অলরাউন্ডার এমন একজন ক্রিকেটার যিনি নিয়মিত ব্যাটিং এবং বোলিং ভাল খেলে থাকেন। যদিও সব বোলাররা ব্যাট করতে পারেন এবং কিছু কিছু ব্যাটসম্যান মাঝে মধ্যে বল করেন; অধিকাংশ খেলোয়াড় দুটি বিষয়ের মধ্যে শুধুমাত্র একটি দক্ষ হয় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। কিন্তু কিছু উইকেটরক্ষকের মধ্যে একজন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানের দক্ষতা থাকে এবং তাদেরকে অলরাউন্ডার হিসেবে উল্লেখ না করে কিন্তু শব্দটি উইকেটরক্ষক কাম ব্যাটসম্যান হিসেবে বলা যায়। সর্বশ্রেষ্ঠ অল-রাউন্ডারদের তালিকার মধ্যে রয়েছেন ইমরান খান, জর্জ হার্স্ট, উইলফ্রেড রোডস, ক্রিস কেয়ার্নস, শন পোলক, কিথ মিলার, গ্যারফিল্ড সোবার্স, ইয়ান বোথাম, জ্যাক ক্যালিস, কপিল দেব, রিচার্ড হ্যাডলি, ডব্লিউ. জি. গ্রেস, মুশতাক মোহাম্মদ, ল্যান্স ক্লুজনার, ওয়ালি হ্যামন্ড, অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ, সাকিব আল হাসান, ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, শহীদ আফ্রিদি, এবং আব্দুল রাজ্জাক। চলুন জেনে নেই বিশ্বসেরা ১০ অলরাউন্ডারের সম্পর্কে: ১. জ্যাক ক্যালিস (দক্ষিন আফ্রিকা): সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে বিবেচিত এই কিংবদন্তী প্রায় দুই দশক ধরে ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইন আপের স্তম্ভ। টেস্টে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হবার সাথে ক্যারিয়ারে ৫৬৫ উইকেট নিয়ে ১৮ বছরের বর্নাঢ্য ক্যারিয়ারের ইতি টানেন জ্যাক ক্যালিস। ২. শহিদ আফ্রিদি (পাকিস্তান) : এক সময় মারমার কাটকাট ব্যাটিং এর প্রতিমূর্তি হয়ে যাওয়া শহিদ আফ্রিদির পারফরম্যান্স সবসময়ই অনিশ্চিতার জালে আবদ্ধ। তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ৮০০০ ওডিআই রানের পাশাপাশি ৩৯৫ উইকেট। টেস্ট ও ওডিআই থেকে অবসরে গেলেও অভিষেকের ২০ বছর পরও এখনো প্রতাপে খেলে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি। ৩. ইমরান খান (পাকিস্তান): পাকিস্তান ক্রিকেটের পুনর্জন্ম যার হাত ধরে সূচিত তিনি আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার ইমরান খান। ৩৯ বছর বয়সে ক্যারিয়ারের গোধূলি লগ্নে এসেও দোর্দাণ্ড প্রতাপে পাকিস্তানকে জিতিয়েছেন ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ। টেস্টে ইয়ান বোথামের পর দ্রুততম ৩০০০ রান ও ৩০০ উইকেটের রেকর্ড এখনো তার দখলে। সর্বমোট ৩৬২ উইকেটের সাথে ৬ টি সেঞ্চুরিতে গড় ৩৮ এর বেশি সত্যিই ঈর্ষনীয়। সহজাত প্রতিভা, অসাধারণ ব্যাক্তিত্ব দিয়ে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন দর্শকপ্রিয়তার স্বর্ণচূড়ায়।পাকিস্তান ক্রিকেটে তার অবদান চিরস্মরনীয়। প্রায় ২০ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গন দাপিয়ে অবসর নেন এই পাকিস্তান কিংবদন্তী। ৪. ক্রিস কেয়ার্নস (নিউজিল্যান্ড): নব্বই দশকের শেষ ও নতুন শতাব্দীর শুরুতে বেশ কয়েকজন ধারাবাহিক পারফর্মারের মিশেলে দারুণ একটি দল পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু তার মধ্য থেকে যেকোন মুহুর্তে বল কিংবা ব্যাট হাতে একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার দক্ষতায় আলাদাভাবে সবার নজর কেড়েছিলেন ক্রিস কেয়ার্নস। আরও পড়ুন: টানা ৪ দিন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিলাম : স্মিথ ৫. স্যার গ্যারি সোবার্স (ওয়েস্ট ইন্ডিজ): বারবাডোজে জন্ম নেয়া এই ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তীকে অনেকেই ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার বলে মনে করেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বপ্রথম এক ওভারে ছয় ছক্কার রেকর্ড গড়া সোবার্স ৫৭.৭৮ এর ঈর্ষনীয় গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছেন ৯৩ টেস্ট। প্রথমে বোলার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও আস্তে আস্তে ব্যাটিংয়েও সমানভাবে দক্ষতা দেখাতে শুরু করেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে তার করা ৩৬৫ রানের ইনিংসটি তখনকার সময়ে টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড হয়ে টিকে ছিলো অনেকদিন। ২৬টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৬বার ৫ উইকেট শিকারসহ ২৩৫ টেস্ট উইকেটই বলে দেয় কতটা বৈচিত্রময় খেলোয়াড় ছিলেন সোবার্স। বাহাতি স্পিনার সোবার্সকে মাঝে মধ্যেই দেখা যেত পেস বোলার হিসেবে ইনিংস শুরু করতে। তাছাড়া তিনি একজন দুর্দান্ত ফিল্ডারও ছিলেন। তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিচরণের বয়স ছিল ২০ বছর। ৬। শন পোলক (দক্ষিণ আফ্রিকা): অ্যালান ডোনাল্ডের নতুন বলের সঙ্গী শন পোলক তার দুই দিকেই বল সুইং করানোর অসাধারণ দক্ষতা নিয়ে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলে। শোয়েব আখতার, ব্রেট লিদের মতো গতি না থাকলেও দুর্দান্ত লাইন ও লেন্থ বজায় রেখে ধারাবাহিকভাবে ভালো বল করার সামর্থ্যে তার জুড়ি মেলা ভার। তার ৪২১ টি টেস্ট উইকেট দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ এখনো পর্যন্ত। লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিংয়ে নেমে ম্যাচ বের করে আনার সাথে সাথে দ্রুত রান তোলার ক্ষমতা তাকে দিয়েছে অলরাউন্ডারের মর্যাদা। দুটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৩২ গড়ের টেস্ট ক্যারিয়ার অন্তত সে সাক্ষ্যই দেয়। পিঠের ইনজুরিতে পড়ে মাত্র ৩৪ বয়সে অবসর নিয়ে নিলেও তার আগে শন পোলক পার করেছেন ১৩ বছরের রঙ্গীন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। ৭। কপিল দেব (ভারত) : ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার কপিল দেবের হাত ধরেই এসেছিল ১৯৮৩ এর বিশ্বকাপে ভারতের শিরোপা সাফল্য। ১৩১ টেস্ট ও ২২৫ ওয়ানডে খেলা কপিল দেব যখন রিচার্ড হ্যাডলিকে টপকে টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন ততোদিনে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার বয়স ১৭ পেরিয়েছে। যা একজন ফাস্ট বোলারের জন্য আশ্চর্যজনকই বটে। খুব কম ম্যাচেই তাকে ইনজুরির জন্য বসে থাকতে দেখা গেছে। তার ব্যাটিং দক্ষতাও ছিল দেখার মতো। কখনো কখনো লোয়ার অর্ডারে নেমে একাই খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারতেন কপিল। ১৯৮৩ এর বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৭ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাবার পর তার ১৩৮ বলে ১৭৫ রানের ইনিংসটি আধুনিক ক্রিকেটেরই সেরা ইনিংসগুলোর একটি। অবসরে যাবার সময় তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছিল নয়টি আন্তর্জাতিক শতক। ৮। ড্যানিয়েল ভেট্টরি (নিউজিল্যান্ড): অবসরের পুর্বে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কিউই দলে নিয়মিত এই চশমাধারী খেলোয়াড় মাত্র ১৮ বছর বয়সে সবচেয়ে কম বয়সী কিউই ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে অভিষিক্ত হন। নির্ভুল লাইন, লেন্থ আর বৈচিত্রে ভরা বোলিংয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঘায়েল করেছেন ৬৬৭ জন ব্যাটসম্যানকে। টেস্টে ৩০০ উইকেট আর ৩০০০ রান করা দুর্লভ ৮ জন ক্রিকেটারের মধ্যে অন্যতম ভেট্টরি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন কার্যকর মিডল-লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে। ছয় সেঞ্চুরির সাথে ৩০ গড় নিয়ে টেস্টে তার অর্জন ৪০০০ এরও বেশি রান। ৮ নাম্বারে ব্যাট করে একদিনের ক্রিকেটে তার ৪ টি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংসও আছে। আরও পড়ুন: ধোনির মতো ফিট হতে চান! জেনে নিন মাহির ডায়েট চার্ট ৯। ইয়ান বোথাম (ইংল্যান্ড): ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা এই অলরাউন্ডার নিজের মাঠের পারফরম্যান্স আর অসাধারণ ব্যাক্তিত্ব দিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন ইংল্যান্ডের মহাতারকার আসনে। ১০। রিচার্ড হ্যাডলি (নিউজিল্যান্ড): বর্তমান সময়ে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের যত অর্জন বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে তার জন্য কিউইরা চিরকাল ঋনী থাকবে স্যার রিচার্ড হ্যাডলির কাছে। তথ্যসূত্র: বিডি২৪লাইভ আরএস/০৯:০০/ ০৫ জুন
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2kOEa3d
June 05, 2018 at 08:07PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন