দিসপুর, ৩১ জুলাই- ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আসাম রাজ্যে নাগরিক তালিকার চূড়ান্ত খসড়া থেকে ৪০ লাখ লোকের নাম বাদ পড়ার পর তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানায়, কেন্দ্রীয় সরকার মুখে বলছে এখনই ভয় পাওয়ার কিছু নেই, বাদ পড়ে যাওয়া ব্যক্তিরা আপিল করার যথেষ্ট সুযোগ পাবেন। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মতো আসামের প্রতিবেশি রাজ্যের অনেকেরই আশঙ্কা যে আসামে অত্যাচারের মুখে পড়ে এই লাখ লাখ মানুষ পালাতে বাধ্য হবেন। পর্যবেক্ষকরাও মনে করছেন, এতো বিপুল সংখ্যক মানুষকে ডিটেনশন সেন্টার বা আটক কেন্দ্রে রাখা সম্ভব নয়। আবার এদের কাউকেই বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোও যাবে না। রাতারাতি রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়া মানুষগুলোর জন্য কেমন ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে সেটাই এখন প্রশ্ন। আসলে আসামে নাগরিক তালিকা বা এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে ৪০ লাখ মানুষের নাগরিকত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, তারা স্বাধীন ভারতে এখন কিভাবে থাকবেন তার কোনো স্পষ্ট উত্তর নেই। এখনই তাদের এতো ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই, শুধু এটুকুই আশ্বস্ত করছেনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। রাজনাথ সিং বলেন, কেউ কেউ অযথা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছেন, অপপ্রচার চালাচ্ছেন। কিন্তু আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই- ভয়ের কোনো কারণ নেই! কেউ যদি ঠিকমতো কাগজপত্র না দিতে পারেন, তারা আবার সেই সুযোগ পাবেন। এমনকি চূড়ান্ত তালিকাতে নাম না থাকলেও ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে যেতে পারবেন। আর এর মাঝে তাদের ভয়-ভীতি দেখানোর কোনো প্রশ্নই ওঠে না যোগ করেন তিনি। আসাম লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দল আজ এই ইস্যুতে পার্লামেন্ট অচল করে দিয়েছে। তিনি আশঙ্কা করছেন, আসাম থেকে এবার এই মানুষগুলোকে বিতাড়নের চেষ্টা হবে। কলকাতায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, তাদের ওপর যে কী অত্যাচার চলবে, আর কী হবে আমরা জানি না। কিন্তু সেটা চিন্তা করেই আমরা খুব বিচলিত। আসলে দেশে থেকে যারা আজ দেশেই রিফিউজি হয়ে গেল, তারা তো আমাদেরই ভাইবোন, তাই আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। এটা আসলে বাঙালি খেদাও চলছে। আর শুধু বাংলাভাষীরাই বা কেন, বিহারি খেদাওতো চলছে। আর এতে সবচেয়ে বিপদে পড়বে বাংলাদেশ। কারণ পুশব্যাক যদি করতে চায়, আর বাংলাদেশ তাদের নিতে না চায়, তাহলে এই লোকগুলো যাবে কোথায়? প্রশ্ন রাখেন মমতা। তিনি আরও বলেন, এত বড় একটা জিনিস করার আগে সরকার কি একবারও ভেবেছে এই ৪০ লাখ লোক কোথায় যাবে? দিল্লির ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালিসিসের ফেলো পুষ্পিতা দাস বলেন, এখনও পর্যন্ত সরকারি নীতি খুবই অস্পষ্ট। আমরা বিশেষ কিছু জানি না। এমনকি সরকার কী করবে নিজেও জানে কিনা সন্দেহ! তাদের প্রস্তুতি বলতে এটুকুই যে এই লোকগুলোকে হয়তো ডিটেনশন সেন্টারে আটক করা হবে। কিন্তু মুশকিল হলো- এতো লাখ লাখ লোককে সেন্টারে আটক রাখা সম্ভবই নয়। কেন্দ্র যদিও মুখে বলে যাচ্ছে আমরা ডিটেনশন সেন্টার তৈরি করতে আসামকে টাকা দিয়েছি, রাজ্য সরকার বানাবে ইত্যাদি ইত্যাদি- কিন্তু বাস্তবতা হল এতো বিপুল সংখ্যক লোককে আপনি কিভাবে সেন্টারগুলোতে রাখবেন? যোগ করেন তিনি। আসামে যারা এনআরসি তালিকাভুক্ত হতে পারছেন না, তাদের সাধারণভাবে অবৈধ বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও বাংলাদেশে তাদের ফেরত পাঠানোর যে কোনো সম্ভাবনাই নেই, সেটাও স্পষ্ট করে দিচ্ছেন ড. পুষ্পিতা দাস। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিষ্কার বলে দিয়েছে এরা তাদের লোক নয়, তারা নিতেও পারবেন না। অনানুষ্ঠানিক পর্যায়ে ভারত সরকারও বন্ধু-প্রতিম বাংলাদেশকে আশ্বাস দিয়েছে এনআরসি নিয়ে তারা এমন কিছু করবে না যাতে বাংলাদেশের সমস্যা হয়। ফলে আমরা তাদের ফেরত পাঠাতে পারব না- এটাই পরিষ্কার কথা! ড. পুষ্পিতা দাস মনে করেন, সম্ভবত প্রথমে তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে পরে ন্যাচারালাইজেশনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেয়া হবে। এতে ১০-১২ বছর হয়তো সময় লাগবে, কিন্তু পরে এরা অ্যামনেস্টি বা সাধারণ ক্ষমা পেয়ে ভারতের নাগরিক হয়ে যাবেন। আবার, তাদের ধীরে ধীরে আসাম থেকে সরিয়ে অন্য সব রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হতে পারেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। এভাবে এই সমস্যার চাপটা একা আসামকে সামলাতে হবে না। তবে এগুলো সবই সম্ভাবনা মাত্র। আর তার বাস্তবায়নে অনেক সময়ও লাগবে। কিন্তু এই মুহূর্তে রাজ্য সরকারের প্রধান দুশ্চিন্তা হচ্ছে আসামে যাতে কোনো দাঙ্গা-হাঙ্গামা ছড়িয়ে না পড়ে। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল তালিকা প্রকাশের পর পরই জানান, আসাম তার শান্তি ও সম্প্রীতির ঐতিহ্য এখনো বজায় রাখবে বলেই তিনি আশাবাদী। পরবর্তী পদক্ষেপের ক্ষেত্রেও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকাই আমরা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলব। তারা যেভাবে যেভাবে বলবেন, আমরাও সেই অনুযায়ী চলব বলেন তিনি। আসামে এনআরসি তৈরির উদ্যোগ যে তাদের নয়, বরং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই- কেন্দ্রের ও আসামের বিজেপি সরকার বারবার সে কথা বলারই চেষ্টা করছে। তালিকা থেকে বাদ পড়া মানুষদের কী হয়ে তা নির্ধারনের দায়ও যে তারা এখন শীর্ষ আদালতের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন সেটা পরিষ্কার। সূত্র: পরিবর্তন আর/০৭:১৪/৩১ জুলাই
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2Ow2q8b
July 31, 2018 at 02:09PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন