মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর বেহাল দশা। যথা সময়ে সংস্কারকাজ না হওয়ায় সড়কগুলোর কার্পেটিং উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। সড়কগুলোর এমন করুণ অবস্থা থাকলেও তা না-দেখার ভান করে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট সবাই এমন অভিযোগ উপজেলাবাসীর। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১২টি আঞ্চলিক সড়কের বেহাল দশা। সড়কগুলো আঞ্চলিক পর্যায়ে হলেও উপজেলা সদরের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি মাধ্যম হচ্ছে এই সড়কগুলো। কিন্তু সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে সড়কগুলোতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে রয়েছে। এসব ভাঙাছুরা সড়ক দিয়ে সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা চলাচল করলেও যেন তাদের চোখের আড়ালে রয়েছে। ওই ভাঙছুরা ১২টি সড়কের অধিকাংশ সড়ক দিয়ে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাজারে যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল করতে হয়। তার মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ভেঙে ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যাত্রীরা নিরুপায় হয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে হলেও যাতায়াত করতে হচ্ছেন। জরুরী রোগী নিয়ে যাত্রাকালে অথবা জনসাধরণের চলাচলে অনেকটা ব্যাঘাত ঘটছে। প্রতিদিন চাকুরিজীবিসহ জরুরী কাজে বের হওয়া লোকজন সময় মতো গন্তব্যে পৌছাতে অধিক সময় হাতে নিয়ে বের হতে হয়।
আঞ্চলিক সড়কগুলোতে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হয়ে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। আর সামান্য বৃষ্টি হলেই মনে হয় সড়কগুলোতে যেনো মিনি পুকুরে ভরপুর। কোথাও কোথাও আবার সড়কে থাকা এসব গর্তগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় একটু দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেনো সাগরে জাহাজ চলার পরিবর্তে বাস-ট্রাক চলাচল করছে। এতে করে চরম সড়ক দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন উপজেলাবাসী।
সড়কগুলোতে চলাচলে জীবনের ঝুঁকি থাকলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজের জন্য সড়কগুলো দিয়ে মানুষকে বাধ্য হয়েই করতে হচ্ছে চলাচল। দূর্ভোগের সীমা না থাকলেও এসব সড়কগুলোতে জীবনের তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন রকমের যানবাহন চালাচ্ছেন চালকরা। যে কারণে প্রতিনিয়তই এসব সড়কগুলোতে ঘটছে ছোট-বড় একাধিক দূর্ঘটনা। আর বর্ষা মৌসুমে মানুষের দূর্ভোগ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি সড়ক দূর্ঘটনার পরিমানও বৃদ্ধি পায়।
উপজেলার বিভিন্ন সড়কগুলোর এমন করুণ দশায় সব চেয়ে বেশি দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছেন উপজেলার স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থী ও রোগীদেরকে। যানবাহন দিয়ে চলাচলের ক্ষেত্রে বেশি দূর্ভোগ পোহাতে হয় বলে উপজেলার অনেক এলাকায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা নিজেদের ফেলে আসা যৌবনকালের মতো পায়ে হেঁটেই পৌঁছান নিজের গন্তব্য স্থানে। আবার বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হলে ছোট ছোট অনেক যানবাহনের চালকরা আর্থিক ক্ষতি হওয়ার ভয়ে নিজের গাড়িটি চালানোই মাঝে মধ্যে বন্ধ রাখেন।
সরেজমিনে উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)’র আওতাধীন রামপাশা-বৈরাগী বাজার-সিঙ্গেরকাছ বাজার-টুকেরবাজার-রসুলগঞ্জ সড়ক, লামাকাজী বাজার-পরগনা বাজার-রাজাপুর-আকিলপুর সড়ক, বিশ্বনাথ নতুন বাজার-মুফতিরগাঁও স্কুল সড়ক, উত্তর মিরেরচর-ইলামেরগাঁও-পুরানগাঁও-হাসনাজি সড়ক, বিশ্বনাথ-হাবড়া বাজার-মাছুখালী বাজার-ছালিয়া সড়ক, হোসেনপুর-মুফঁতির বাজার-বাওয়ানপুর সড়ক, গোয়াহরী-সোনালী বাংলা বাজার-ইসবপুর-মুন্সিরগাঁও-ভূরকি বাজার সড়ক, বিশ্বনাথ-শ্রীধরপুর সড়ক, টুকেরকান্দি-টেংরা-লালাবাজার সড়ক, পনাউল্লাহ বাজার-মুন্সীর বাজার সড়ক, লালাবাজার-বেতসান্দি-মুন্সীর বাজার সড়ক, পঞ্চগ্রাম শাহী ঈদগাহ-ছোট খুরমা সড়ক, লালটেক তাহির আলী উচ্চ বিদ্যালয়-লিডিং ইউনির্ভাসিটি সড়ক, পীরেরবাজার-দশঘর-মাছুখালী বাজার সড়ক, রামপাশা-রাজাগঞ্জ বাজার-তেলিকোনা-খাজাঞ্চী স্টেশন সড়ক, দশঘর-সাড়ইল-একানারাইল সড়ক, রশিদপুর-সিরাজপুর সড়ক, বিশ্বনাথ-চান্দশিরকাপন সড়ক, পীরেরবাজার-বাউসী-মান্দারুকা-ধরারাই সড়ক, রশিদপুর-হিমিদপুর-ধর্মদা সড়ক, নাজির বাজার-পূর্ব শ্বাসসাম সড়ক, বিশ্বনাথ-পুরকায়স্থ বাজার-কুরুয়া বাজার সড়ক, রামপাশা ইউপি অফিস-শ্রীপুর-আশুগঞ্জ সড়ক, সিঙ্গেরকাছ বাজার-পশ্চিমগাঁও সড়ক, কালীগঞ্জ বাজার-মৌজপুর সড়ক, বৈরাগী বাজার-নওধার সড়ক, কালীগঞ্জ বাজার-বরইগাঁও-সদলপুর-তাজপুর সড়ক, নয়া বাজার-আতাপুর-কালীগঞ্জ বাজার সড়ক, রামধানা-কামালপুর সড়ক, হাবড়া বাজার-দশপাইকা বাজার সড়ক, রামাধানা-শেখেরগাঁও সড়ক, কালীগঞ্জ বাজার-কাদিপুর সড়কে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তে ভরপুর হয়ে জনসাধারণের চলাচলে দূর্ভোগের কারণ হয়েছে।
ওই সড়কগুলোর মধ্যে উপজেলা ৩টি ইউনিয়নের (বিশ্বনাথ সদর-রামপাশা-দৌলতপুর) সংযোগস্থাপনকারী ‘উত্তর মিরেরচর-ইলামেরগাঁও-পুরানগাঁও-হাসনাজি সড়ক’টি পাকাকরণের প্রায় ১৭ বছরে কোন সংস্কার হয়নি। হোসেনপুর-মুফঁতির বাজার-বাওয়ানপুর সড়কটি দীর্ঘ একযুগ ধরে গর্ত সৃষ্টি হতে হতে এখন বিলীন হওয়ার পথে। গর্তের কারণে বিশ্বনাথ-হাবড়া বাজার-মাছুখালী বাজার-ছালিয়া সড়কটিতে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে। বিশ্বনাথ নতুন বাজার-মুফতিরগাঁও স্কুল সড়কে সামান্য বৃষ্টি হলে তাতে যেনো সাঁতার কাটতে হয় এলাকাবাসীকে।
বিশ্বনাথ উপজেলা প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বৃষ্টির দিনে সড়কে সংস্কার কাজ করা সম্ভব নয়। তবে আমাদের তালিকা অনুযায়ীই অধিক ক্ষতিগ্রস্থ সড়কগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে সড়ক সংস্কার কাজ পরিচালনা করা হয়।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ https://ift.tt/2NsF4zs
July 04, 2018 at 10:54PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.