ঢাকা, ০২ জুলাই- বেকার হচ্ছেন ঢালিউডের নায়ক-নায়িকারা। কারণ ছবির অভাব। ঢাকাই চলচ্চিত্রে ছবির খরা চলছে এবং যুগেরও বেশি সময় ধরে। ২০০৬ সালের পর থেকে ছবি নির্মাণ কমতে থাকে। একসময় বছরে ১০০ ছবিও নির্মাণ হয়েছে। ২০০৬ সালের পর থেকে এই সংখ্যা কমতে থাকে। কোনো বছর অর্ধশতেরও কম ছবি মুক্তি পেয়েছে। চলচ্চিত্র নির্মাণ কমে যাওয়ায় নায়ক-নায়িকারা অনেক আগে থেকেই বেকার হতে শুরু করেছেন। ছবির অভাবে অনেক নায়ক-নায়িকাই বাধ্য হয়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। শুধু নায়ক-নায়িকাই নয়, ছবির অভাবে অনেক নির্মাতাও অন্য পেশায় চলে গেছেন। চিত্রনায়ক রিয়াজ ২০০৮ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রে সরব ছিলেন। এরপর ছবির অভাবে ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। শুরু করেন স্পিরুলনা ভিত্তিক শরবত, নুডলসের ব্যবসা। এই ব্যবসার পাশাপাশি একটি আবাসন কোম্পানিতে কিছুদিন চাকরিও করেন। এরপর আবার রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ও যুক্ত হন তিনি। চিত্রনায়ক ওমর সানি নব্বইয়ের দশকে বড় দাপিয়ে বেড়ান। পরে ছবির অভাবে তিনিও ব্যবসায় মনোযোগ দেন। একসময়ের দর্শকপ্রিয় নায়ক শাকিল খানও ছবির অভাবে ফিরে যান গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে। সেখানে এল এম এল ব্যবসায় যুক্ত হয়ে পড়েন তিনি। জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবনূর রাজধানীতে একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল খুলেছেন। নায়িকা রেসি আর নিপুণ খুলেছেন বিউটি পারলার। বাপ্পারাজের রয়েছে বায়িং হাউসের ব্যবসা। মিষ্টি জান্নাতের রয়েছে খাবার আর কাপড়ের দোকান। ছবির অভাবে অন্য পেশায় যাওয়া বা বেকার হয়ে পড়া শিল্পীর তালিকা অনেক দীর্ঘ। সিনেমা হল মালিকদের কথায়, নায়কদের মধ্যে একমাত্র শাকিব খানের ছবি চালালে অর্থের মুখ দেখা যায়। ঢালিউডের ছবি সংকটে শাকিব খানই একমাত্র ভরসা হয়ে আছে। এক যুগেরও বেশি সময়। এরপরের কাতারে আরিফিন শুভ, বাপ্পী ও সায়মন ছাড়া আর কারও ছবি চলে না। নায়িকাদের মধ্যে বর্তমানে মাহি, পরী, বুবলী, জয়া, ববি, নুসরাত ফারিয়ার ছবির চাহিদা রয়েছে। আসলে এসব নায়ক-নায়িকা এখন যেসব ছবি নির্মাণ হয় তাতে সুযোগ পান। নির্মাতারা তাদের নিয়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ফলে যেসব ছবি নির্মাণ হচ্ছে তাতে হাতেগোনা নায়ক-নায়িকাই ঘুরে-ফিরে কাজ পাচ্ছেন। বাকিরা বেকার হয়ে পড়েছেন। শুধু নায়ক-নায়িকাই নন, ছবির অভাবে বেকার হয়ে পড়া নির্মাতাদের তালিকাও নেহায়েত ছোট নয়। সম্প্রতি অর্ধশতাধিক ছবির নির্মাতা দীর্ঘসময় ধরে হাতে ছবি না থাকা শাহাদাৎ হোসেন লিটন পুরোদস্তুর গাড়ি ব্যবসায়ী হয়ে গেছেন। প্রখ্যাত আরেক নির্মাতা মনতাজুর রহমান আকবর গ্রামের বাড়িতে মঞ্চনাটক আর যাত্রাপালা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। অনেক নির্মাতা আবার চাকরি আর ব্যবসা নিয়ে বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন। চলচ্চিত্র সাংবাদিক ও গবেষক অনুপম হায়াতের কথায় নব্বই দশকের শেষ ভাগে এসে দেশীয় চলচ্চিত্রকে অশ্লীলতা গ্রাস করলে উচ্চ থেকে মধ্যবিত্তের দর্শক সিনেমা হলে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে মহিলারা আর সিনেমা হলে যায় না। সপরিবারে সিনেমা দেখার কালচারও শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে সিনেপ্লেক্সগুলোতে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত এবং পরিবার নিয়ে দর্শক যাচ্ছে। কিন্তু দেশে ঢাকায় মাত্র কয়েকটি সিনেপ্লেক্স রয়েছে। ছবির অভাবে সিনেমা হলের সংখ্যা ১২৫০ থেকে কমে এখন ২৫০-এর কোঠায় এসে ঠেকেছে। সিনেমা হল কমে যাওয়ায় বর্তমানে যে পরিমাণ বাজেট দিয়ে ছবি নির্মাণ করলে ছবিটি চলবে তা আর হচ্ছে না। কারণ হাতেগোনা সিনেমা হলে ছবি চালিয়ে লগ্নিকৃত অর্থ তুলে আনা যায় না। ফলে ছবি নির্মাণে কোনো প্রযোজক আর আগের মতো এগিয়ে আসতে চায় না। বেশিরভাগ নামি-দামি চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ছবির অভাব দিনে দিনে বাড়ছে আর বেকার হচ্ছে নায়ক-নায়িকারা। সিনিয়র আর সহশিল্পীদের অবস্থা এখন ছবির অভাবে সবচেয়ে শোচনীয়। সিনিয়র আর সহশিল্পীদের মধ্যে বৃহৎ একটি অংশ এখন অসহায় আর মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন আর/০৭:১৪/০২ জুলাই



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2IJtSuQ
July 02, 2018 at 04:06PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top