মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি :: আগামী ২২ আগষ্ট ঈদুল আযহা। কোরবানি ঈদ সামনে রেখে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বিভিন্ন খামারিরা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরুসহ বিভিন্ন পশু মোটা-তাজাকরণ কাজে শেষ মূহুর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলার খামারিরা ভাল দাম পাওয়ার আশায় এলাকার বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বা নিজেদের গচ্ছিত পুঁজি বিনিয়োগ করে সামনে কোরবানি হাট ধরার লক্ষ্যে যত্নসহকারে তারা পশু লালন-পালন করছেন। গোয়াল কিংবা বাড়ির আঙিনায় গবাদি পশু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত রয়েছেন খামারিরা। বুক ভরা আশা নিয়ে তারা দিন গুণছে কখন জমে উঠবে পশুর হাট। গত বছর শেষের দিকে দাম পড়ে যাওয়ায় বিশ্বনাথে অনেক খামারি লোকসানের মুখে পড়েন। ফলে অনেক গবাদি পশু অবিক্রিত থেকে যায়। পরে খামারিরা সেইসব পশু স্থানীয় হাট-বাজারে কসাইদের কাছে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন। এ বছর যদি বাজারে ভারতীয় পশুর আমদানি না হয়, তাহলে গত বছরের লোকসান পুষিয়ে লাভবান হবেন তারা। এমনই আশাবাদী এই অঞ্চলের খামারিরা। উপজেলার মধ্যে স্থায়ী পশুর হাট তিনটি এগুলো হলো বিশ্বনাথ পুরানবাজার, বৈরাগী বাজার ও পীরের বাজারে পশুর হাট। এ ছাড়াও অস্থায়ী ভাবে উপজেলার আরও ৯টি স্থানে পশুর হাট বসবে। আগামী বৃহস্পতিবার ঈদুল আযহা উপলক্ষে বিশ্বনাথের অস্থায়ী ৯টি পশুর হাটের নিলাম হবে। বিকেল ৩টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে প্রকাশ্যে ওই নিলাম অনুষ্টিত হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্র জানায়, বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজি বাজার, মুফতিরবাজার, পনাউল্লাহ বাজার, রামপাশা নয়া বাজার, পুরান হাবড়া বাজার, সিঙ্গেরকাছ বাজার, বাগিচা বাজার, কালিগঞ্জ বাজার, ধর্মদা মৌজার ধর্মদা তাতিকোনার ঈদগাহ সংলগ্ন খালি জায়গায় পশুর হাট নিলাম প্রদান করা হবে। নির্দিষ্ট সময়ে নিলাম অংশগ্রহনকারীরা উপস্থিত থাকার জন্য আহবান জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিতাভ পরাগ তালুকদার।
এদিকে, বাজারে পশু ক্রয়-বিক্রয়ের পাশাপাশি গত বারের মতো এবারও ইন্টারনেটে (ফেইসবুক ও ওয়াটর্সআপ) চলবে ক্রয়-বিক্রয়। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে দেশে আসছেন অনেক প্রবাসীরা। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন প্রবাসী ঈদ উদযাপন করতে দেশে এসেছেন। খামারিদের দাবি, সরকার দেশে ভারতীয় পশু আমদানি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে ও তাদের লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে সুনজর দেবে। এমনটাই প্রত্যশা এই অঞ্চলের ছোট-বড় খামারিদের।
সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে গরু, ছাগল ও ভেড়া ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দেড়শতাধিক খামার রয়েছে। এসব খামারির মধ্যে এবার কোরবানিযোগ্য দেশী-বিদেশী জাতের গরু রয়েছে কয়েক হাজার। আসন্ন কোরবানি ঈদ সামনে রেখে উপজেলার খামারিরা গত রোজার ঈদের পর থেকে পশু কোরবানির হাট ধরার লক্ষ্যে প্রাকৃতিক উপায়ে মোটা-তাজাকরণ শুরু করেছেন। আবার কেউ কেউ বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে, কেউ বা সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে এলাকার বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বা নিজেদের গচ্ছিত পুঁজি বিনিয়োগ করে নতুন নতুন খামার গড়ে তুলেছেন। তারা সকলেই কোরবানি ঈদ সামনে রেখে পশুকে যত্নসহকারে নিয়মিত ঘাস, খড়, গাছের লতাপাতা, খৈল, ভূষি, ধানের গুঁড়া, খুদের ভাত, গমের ভূষি ও ভুট্টা ভাঙিয়ে খাওয়াচ্ছেন। বর্তমানে খামারিদের একটাই লক্ষ্য সামনে কোরবানি ঈদের হাট।
উপজেলা সদরের বড় বড় খামার থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলের প্রান্তিক খামারিরা দেশীয় পদ্ধতিতে গবাদি পশু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শুধুমাত্র সবুজ ঘাস, খড়, কুড়া, কৈল ও ভূষির মাধ্যমে পশু মোটাতাজা করছেন তারা। ফলে যেকোনও ধরনের রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমে এসেছে। এছাড়া পশু চিকিৎসকদের পরামর্শে প্রয়োজনে কৃমিনাশক, ভিটামিন ও নির্দিষ্ট রোগের ওষুধ খাওয়ানো হলেও ক্ষতিকর ট্যাবলেট এবং ইনজেকশন ব্যবহার থেকে বিরত রয়েছেন খামারিরা। ফলে ক্রেতারা হাটে পাবেন নিরাপদ গবাদি পশু।
এব্যাপারে উপজেলার জানাইয়া গ্রামের খামারি রিয়াজ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বাজারে গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের পশু মোটাতাজাকরণের ব্যয় অনেকাংশে বেড়েছে। যদি দেশে ভারতীয় পশু আমদানি না হয়, তাহলে অনেকেই গেল বছরের লোকসান পুষিয়ে অধিক লাভবান হবেন। চড়া দামে ২৭টি গরু কিনেছেন। মোটামুটি একটি গরু কিনতে ৪৫ হাজার টাকার দরকার। বেশি দামে গরু ক্রয় করে কম দামে বিক্রির করার সুযোগ নেই।
উপজেলা এলাকার অপর খামারি সায়েদ মিয়া বলেন, গত বছরের নভেম্বর মাসে ১৪টি দেশী-জাতের গরুকে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মোটা-তাজাকরণ শুরু করেছি। এবার কোরবানি বাজার ধরার জন্য গরুকে যত্নসহকারে নিয়মিত ঘাস, খড়, খৈল, ভূষি, ধানের গুড়া, খুদের ভাত, গমের ভূষি ও ভুট্টা ভাঙিয়ে খাওয়াচ্ছি। এসব গরুর অনেক চাহিদা রয়েছে। তবে, কোরবানি ঈদের আগে ভারত থেকে বৈধভাবে আমাদের দেশে গরু না আসলে এবার কোরবানির গরু বিক্রি করে অনেক লাভ হবে।
উপজেলা সদরের পুরান বাজার পশুর হাট ইজারাদার জয়নাল আবেদিন বলেন, ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধার্থে ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি আগেই সম্পন্ন করা হয়েছে। বাঁশ দিয়ে সারিবদ্ধভাবে লাইন করা হয়েছে। মানুষ চলাচলের জন্য উভয় সারির মধ্যখানে বেশ জায়গা রাখা হয়েছে। হাটে কিছু পশু রয়েছে। এখন পশুর হাট জমেনি। তবে কিছুটা পশু ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে পুরোধমে জমে উঠবে পশুর হাট এমটাই জানা তিনি।
উপজেলা ভেটেরিনারী সার্জন ডাক্তার আবদুস শহিদ বলেন, কোরবানি ঈদের জন্য ক্রেতারা যাতে সুস্থ-সবল পশু পেতে পারে সেদিক লক্ষ্য রেখেই উপজেলার সকল খামারিকে সুপরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। কোনো খামারি যেন ক্ষতিকারক ইনজেকশনের মাধ্যমে পশু হূষ্টপুষ্ট করতে না পারেন, সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক তদারক করা হচ্ছে। আশা রাখি খামারিরা এবার কোরবানিহাটে ভালো দাম পাবেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিতাভ পরাগ তালকুদার বলেন, এবার উপজেলায় স্থায়ী ৩টি ও অস্থায়ী ৯টি পশুর হাট বসবে। আগামী বৃহস্পতিবার অস্থায়ী পশুর হাটগুলো নিলাম দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ https://ift.tt/2P9q4rt
August 14, 2018 at 06:48PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.