ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। এই নাম দুটো শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে পেলে, ম্যারাডোনা কিংবা মেসি, নেইমারদের খেলা। আর এ দুদলের আধিক্যতা দেখা যায় মূলত বিশ্বকাপ ফুটবল আসলে। অর্থাৎ চার বছর পর পর। পুরো একটি মাস জুড়ে এদের ফুটবল ছন্দে মেতে ওঠে পুরো বিশ্ব। এ দুদলের খেলা হলে দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায় ফুটবলপ্রেমীরা। এ বিরোধ কিন্তু এমনিতেই আসেনি। ইতিহাস ঘেটে জানা যায় এ দুদলের দ্বন্দ্ব মূলত শুরু হয় ১৯৩৭ সালে। পাঠকরা আসুন যেনে নেই ইতিহাস কী বলে এই দুদলের দ্বন্দ্বের। প্রথমত কোপা আমেরিকা এক সময় সাউথ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপ নামে খেলা হতো। ১৯৩৭ সালের এই চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয় আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ওই ম্যাচ শুরু হতেই দর্শকদের মধ্যে মারামরি শুরু হয়। ব্রাজিলের দর্শকদের অভিযোগ আর্জেন্টিনার দর্শকরা তাদের খেলোয়াড়দের বানর আর মশা বলে চিৎকার করছে। আর বানরের মতো শব্দ করেছে। পরিস্থিতি সামলাতে খেলা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে খেলা শুরু হলে নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য থাকে। অতিরিক্ত সময়ে আর্জেন্টিনা ব্রাজিলকে দুটি গোল দেয়। ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা গোল মেনে নিতে পারেনি। অফসাইড এবং নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে মাঠ ছাড়ে তারা। শত্রুতার যেন এখানেই শুরু। দ্বিতীয়ত প্রথমদিকে ফুটবল বিশ্বকাপ বারবার ইউরোপে হওয়ায় আর্জেন্টিনা যুক্তি দেয়। একবার বিশ্বকাপ ইউরোপে আরেকবার ল্যাটিন আমেরিকায় হতে হবে। সে সময় ইউরোপে যুদ্ধর দামামা বাজায় আর্জেন্টিনা চাইলো খেলাকে শক্তি প্রদর্শনের হাতিয়ারে পরিণত না করে তা ল্যাটিন আমেরিকার কোনও দেশেই হোক। তারা নিজেদের আয়োজক হিসেবে দাঁড় করাতে চাইলো। ল্যাটিনের বাকি দেশগুলোও তাতে সায় দিলো। ইউরোপের রাজনীতিতে পড়ে ১৯৩৮ বিশ্বকাপ হলো ফ্রান্সে। আর্জেন্টিনা বয়কট করলো। কিন্তু ব্রাজিল বিশ্বাসঘাতকতা করে খেললো সে আসরে। আর পরের বার ইউরোপীয়রা খুশি হয়ে ব্রাজিলকে দায়িত্ব দিলো আয়োজনের। এই ঘটনা পাকাপোক্ত করে দেশ দুটির ফুটবলীয় বিরোধ। তৃতীয়ত ১৯৩৯ সালে আর্জেন্টিনা ফুটবল দল খেলতে যায় ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে। দুই ম্যাচের প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনা ৫-১ গোলে ব্রাজিলকে পরাজিত করে। এক সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ম্যাচের শুরুতেই ব্রাজিল গোল দেয় আর্জেন্টিনাকে খেলা সমাপ্ত হয় ২-২ গোলের সমতায়। ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা একটু গায়ে লাগলেই শুয়ে পড়ে এমন অভিযোগ করে প্রতিবাদ জানায় বিষয়টির। আগের ম্যাচে ঘটেছে বলে জানালেও রেফারি গায়ে মাখেননি। এবারের ম্যাচেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। ব্রাজিলের একজন খেলোয়াড়ের অমন আচরণে পেনাল্টি পায় ব্রাজিল। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার এই ম্যাচে এবার প্রতিবাদ করেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা। আর্জেন্টিনার আর্কেডিও লোপেজ রেফারিকে ধাক্কা দিলে রেফারি হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। ব্রাজিলের পুলিশ মাঠে নামে। রেফারিকে উদ্ধার করে। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের উপর লাঠিচার্জ করে মাঠ থেকে বের করে দেয়। কিন্তু ব্রাজিল খোলা মাঠে গোল দিয়ে শত্রুতার আগুনে ঘি ঢালে। আরও পড়ুন: ফুটবল বিশ্বের শীর্ষ দশ ধনী ক্লাব চতুর্থত ১৯৪৫ সালের এক ম্যাচে ব্রাজিল ৬-২ গোলে পরাজিত করে আর্জেন্টিনাকে। জয় ছিনিয়ে নিতে ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা আক্রমনের সূত্র অবলম্বন করে। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড় বাটাগ্লিয়েরোর পা ভেঙে দেয়। ১৯৪৬ সালের আরেক ম্যাচে আর্জেন্টিনার ফর্মে থাকা অধিনায়ক জোসে সালমনের পায়ের হাড় ভেঙে ফেলে ব্রাজিলের খেলোয়াড় রোসা। সালমনের ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে আর খেলোয়াড়দের সাথে দর্শক-সমর্থকও হয়ে ওঠে পরস্পরের শত্রু। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে এই ভয়েই বিশ্বকাপে খেলানো হয় না সতেরো বছর বয়সী তরুণ ম্যারাডোনাকে। মূলথ এসকল শত্রুতার জের ধরেই হয়তো আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ বয়কট শুরু করে। ব্রাজিলে ও সুইজারল্যান্ডে আয়োজিত ১৯৫০ ও ১৯৫৪ বিশ্বকাপ খেলা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। দ্যা বিউটিফুল গেম কথাটার মান রাখতে পুনরায় এই দুটি দলকে মাঠে নামতে দেখা যায়। মেসি-নেইমার করমর্দনও করে তবু কোথাও একটু প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে যায়। তারপরও বলতে হবে, খেলা আমাদের বিভেদ ভুলিয়ে নিয়ে আসে একই ছাতার নিচে। উপভোগ করায় নব্বই মিনিটের শ্বাসরুদ্ধকর সৌন্দর্য। প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকুক চিরকাল কিন্তু প্রতিহিংসায় পরিণত না হওয়ার প্রার্থণা। তথ্যসূত্র: আরটিভি অনলাইন আরএস/০৯:০০/ ২৯ জুন
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2IBMHjA
June 29, 2018 at 11:15PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন