দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত হলো তিন দিনব্যাপী ‘তৃতীয় সিউল-বাংলা চলচ্চিত্র উৎসব’।

দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত হলো তিন দিনব্যাপী ‘তৃতীয় সিউল-বাংলা চলচ্চিত্র উৎসব’।BF756571-2524-4631-A030-449CAB9BCA7Aগত ২০ থেকে ২২ জুলাই দেশটির রাজধানী শহর সিউলের আরিরাং মিডিয়া সেন্টারের প্রেক্ষাগৃহে এ উৎসবের আয়োজন করেছে প্রবাসী সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন ইন কোরিয়া’।

আয়োজকরা জানান, স্থানীয় বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় এ উৎসবে চারটি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। এগুলো হলো তৌকির আহমেদের ‘হালদা’, ‘ডুব’, চলচ্চিত্র পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘স্বপ্নজাল’ ও আকরাম খানের ‘খাঁচা’।

বাংলাদেশের মানুষের মননে যে সাংস্কৃতিক চেতনা, তার হাল আমলের বৈচিত্র্যের বিশিষ্টতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো বাঙালির সংস্কৃতির ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্যের সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশের সভ্যতার বিকাশের যোগ আছে। আর সেই বিকাশের ধারাবাহিকতায় বঙ্গের যে অবদান তা জাতি হিসেবে আমাদের গর্বিত করে। সভ্যতা-সংস্কৃতির মাঝের ব্যবধানটি থাকা সত্ত্বেও একে অপরের পরিপূরক।

সাহিত্য-কলা, ব্যক্তি-সমাজের অন্তর্নিহিত বিশ্বাসের ভিত, সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অবয়ব, ব্যক্তি ও সমাজকেন্দ্রীক সামষ্টিক মূল্যবোধের নিরিখেই একটি জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতিবিম্বটি বিশ্ব-সভায় প্রস্ফুটিত হয়ে উঠে। সভ্যতার ধারনাটিও তদ্রূপ বিবেচনায় নিতেই হয়।

প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো যে সংস্কৃতি কখনোই সভ্যতার ইতিহাস নয়। বরং কৌতূহলি মানুষ যখনই সত্যকে জানতে চেষ্টা করেছে তখনই নব নব পন্থার উদ্ভব ঘটেছে জীবনকে সহজীকরণের নিমিত্তে। সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে আজকের ডিজিটাল যুগের উত্তরণ হলো সভ্যতার বিবর্তনের ধারায় বাঙালির আজকের উত্তরণের পর্যায়। বস্তু নির্ভরতার পর্যায়ক্রমিক বিবর্তনই হলো সভ্যতা।তবে সভ্যতার বিবর্তনের সঙ্গে বিকাশমান বস্তু-নির্ভরতার পাশাপাশি যে মানবিক উত্তরণের পর্যায়টি প্রভাবিত হয় তার অনুরণন সংস্কৃতিকে ধীরে ধীরে আরোও সংবেদনশীল ও মানবিক করে তুলে। বাঙালি জাতিসত্ত্বার বিকাশের ধারাবাহিকতার স্তরে স্তরে সেই সব সত্যের নিদর্শন আছে। তাই বলা যায় সংস্কৃতি হলো বহমান নদীর মতো। ভাঙ্গে, গড়ে নতুন নতুন সৌষ্ঠবে।

বাঙালি হিসেবে সামনে এসে দাঁড়ালেই তো বাঙালির বাঙালিয়ানার ষোলআনা দৃষ্টিগোচর হয় না। এ যেমন বিভূঁইয়ে বাঙালির জন্য সত্য তেমনি যেকোনো জাতিসত্ত্বার সাংস্কৃতিক পরিচয় পেতে হলে যুগ যুগ ধরে একটু একটু করে ওর শেকড়ের কাছাকাছি পৌঁছতে হয়। সে কি আর অতো সহজ? সহজ নয়। সেই জন্য প্রবাসীর সাংস্কৃতিক পরিচয়টি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অলক্ষ্যে হারায়।

আজকের উন্নত ডিজিটাল কৌশলের ব্যাপকতর প্রসারে অনেকেই তার জাতীয় সংস্কৃতির গভীর থেকে মূল্যবোধের ফল্গুধারাকে বিশ্ব সভায় উন্মুক্ত করে তুলেন অবলীলায়। সেই দুর্গম যাত্রার সংক্ষিপ্ততর পথের শেষটুকুতে উৎসুক কোরিয়বাসীকে পৌঁছে দেবার প্রয়াস নিয়েছে এখানকার গুটিকয় প্রবাসী তরুণের মেধা, সৃষ্টিশীলতা পরিশ্রম এবং না হারার দৃঢ়তর সংকল্প। যারা একত্রিত হয়েছেন ‘বাংলাদেশ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন ইন কোরিয়ার’ আঙ্গিনায়।

স্থানীয় বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় গত দুবছর ধরে তারা আয়োজন করে চলেছেন ‘সিউল-বাংলা চলচ্চিত্র উৎসব’। কোরিয়াতে বাঙালির সৃষ্টিশীলতা, দক্ষতা এবং সর্বোপরি শেকড়ের মায়াবী স্পর্শের কিছুটা আবেশ সেলুলয়েডে যাপিত জীবনের কান্না-হাসির ছোঁয়ার মধ্যদিয়ে ছড়িয়ে দেবার দীর্ঘদিনের প্রয়াস, আমাদের গর্বের প্রকাশ বলেই অনুভব করি। এবার তাদের তৃতীয় আসরের পালা। বরাবরের মতো স্থানীয় বাংলাদেশ দূতাবাসও সহযোগীর ভূমিকায় তাদের পাশে।তারুণ্যের এ উদ্যোগ বিভূঁইয়ে সৃষ্টি করে ক্ষণিকের তরে একটুকরো এটুকু অবয়বের স্বপ্নময় বাংলাদেশ। তবে এর জৌলুস বাড়াতে এখনো তাদের যেতে হবে অনেকটা পথ। সেজন্য যেমন দরকার আরোও মেধা, কর্মচঞ্চল হাতের রাশি রাশি সমাহার, তেমনি দরকার দাপ্তরিক ও আর্থিক সচ্ছলতার ভিত। যেমন দেশ থেকে তেমনি প্রবাসে প্রবাসী বাঙালির তরফেও এ অসামান্য অর্ঘ্যের প্রত্যাশী তারা।

আমাদের তারুণ্যের এ উদ্যোগ সফল করে তুলতে আমরা যেমন পাশে গিয়ে দাঁড়াবো আগত অতিথিদের সামনে নিজেদের পরিচয়কে সেলুলয়েডের ফিতেয় মুড়িয়ে উপস্থাপনের নিমিত্তে, তেমনি আহ্বান জানাবো দেশ থেকেও তারুণ্যের এ উদ্যোগকে উদ্বেলিত করে তুলতে।

সফল হোক ‘বাংলাদেশ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন ইন কোরিয়ার’ এ প্রয়াস ও প্রদর্শনী, সেলুলয়েডে উৎকীর্ণ বাঙলার মুখ।



from প্রবাস – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ https://ift.tt/2LaUgDW

July 21, 2018 at 06:33PM
21 Jul 2018

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top