আসন্ন বাজেটে ভিক্ষুক ও পতিতা পূর্ণবাসনে বরাদ্দ চাই ,মোঃ আব্দুল মালিক


বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। এ দেশের মুসলমানরা ধর্মপ্রাণ। এছাড়া অন্যান্য ধর্মাবলম্বী হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারীরা ও নিজ নিজ ধর্মের প্রতি অনুরাগী। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমাদের একটি গান আছে “তুমি হিন্দু না মুসলিম, বৌদ্ধ না খ্রিষ্টান,

আমি চাই না তার প্রমাণ, তুইও মানুষ, মুইও মানুষ মানুষের সন্তান।” আসলে বাংলাদেশ সকল ধর্ম, বর্ণের মানুষের জন্য এক নিরাপদ বাসস্থান। যদিও আজ কাল কিছু উগ্রপন্থী জঙ্গী দল সৃষ্টি হয়েছে, কিছু সাম্প্রদায়িক বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। তারা ধর্মের নামে ব্লগার ও সাধারণ মানুষকে খুন করছে।

বাংলাদেশের অনেক বড় বড় রাজনৈতিক দল যেমন বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামাতে ইসলামী সহ অন্যান্য ইসলাম পন্থী রাজনৈতিক দল, ধর্মের নামে রাজনীতি করছে। বিএনপি, জাতীয়পার্টি, বিএনপি জামাত, সমর্থিত জোট সরকার ধর্মের নামে দীর্ঘ দিন বাংলাদেশ শাসন করেছে। কিন্তু কোন দলই ইসলাম ধর্ম এমন কি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ধর্মে নিষিদ্ধ পতিতাবৃত্তি, ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বা কোন সংঘঠন এসব নিষিদ্ধ করার জন্য বা পূর্ণবাসন করার জন্য কোন জোর দাবীও উত্থাপন করেনি। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর বিরুদ্ধে অনেকেও অপপ্রচার করেন ধর্ম বিরোধী একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে।

বাস্তবে স্বাধিন বাংলাদেশে, এমন কি ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের চব্বিশ বছরের শাসন আমলের চাইতেও আওয়ামীলীগ সরকারই ধর্মের জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে। বঙ্গবন্ধুর সরকার মদ, জুয়া, হাউজি, ঘোড় দৌড় বন্ধে আইন করেন, তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার জন্য জমি বরাদ্ধ দেন, বায়তুল মোর্কারমকে জাতীয় মসজিদ ঘোষনা করেন, ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, তাবলীগ জামাতের জন্য কাকরাইলে মসজিদ সম্প্রসারণ করে দেন, রেসকোর্স ময়দানের নাম পরিবর্তন করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নামকরণ করেন, বাংলাদেশকে ওআইসির সদস্যভূক্ত করা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

এর ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারও ইসলামের উন্নয়নে সকল ধর্মের উন্নয়নে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

বর্তমানে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। মাথাপিছু আয় ১৭৫০ ডলার হয়েছে এবং বাংলাদেশ দিন দিন উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মত বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা প্রায় দ্বিগুণ করেছেন। বিভিন্ন ধরণের ভাতা ও উপকার ভোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি করেছেন। বিশেষ করে শিক্ষাখাতে সরকার যে ভর্তুকী দিচ্ছেন তা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেরও কল্পনার বাইরে। এ সবের দিকে তাকালে ভিক্ষুক ও পতিতাদের পূর্ণবাসন করা বর্তমান সরকারের জন্য কোন বড় বিষয় নয়। ভিক্ষুক ও পতিতাবৃত্তি বন্ধ করে এদের পূর্ণবাসন করা শুধু ধর্মীয়, সামাজিক ও মানবিক কারণেই প্রয়োজন নয়। এদের পূর্ণবাসন করা প্রয়োজন শিক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আইন শৃংখলার উন্নতির জন্যও।

ভিক্ষাবৃত্তিকে অনেকেই বিনা পুঁজির ব্যবসা হিসেবে গ্রহন করেছে। এদের শ্রম অনুৎপাদনশীল। এরা ভিক্ষাবৃত্তির আড়ালে নানা অপকর্মও করছে। শিশু ভিক্ষুকরা নিরক্ষরতা দূর করতে বাধার সৃষ্টি করছে। ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ করে আইন পাশ করা হলে বিনা পুজিঁর এই ব্যবসা থেকে ৬০-৭০% ভিক্ষুব সটকে পড়বে। বাকি ৩০-৪০% ভিক্ষুকের ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশনের সদস্য, কমিশনার, কাউন্সিলারদের মাধ্যমে তালিকা তৈরী করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,

পৌরসভার সচিব, সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত ভিক্ষুকদের তালিকা তৈরী করে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর যে ক্যাটারীতে যে পড়ে যেমন বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ইত্যাদি কর্মসূচীতে অন্তর্ভূক্ত করে পূর্ণবাসন করা অনায়াসে সম্ভব। অন্যদিকে যারা ভিক্ষাবৃত্তির উপযুক্ত নয় তারা বাধ্য হয়ে উৎপাদনশীল কাজে যাবে, ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। শিশুরা ভিক্ষা করতে না পারলে বিনা পয়সায় লেখা-পড়া করতে বিদ্যালয়ে যাবে, ফলে নিরক্ষরতা দূরীভূত হবে।

সম্ভবত ১৯৩১ সালে বৃটিশ সরকার এদেশে পতিতাবৃত্তি আইন পাশ করে আইনানুগভাবে পতিতালয় চালু করে। বৃটিশদের তাড়িয়ে ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্থানের ২৪ বছর এমন কী দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রায় ৪৭ বছর চলছে কিন্তু আজ পর্যন্ত পতিতাবৃত্তি বন্ধ করাতো দূরের কথা, এটা বন্ধ করার জন্য কোন ধর্মপ্রাণ এমপি সংসদে, ধর্মীয় রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী মাঠে ময়দানে জোরালো বক্তব্য দিয়েছে বলে শোনা যায়নি। পতিতালয় আবার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন। আল্লাহর আইন চাই, সৎ লোকের শাসন চাই শ্লোগানধারী জামাতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালীন এই ঘৃণ্য ও ধর্ম বিরোধী পেশা বন্ধের কোন উদ্যোগ না নিয়ে বরং পতিতাদের লাইলেন্স প্রদান করেছেন। এক্ষেত্রে বরং আওয়ামীলীগ সরকারের সময় ঢাকা ও নারায়নগঞ্জে কয়েকটি পতিতালয় উচ্ছেদ করা হয়েছে। বর্তমানে যে কয়েকটি পতিতালয় রয়েছে সেখানকার পতিতাদের পূর্ণবাসন করা বর্তমান সরকারের পক্ষে তেমন কঠিন কোন কাজ নয়। ধর্মীয়, নৈতিক, সামাজিক, আইনশৃংখলার উন্নয়ন, নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে এই ঘৃণ্য পেশা বন্ধ করে এই পেশার সাথে যারা দূর্ভাগ্যক্রমে জড়িয়ে গেছেন তাদের পূর্ণবাসন করা জাতির দাবী।

একজন নারী নানা প্রতিকূল কারণে পতিতা হয়। এই ঘৃণ্য পেশার সাথে জড়িত হওয়ার পর সমাজে তার কোন স্থান থাকে না। অন্য দিকে যে সব পুরুষ সেখানে যায় তাদেরও নৈতিক স্খলন ঘটে, নানা যৌনবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। পতিতালয়ের ব্যয় নির্বাহের জন্য একজন পুরুষ চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ইত্যাদি অবৈধ পন্থায় টাকা উপার্জন করে। একজন নারীকে বিয়ে, চাকুরী ইতাদির প্রলোভন দেখিয়ে পতিতালয়ে বিক্রি করে। এসব কারণে আইন শৃংখলার অবনতি হয়। এসব বিষয় বিবেচনা করে পতিতাদের পূর্ণবাসনে সরকারকে এগিয়ে আসা জরুরী। অল্প বয়স্ক পতিতাদের নারী শ্রমিক হিসেবে বিদেশে পাঠিয়ে, গার্মেন্টস সহ অন্যান্য শিল্পে, সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিয়ে, বয়স্ক ও শিশুদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির নানা কর্মসূচীতে অন্তর্ভূক্ত করে, আইনানুগভাবে পতিতাদের পূর্ণবাসন করা সহজেই সম্ভব। আর যাতে পতিতাবৃত্তিতে কেউ আসতে না পারে সে জন্য পতিতাবৃত্তির লাইসেন্স প্রদান চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে।

সরকারের গত মেয়াদে ভিক্ষুক জরীপ নিয়ে অনেক জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। ভিক্ষুক জরীপের জন্য এত জটিলতার কোন প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র প্রয়োজন একটি আইন যাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর ভিক্ষাবৃত্তি হবে একটি শাস্তি যোগ্য অপরাধ। আর যারা ভিক্ষুক ভাতা বা পূনর্বাসিত হতে ইচ্ছুক তারা ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে তালিকা ভুক্ত হতে হবে। এমন আইন করা হলে সরকারকে ভিক্ষুক খুজঁতে হবে না। ভিক্ষুকরা সরকারকে খুজঁবে হন্য হয়ে। যেভাবে ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, বিধবা, বয়স্করা ভীড় করছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। এভাবে সংগৃহিত তালিকা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনীতে পূনর্বাসন করা সহজেই সম্ভব।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস https://ift.tt/2JlEPqW

June 02, 2018 at 05:38PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top