন। রোকন উদ্দিনের ক্রয়কৃত ০.৯৫ শতক জমির উপর একটি টিন সেডের ঘর রয়েছে। উক্ত ঘরসহ রোকন উদ্দিনের সকল প্রকার জায়গা জমি দখল করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। আদালতে এ জমি বার বার রোকন উদ্দিনের পক্ষে রায় আসলেও গায়ের জোরে সালেহ আহমদ চৌধুরী এ জমি দখল করতে চাচ্ছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সিলেট জেলার সদর উপজেলার মৌজা বহর জেএল নং-৭০, খতিয়ান নং ৫২, দাগ নং ১০৫ ও ১০৬ এর সর্বমোট জমির পরিমাণ ৪.০৪ একর এর মধ্যে ০.৯৫ একর জমি রোকন উদ্দিন ক্রয় করে তার নামে নামজারি ও খারিজ করিয়া নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করিয়া আসিতেছেন। জমির মূল মালিক কুমুদ উদ্দিন দত্ত চৌধুরী তার নিকট তিনি ১৯৫১ সালে রেজিস্টার দলিল মূলে আক্রম ও আরব আলী কমিটি ক্রয় করেন। তাদের নিকট থেকে বিভিন্ন সময় ০.৯৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেন রোকন উদ্দিন।
কিন্তু মামলার আসামী ইউনুছ আলী চৌধুরী তার পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক জমি দখলের চেষ্টায় আক্রম আলীকে বিক্রেতা দেখিয়ে রোকন উদ্দিনের জমি আত্মাসাত করতে থাকে। ২.০২ একর জমির জাল দলিল সৃষ্টি করিয়া ও আলাউদ্দিন এবং মঈন উদ্দিনের স্বাক্ষরিত একটি রেজিস্টার বিহীন দলিল সৃষ্টি করেন।
এ দলিলের ভিত্তিতে ইউনুছ আলী চৌধুরী আমমোক্তার মামলার ২য় আসামী সালেহ আহমদ চৌধুরী জমি দখলের চেষ্টা করছেন। কিন্তু পিবিআই তদন্তে আলাউদ্দিন ও মঈন উদ্দিনের জাল স্বাক্ষর প্রমাণিত হয়। কেননা তখন আলাউদ্দিনের বয়স ছিল ১ বছর ও মঈন উদ্দিনের বয়স ছিল ৫ বছর। এ বয়সে তারা কীভাবে এতো সুন্দর করে স্বাক্ষর দেয়।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, সালেহ আহমদ চৌধুরী খুবই অশৃঙ্খল ব্যক্তি। এলাকার তিনি প্রভাব খাটিয়ে কাজ করেন। যে কোন সময় যে কোন কর্মকান্ড ঘটাতে কুন্ঠাবোধ করেন না। ভূমি খেকো হিসেবেও এলাকায় তার পরিচয় পাওয় যায়।
এর পূর্বে সালেহ আহমদ চৌধূরীসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সিলেট মেট্রোপলিটন চীফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন দক্ষিন সুরমা থানাধীন এলাকা বরই কান্দীর মৃত আকরম আলীর পূত্র মো. ফয়ছল উদ্দীন আহমদ। মোকাদ্দমা ১০১/২০১৭ইং ও জি.আর মামলা নং- ১৩৪/২০১৭ইং।
উক্ত মোকাদ্দমা উভয় পক্ষের শুনানিঅন্তে আদালত নামজারী বাতিলক্রমে ১০০ শতক ভূমি বাদীর পক্ষে রায় দেন এবং তাদের নামে নামজারীর আদেশ প্রদান করেন বিগত ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারী। পরবর্তী এ ভূমি খেকো কুচক্রি মহল ফয়ছল উদ্দীনের নামজারী বাতিলের বিরুদ্ধে সিলেট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আদালতে বিবিদ আপিল ৩০/২০১১ ইং দায়ের করেন। উক্ত আপিলও আদালত নামঞ্জুর করায় ফয়ছল উদ্দীন আহমদ মৌরসীসূত্রে নামজারী পেয়ে বেচা-বিক্রি শুরু করেন।
কিন্তু গেল বছরের ১ এপ্রিল মামলার প্রধান আসামী ইউনুছ আলী রেজিস্টার বিহীন দলিল দেখিয়ে আমমোক্তার সালেহ আহমদ চৌধুরী মিথ্যা তথ্য দিয়ে সিলেট জেলার যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে নালিশা ভূমিতে একটি স্বত্ত্ব ঘোষণা মামলা (২৫.০৫.১৯৬১ সালের দলিলের উল্লেখপূর্বক) দায়ের করেন। মামলায় ফয়ছল উদ্দীন ভাই-বোন সবাইকে আসামী করা হয়।
সালেহ আহমদ চৌধুরী এভাবে মিথ্যা তথ্য ও ভূমি জালিয়াতি করে আসছেন। সাধারণ মানুষকে ফাসিয়ে ভূমি খেকো সালেহ ইতোমধ্যে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। জাল দলিল দিয়ে সম্পত্তি আত্মসাৎ করে সাধারণ মানুষকে পথে নামিয়েছেন।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ https://ift.tt/2KuAWjV
June 30, 2018 at 08:20PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন