গায়ানা, ২৮ জুলাই- টেস্ট সিরিজের হতাশা দূরে ঠেলে দাপুটে খেলেই প্রথম ওয়ানডে ম্যাচটা জিতেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচেও জয়ের পথেই ছিল। জয়টা এসে গিয়েছিল হাতের মুঠোয়। কিন্তু শেষ দিকে স্নায়ুর চাপটা নিতে পারেননি মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমানরা। ৩ রানের নাটকীয় জয়ে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আজ তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাই অলিখিত ফাইনাল। কে জিতবে সিরিজ- বাংলাদেশ, না ওয়েস্ট ইন্ডিজ? জবাব মিলবে আরো কয়েক ঘণ্টা পর। সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শুরু হবে ম্যাচটি। গায়ানায় দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ের জন্য একটা সময় বাংলাদেশের দরকার ছিল ৩০ বলে ৪০ রান। ক্রিজে তখন ৮৭ রানের জুটিতে অবিচ্ছিন্ন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। ৪৫তম ওভারের প্রথম বলে অহেতুক একটি রান নিতে গিয়ে রান আউটে মাহমুদউল্লাহ উইকেট বিসর্জন দিয়ে আসেন। মুশফিকের নতুন সঙ্গী হিসেবে ক্রিজে গিয়েছিলেন সাব্বির। দুজন ম্যাচটা শেষ করে আসবেন বলেই আশা করেছিল সবাই। কিন্তু তারা পারেননি। ৬ উইকেট হাতে নিয়ে বাংলাদেশের ৭ বলে যখন প্রয়োজন ৮ রান, তখন কিমো পলের ফুলটসে সুইপের মতো শট খেলে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাব্বির। শেষ ওভারে জেসন হোল্ডারের ফুলটসে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে একই ভাগ্য বরণ করতে হয় মুশফিককেও। পরের দুটি বলে রানই নিতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের সঙ্গী ৩ রানের হার। বিদেশের মাটিতে এত কম রানে আর কোনো ওয়ানডে হারেনি বাংলাদেশ! ২০১১ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫ রানের হার ছিল আগের রেকর্ড। সাত বছর আগের সেই ম্যাচেও শেষ ওভারে আউট হয়েছিলেন মুশফিক! শেষ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল ৮ রান। প্রথম বলে ডাবল নিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন মুশফিক। পরের বলে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি আউট হলে হেরে যায় বাংলাদেশ। জয় হাতের মুঠোয় পেয়েও শেষ ওভারে মুশফিকের আউট আর হারের হতাশা- এমন নজির তো কম নেই। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুতে ভারতের বিপক্ষে ১ রানের হার বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেই বড় দুঃখগাঁথা। এ বছর দেরাদুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও বাংলাদেশ সঙ্গী করে আরেকটি ১ রানের হার। শেষ ওভারে মুশফিকের কী যে হয়, কে জানে! গায়ানায় মুশফিক ৬৮ রান করার পরও হারের জন্য তার যেমন দায় আছে, দায় আছে আরো অনেকেরই। তবে সবচেয়ে বড় দায়টা দেওয়া যায় তরুণদের। সিনিয়রদের মতো তরুণরা জ্বলে উঠতে পারছেন না, এ সমস্যাটা বাংলাদেশের ক্রিকেটে গত কয়েক বছর ধরেই। মাশরাফি এখন শুধু ওয়ানডে খেলেন। সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ খেলেন তিন ফরম্যাটে। বাংলাদেশের ব্যাটিং ভরসাও এই চারজনই। প্রথম ওয়ানডের কথাই ধরুন। বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে তুলেছিল ২৭৯ রান। এর মধ্যে তামিম (১৩০), সাকিব (৯৭) ও মুশফিকের (৩০) ব্যাট থেকেই এসেছিল ২৫৭! দলে ফেরা এনামুল হক করেছিলেন শূন্য, সাব্বির ৪ বলে ৩। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২৭১ রান তাড়ায় বাংলাদেশ করেছিল ২৬৮। যার ২১৭ রানই আসে তামিম, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে। এনামুল, সাব্বির, মোসাদ্দেকের সম্মিলিত রান ৩৮! এর মধ্যে মোসাদ্দেক শুধু অপরাজিত ছিলেন। কিন্তু শেষ ওভারে ফিনিশারের দায়িত্বটা তিনি পালন করতে পারেননি। বরং পরপর দুটি ডট বল খেলে দলের ওপর চাপ আরো বাড়িয়েছেন। ম্যাচ জেতানোর এমন সুযোগ কি প্রতিদিন পাবেন মোসাদ্দেক? গায়ানার দুঃস্বপ্ন ভুলে আজ সেন্ট কিটসে ঘুরে দাঁড়াতে হবে বাংলাদেশকে। কাজটা বেশ কঠিন। সেন্ট কিটসের উইকেট গায়ানার মতো ধীরগতির হয়ত হবে না। মাঠও অনেক ছোট। এখানে হয়ত রানের ফোয়ারা ছুটবে। যদিও গত দুই বছরে এখানে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়নি, সবশেষ ওয়ানডে ম্যাচটাও ২০১২ সালে। তবে প্রথম দুই ম্যাচে খোলসে বন্দী থাকা ক্রিস গেইল, এভিন লুইসের মতো বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান এই মাঠে তাদের চিরচেনা বিধ্বংসী রুপে দেখা দিতে পারেন। দ্বিতীয় ম্যাচের জয়টা তাদের আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়ে দিয়েছে। সে ম্যাচে শেষ দিকে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করতে ব্যর্থ হয়েছেন রুবেল, মুস্তাফিজরা। আজ তাদের দিতে হবে আরো কঠিন পরীক্ষা। আজ বাংলাদেশের একাদশ হয়ত আগের ম্যাচেরটাই থাকবে। এনামুল প্রথম ম্যাচে ডাক মারলেও পরেরটায় ঝড় তুলেছিলেন। শুধু সাব্বিরের জায়গাটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দুই ম্যাচে সাব্বিরের মাত্র ১৫ রান সে কথাই বলছে। দলে ব্যাটসম্যান হিসেবে আছেন লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত। তারা যদিও কেউ মিডল অর্ডারের ফিনিশার না। সাব্বিরও তার কাজটা ঠিকমতো করতে পারছেন না। লিটন-শান্তর একজন আজ সাব্বিরের জায়গাটা নিলেও নিতে পারেন। টিম ম্যানেজমেন্ট ঝুঁকিটা নেবে কি না, সেটাই এখন দেখার। সূত্র: রাইজিংবিডি এইচ/১১:৫৫/২৮ জুলাই



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2uV7Pxn
July 28, 2018 at 06:06PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top