বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন সবচেয়ে আলোচিত নাম স্টিভ রোডস। দেরাদুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে যখন সাকিব আল হাসানরা তৃতীয় ওয়ানডে খেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখনই ঘোষণা আসে সাবেক ইংলিশ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান স্টিভ রোডসকে ২ বছরের জন্য কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ। রোডসকে নিয়োগ দেয়ার মধ্য দিয়ে সাত মাসধরে বাংলাদেশ দলের কোচশূন্যতার অবসান ঘটলো। সর্বশেষ চারমাসে হন্যে হয়ে যেভাবে কোচ খুঁজছিল বিসিবি কর্মকর্তারা, সে থেকেও মুক্তি মিললো তাদের। গ্যারি কারস্টেনের পরামর্শে শেষ পর্যন্ত সাকিব-তামিমদের জন্য একজন হেডমাস্টার পেয়ে গেলো বাংলাদেশের ক্রিকেট। তবে, কোচের আলোচনায় হঠাৎ স্টিভ রোডসের নাম উঠে আসায় সবাই অবাক। কারণ, খুব কম মানুষই চেনে এই ইংলিশ ক্রিকেটারকে। প্রোফাইল ঘাঁটতে গিয়ে দেখা যাবে, মাত্র ২২টি টেস্ট খেলেছেন তিনি। ওয়ানডে খেলেছেন মাত্র ৯টি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মোটেও সমৃদ্ধ নয়। এমন একজনকে হঠাৎ কেন বিসিবি কোচ নিয়োগ দিয়ে দিলো! তাও, আগামী বিশ্বকাপকে সামনে রেখে! হোক, ইংল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপ। তাই বলে এমন আনকোরা, কোনো জাতীয় দলকে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা নেই- এমন একজনকে কোচ নিয়োগ দেয়া নিয়ে কৌতুহলের কমতি নেই বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের। তবে, বিসিবির ওপর সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীর আস্থার জায়গাও রয়েছে। কারণ, ২০১৪ সালে যখন চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়, তখনও তার পরিচিতি ছিল শূন্যের কোঠায়। খুব কম লোকই তাকে চিনতো। হাথুরুরও বাংলাদেশে আসার আগে কোনো জাতীয় দলকে কোচিং করাননি। বাংলাদেশই ছিল তার প্রথম কোনো জাতীয় দল। স্টিভ রোডসের বেলায়ও একই অবস্থা। গত মার্চেই স্টিভ রোডসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বিসিবি প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন। এরপর গ্যারি কারস্টেনও এসে স্টিভ রোডসের কথা বলে গেছেন বিসিবি কর্মকর্তাদের। বিসিবির শর্ট লিস্টের শীর্ষে ছিল রোডসের নামই। কারস্টেনও তার কথা বলে গেলেন। সুতরাং, দুয়ে দুয়ে চার মিলে গেলো। বিসিবি ইন্টারভিউর জন্য আহ্বান করলো স্টিভ রোডসকে। সঙ্গে বলা হলো, একটি প্রেজেন্টেশন দেয়ার জন্য। অবশেষে স্টিভ রোডস এলেন এবং প্রেজেন্টেশন দিলেন। বিসিবিও সন্তুষ্ট এবং দুই বছরের জন্য চুক্তি করে ফেললো রোডসের সঙ্গে। ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের টেস্ট অভিষেক হয়েছে ১৯৯৪ সালের জুনে। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত খেলেন ১১ টেস্ট। এক বছরেরও কম ক্যারিয়ারে ইতি ঘটে ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ১৯৮৯ সালে ওয়ানডে অভিষেক ঘটে। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত চলে তার ওয়ানডে ক্যারিয়ার। খেলেন মাত্র ৯ ম্যাচ। তবে প্রথম শ্রেণীর ক্যারিয়ার ছিল খুবই সমৃদ্ধ। কাউন্টিতে উস্টারশায়ারের হয়ে খেলেছেন দীর্ঘদিন। ১৯৮৫ সাল থেকে ২০০৪ পর্যন্ত খেলেছেন কাউন্টির এই দলটিতে। এর আগে ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত খেলেছিলেন ইয়র্কশায়ারে। সব মিলিয়ে ৪৪০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। রান করেছেন ১৪ হাজার ৮৩৯। ১২টি সেঞ্চুরি এবং ৭২টি হাফ সেঞ্চুরি। ওয়ানডে খেলেছেন ৪৭৭টি। রান করেছেন ৪৩৬২। ১টি সেঞ্চুরির সঙ্গে ৬টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তার। তবে খেলোয়াড় পরিচিতির চেয়ে কাউন্টিতে কোচ হিসেবে বেশ নামডাক রয়েছে ৫৪ বছর বয়সী স্টিভ রোডসের। ২০০৬ সাল থেকে উস্টারশায়ারের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন রোডস। তার সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, প্রতিভা বাছাই করতে পারার অসাধারণ ক্ষমতা। এই ক্ষমতার কারণেই ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটে তার বিশেষ নামডাক রয়েছে। তার কোচিংয়ে উস্টারশায়ারকে কাউন্টি ক্রিকেটের ডিভিশন ওয়ানে তুলে আনেন স্টিভ রোডস। যদিও উস্টারশায়ার গত বছর (২০১৭ সালে) তাকে কোচের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে দেয়। আবার ইংল্যান্ড-১৯ দলের কোচের পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয় ঠিক অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের আগে। মজার বিষয় হলো বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটে স্টিভ রোডসের অধীনে খেলে এসেছেন উস্টারশায়ারের হয়ে। ২০১১ মৌসুমে এই উস্টারশায়ারের হয়েই কাউন্টি খেলতে গিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। তখন যথারীতি সাকিবদের কোচের দায়িত্বে রোডসই ছিলেন। সাকিব উস্টারশায়ারে দুই মৌসুমে ২৬টি ম্যাচ খেলেছেন। এবার দেখার বিষয়, সাকিব-রোডস জুটি কতটা ক্লিক করতে পারে। সূত্র: জাগোনিউজ২৪ আর/১০:১৪/০৭ জুন



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2sEyYDy
June 08, 2018 at 06:03AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top