ঢাকা, ০৫ আগস্ট- মডেল ও অভিনয়শিল্পী সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি (২৪) হত্যা মামলায় ১৪ বছর ধরে পলাতক বহুল আলোচিত জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভি। ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর রাতে খুন হন মডেল তিন্নি। এরপর থেকেই পলাতক হন অভি। পলাতক থেকেই বিদেশ পাড়ি জমান তিনি। অভি কানাডায় অবস্থান করছেন বলে আদালতের নথিপত্রে উল্লেখ থাকলেও তাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর নেই কোনো উদ্যোগ। আর পলাতক থাকা অবস্থায়ই হাইকোর্টে রিট আবেদনের মাধ্যমে মামলাটি স্থগিতের আদেশ পান অভি। কিন্তু পরবর্তীতে মামলাটির স্থগিতাদেশ বাতিল হওয়া সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র না আসায় মামলাটির কার্যক্রম শুরু করতে পারছেন না বিচারিক আদালত। ফলে বছরের পর বছর ধরে ঝুলছে আলোচিত মডেল তিন্নি হত্যা মামলা। বিষয়গুলো স্বীকার করে জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর খন্দকার আব্দুল মান্নান বলেন, মামলাটির কাগজপত্র আমরা বিশ্লেষণ করে দেখছি। এতোদিনে মামলাটির স্থগিতাদেশ বাতিল না হয়ে থাকলে তা বাতিলের উদ্যোগ নিতে সামনের সপ্তাহে আমরা অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় বরাবরে আবেদন করবো। আর বাতিল হয়ে থাকলে তার কপি বিচারিক আদালতে পাঠানোর অনুরোধ জানাবো। কানাডা থেকে অভিকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল কি-না, তা জানতে চাইলে পিপি মান্নান বলেন, এটি কোর্টের মাধ্যমে হয় না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় কিংবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকার এটি করতে পারে। এখানে কোর্টের কোনো হাত নেই। সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পিপি রুহুল আমিন বলেন, দীর্ঘদিন মামলাটির স্থগিতাদেশ বৃদ্ধির কোনো কাগজপত্র আদালতে আসেনি। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট আদালতে বিচারকও নেই। নতুন বিচারক এলে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করার আবেদন জানাবো। আর আদালত চাইলে এটি করতে পারেন। ২০১১ সালের ১০ এপ্রিল তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহবুব করিম আদালতে আংশিক সাক্ষ্য দিয়েছেন। কিন্তু এরপর ২৫ আগস্ট মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আদালতের একজন কর্মচারী জানান, বিদেশ থেকে এসে তিন্নির বাবা আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। কিন্তু মাঝপথে মামলাটি স্থগিত হয়ে যাওয়ায় তিনি আবার বিদেশে চলে গেছেন। ফলে মামলাটি পুনরায় বিচার শুরু হলেও তাকে সমন দিয়ে ডেকে এনে সাক্ষ্যগ্রহণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে মামলাটির বিচার মুখ থুবড়ে পড়বে। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার ৭ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন আছে। পেছন ফিরে দেখা মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, স্বামী শাফকাত হোসেন পিয়ালের মাধ্যমেই তিন্নির সঙ্গে অভির পরিচয় হয়। এরপর তিন্নি ও অভির ঘনিষ্টতা বাড়ে। স্বামী পিয়াল বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পারেননি। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অভির পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০২ সালের ০৬ নভেম্বর পিয়ালকে ডিভোর্স দেন তিন্নি। অভির ইচ্ছা ছিল, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিন্নিকে ভোগ করে যাওয়া। বিয়ে করে তিন্নিকে স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার ইচ্ছা অভির কোনোদিনই ছিল না। বিষয়টি বুঝতে পেরেই তিন্নি তাকে বিয়ে করার জন্য অভিকে চাপ দেন। অভি বিয়ে করতে অস্বীকার করলে অভির সব গোপন খবর মিডিয়ায় ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেন তিন্নি। এরপর ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর রাত্রে ঢাকার কেরানীগঞ্জের ১ নম্বর চীন মৈত্রী সেতুর ১১ নম্বর পিলালের পাশে তিন্নির মরদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় কেরাণীগঞ্জ থানার এএসআই সফি উদ্দিন থানায় মামলা দায়ের করেন। প্রথমে কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত শুরু করলেও পরে মামলা স্থানান্তরিত হয় সিআইডিতে। এর ৬ বছর পর ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর একমাত্র আসামি গোলাম ফারুক অভিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় সিআইডি। মামলায় বিভিন্ন সময় তিন্নির স্বামী শাফকাত হোসেন পিয়ালসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় তাদেরকে মামলায় দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পুলিশি তদন্তে প্রাথমিকভাবে অভি অভিযুক্ত হলেও তাকে আর ধরতে পারেনি পুলিশ। অভির অনুপস্থিতিতেই ২০১০ সালের ১৪ জুলাই ঢাকার ৭ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তিন্নি হত্যা ও মরদেহ গুম সংক্রান্ত মামলায় জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। তদন্তে ৭ পুলিশ কর্মকর্তা তিন্নিকে না পেয়ে তার চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। তিন্নির সাবেক স্বামী পিয়াল এবং তার বাসার গৃহকর্মী বিনাকে ওই সময় গ্রেফতারও করে পুলিশ। ২০০২ সালের ১১ নভেম্বর অজ্ঞাত পরিচয় হিসাবে তিন্নির মরদেহ উদ্ধারের পর অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেন কেরাণীগঞ্জ থানার এএসআই মো. সফি উদ্দিন। এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা করা হয় ওই থানার এসআই মোঃ কাইয়ুমকে। মরদেহের ছবি পত্রিকায় ছাপা হলে নিহতের এক আত্মীয় সুজন মরদেহটি তিন্নির বলে শনাক্ত করেন। চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে একই বছরের ২৪ নভেম্বর তদন্তভার ন্যস্ত হয় সিআইডিতে। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডির পরিদর্শক ফজলুর রহমানকে। এরপর ৬ বছরে একে একে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পরিদর্শক সুজাউল হক, এএসপি গোলাম মোস্তফা, এএসপি আরমান আলী, এএসপি কমল কৃষ্ণ ভরদ্বাজ এবং এএসপি মোজাম্মেল হক। সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হকই আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে ৪১ জনকে সাক্ষী করা হয়, জব্দ করা হয় ২২টি আলামত। লেখাপড়ায় অসম্ভব মেধাবী ছিলেন গোলাম ফারুক অভি। এসএসসি এবং এইচএসসিতে বোর্ড পর্যায়ে মেধার স্বাক্ষর রাখেন তিনি। মেধাবী অভি অনেকটা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দিনে দিনে ধাবিত হন পতনের পথে। মূলত এরশাদের শাসনামলেই অভির উত্থান ঘটে। নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী নিয়ে পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন তিনি। পেশীশক্তির মাধ্যমে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে করে তুলেছিলেন তার সন্ত্রাসের তল্লাট। এক সময় সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের হাত ধরে বরিশাল-১ আসন থেকে নির্বাচিত হন সংসদ সদস্য। সূত্র: বাংলানিউজ২৪ আর/০৭:১৪/০৫ আগস্ট
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2AHlxcl
August 06, 2018 at 05:59AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন