ঢাকা, ১৩ জুন- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে দায়ের করা মামলায় কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর জামিন পেয়েছেন গত সোমবার। জেল থেকে বেরিয়ে তার ভক্ত অনুরাগীদের জন্য জেলখানার স্মৃতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখছেন নিয়মিত। এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি নিজেকে একজন বাবা-মাহারা এতিম সন্তানের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি লিখেন, মনে হচ্ছিল- বাবা মা হারিয়ে ফেলা অনাথ আশ্রমে আশ্রয় পাওয়া এক এতিম আমি। তার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো: ফেসবুকে আসিফ লেখেন, আমি কয়েদি নম্বর ২৫০২৭। কারাগারের উঁচু প্রাচীরগুলো ভয় জাগানিয়া। আনুষ্ঠানিকতা শেষে ঢুকলাম কারা হাসপাতালের কেবিনে। একজন মুরব্বির নেতৃত্বে মাগরিবের নামাজের জামাত চলছে। বাইরে ঝোলানো ভয়ানক তালা, ঢুকতে হলো চার দেয়াল আর লোহার গরাদবেষ্টিত কক্ষটিতে। মনে হচ্ছিল- বাবা মা হারিয়ে ফেলা অনাথ আশ্রমে আশ্রয় পাওয়া এক এতিম আমি। নামাজ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে চারদিকের মাপ নিচ্ছিলাম। নামাজ শেষে মাথা নিচু করে হেঁটে গেলাম আমার জন্য রাখা নির্ধারিত বিছানায়। শত সহস্র অনুসন্ধিৎসু চোখের আড়ালে নিজেকে লুকানো অসম্ভব। চোখ ভিজে আসতে চাইছে। দৃঢ়তা আর সততার ট্যাবলেট খাওয়া সিদ্ধান্ত- নাহ... পানি বের হতে দেয়া যাবে না, শুধু রক্তই বেরোতে পারে। ব্যাগটা রেখে গোসলে গেলাম। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তাড়াহুড়োয় আনা হয়নি, এগিয়ে এলো আরেক কয়েদি প্লাস রাইটার- শাওন। তার অধীনেই চলে এই অবরুদ্ধ কক্ষটি। সবাই তাকাচ্ছে আমার দিকে, আমি কুঁকড়ে আছি নতুন পরিচয় হজমের আতঙ্কে। কবে আসবে রুপকথার ফিনিক্স পাখিটা !! আর কত দিন গল্প শুনে যেতে হবে!! আমিই তো ফিনিক্স, আজন্ম এক যোদ্ধা, আমার অদম্য অগ্রযাত্রা থামবে শুধু মৃত্যুতেই ... মুহূর্তেই ঝেড়ে ফেললাম অতীত, মুখে নিয়ে আসলাম বিজয়ীর হাসি। সবার সঙ্গে হাত আর বুক মেলানো শুরু করলাম। কিছু কয়েদি এগিয়ে এলেন, আর কিছু আছেন অবজারভেশনে। এর মধ্যে খুনে চোখ, অসহায় চোখ, ভালোবাসার চোখ, সন্দেহের চোখ, করুণার চোখ, নেশার চোখ, বন্ধুত্বের চোখ- সবই আছে। নানান চোখের নানান ভাষা, ওগুলো পরেও পড়া যাবে। সারা দিন কিছু খাইনি, আগে একটু খেয়ে নেই, অনেক ক্ষুধা পেয়েছে প্রসঙ্গত, গত ৫ জুন রাত দেড়টায় তেজগাঁওয়ের এফডিসি এলাকায় নিজ স্টুডিও থেকে আসিফ আকবরকে গ্রেফতার করে সিআইডির একটি টিম। পরে সিআইডি জানায়, তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তেজগাঁও থানায় সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী শফিক তুহিনের করা একটি মামলায় আসিফকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শফিক তুহিন মামলার এজাহারে অভিযোগ করেছেন, গত ১ জুন রাত ৯টার দিকে চ্যানেল ২৪-এর সার্চলাইট নামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসিফ আকবর অনুমতি ছাড়াই তার সংগীতকর্মসহ অন্যান্য গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীর ৬১৭টি গান সবার অজান্তে বিক্রি করেছেন। পরে তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, আসিফ আকবর আর্ব এন্টারটেইনমেন্টের চেয়ারম্যান হিসেবে অন মোবাইল (প্রা.) লিমিটেড কনট্যান্ট প্রোভাইডার, নেক্সনেট লিমিটেড গাক মিডিয়া বাংলাদেশ লিমিটেড ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গানগুলো ডিজিটাল রূপান্তরে ট্রু-টিউন, ওয়াপ-২, রিংটোন, পিআরবিটি, ফুলট্রেক, ওয়ালপেপার, অ্যানিমেশন, থ্রিজি কনট্যান্ট ইত্যাদি হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যবহার করে অসাধুভাবে ও প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছে। এজাহারে তিনি আরও উল্লেখ করেন, এ ঘটনা জানার পর তিনি গত ২ জুন রাত ২টা ২২ মিনিটে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে অনুমোদন ছাড়া গান বিক্রির এ ঘটনা উল্লেখ করে একটি পোস্ট দেন। তার ওই পোস্টের নিচে আসিফ আকবর নিজের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে অশালীন মন্তব্য ও হুমকি দেন। পরের দিন রাত ৯টা ৫৯ মিনিটে আসিফ আকবর তার প্রায় ৩২ লাখ লাইকার সমৃদ্ধ ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভে আসেন। ৫৪ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড লাইভ ভিডিওর ২২ মিনিট থেকে তার বিরুদ্ধে অবমাননাকর, অশালীন ও মিথ্যা-বানোয়াট বক্তব্য দেন। ভিডিওতে আসিফ আকবর তাকে (শফিক তুহিন) শায়েস্তা করবেন এ কথা বলার পাশাপাশি ভক্তদের উদ্দেশে বলেন, তাকে যেখানেই পাবেন সেখানেই প্রতিহত করবেন। এ নির্দেশনা পেয়ে আসিফ আকবরের ভক্তরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে হত্যার হুমকি দেন। আসিফ আকবরের এ বক্তব্য লাখ লাখ মানুষ দেখেছে। তিনি উসকানি দিয়েছেন। এতে তার (শফিক তুহিন) মানহানি হয়েছে বলে দাবি করেন। এ বিষয়টি সংগীতাঙ্গনের সুপরিচিত শিল্পী, সুরকার ও গীতিকার প্রীতম আহমেদসহ অনেকেই জানেন বলে এজাহারে শফিক তুহিন উল্লেখ করেছেন। এদিকে গ্রেফতারের পর বুধবার আদালতে হাজির করা হলে আসিফ বলেন, ২০০৮ সালে একটি চুক্তি হয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালে নতুন আইন হওয়ায় আগের চুক্তি মোতাবেক কেউ-ই লাভবান হয়নি। আমার বিরুদ্ধে যারা মামলা করেছেন, তারাই আমার আগে ফেসবুকে কমেন্ট (কটূক্তি) করেছে। তারাই আমার মানহানি করেছে। কিন্তু আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করিনি। গত তিন বছর ধরে তারা এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করছে। বিষয়টি নিয়ে দুবার মোহাম্মদপুর থানায় গিয়েছিলাম। তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালে গ্রামীণফোন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হই। এ অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। ফেসবুকে আমি কোনো হুমকি দিইনি। আমার ভক্তরা দিতে পারেন। এদিকে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারার এক শিল্পীর করা মামলায় আরেক শিল্পী আসিফের গ্রেফতারের বিষয়টি নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে সাধারণ মানুষ বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সূত্র: যুগান্তর আর/১৭:১৪/১৩ জুন
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2yh8WM3
June 14, 2018 at 12:25AM
এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ...
তুর্কি সিরিজ আরতুগ্রুলে মজেছেন ভারতের মুসলিমরা
07 Oct 20200টিমুসলিম বিশ্বে দারুণভাবে সাড়া ফেলে তুরস্কের টিভি সিরিজ দিরিলিস: আরতুগ্রুল। এখন কাশ্মীরসহ ভারতের মুসলি...আরও পড়ুন »
আবারো ভাইরাল শাহরুখকন্যার ছবি
07 Oct 20200টিমুম্বাই, ৭ অক্টোবর- উষ্ণতায় ভরা চোখ ঝলসানো ছবি শেয়ার করে ফের ভাইরাল হলেন বলিউড বাদশাহর কন্যা সুহানা ...আরও পড়ুন »
এবার সুশান্ত-ভক্তের আত্মহত্যার হুমকি
07 Oct 20200টিমুম্বাই, ০৭ অক্টোবর- বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর প্রায় চারমাস পার হলেও এখন পর্যন্ত তা...আরও পড়ুন »
প্রায় একমাস পর জামিন পেলেন রিয়া চক্রবর্তী
07 Oct 20200টিমুম্বাই, ০৭ অক্টোবর- ৯ দিন জেলে কাটিয়ে অবশেষে জামিন পেলেন সুশান্ত সিং রাজপুতের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্...আরও পড়ুন »
কাজলের বাগদান সম্পন্ন, বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন ৩০ অক্টোবর
07 Oct 20200টিমুম্বাই, ৭ অক্টোবর- তামিল, তেলেগু ও হিন্দি ছবির জনপ্রিয় অভিনেত্রী কাজল আগারওয়ালের বিয়ের গুঞ্জন শোনা ...আরও পড়ুন »
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.