দিসপুর, ১৬ আগস্ট- গত বছরের ১৫ আগস্ট, ভারতের স্বাধীনতা দিবসের দিন। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণের ফলে অসমের বিস্তীর্ণ এলাকা তখন বন্যার কবলে। বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া অাসামের ধুবড়ি জেলার ফকিরগঞ্জের নস্করা প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্ত্বরে তখন বুক সমান পানি। স্কুল ঘরও পানির তলায়। ওই অবস্থায় মহান দিবস পালনের কথা নয়। কিন্তু ওই পরিস্থিতিতেও বুক সমান পানির মধ্যে দাঁড়িয়েই স্বাধীনতা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাজেম শিকদার। দুই ক্ষুদে শিক্ষার্থী হায়দার আলি খান (৯) ও জইরুল আলি খান (১০)-কে সাথে নিয়েই পানি পেরিয়ে সেদিন স্কুলে পৌঁছান প্রধান শিক্ষক। এরপর বুক সমান পানিতে দাঁড়িয়ে দুই শিক্ষার্থী ও স্কুলের সহকারী শিক্ষক নৃপেণ রাভা-কে সাথে নিয়ে তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করেন প্রধান শিক্ষক। পরে জাতীয় পতাকার উদ্যেশ্যে স্যালুট জানান। ওই দিন অনুষ্ঠান স্থলের একটু দূরেই ছিলেন আরও দুই শিক্ষক মিজানুর রহমান ও জয়দেব রায়। মিজানুর রহমানই পতাকা তোলার ওই ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করেন। আর সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে দেশভক্তির সেই ছবি ভাইরালও হয় সেসময়। এক বছর পর সেই ছোট কিশোর হায়দার আলি খানের নামই উঠল না অাসামে সদ্য প্রকাশিত নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) খসড়া তালিকাতে। গত ৩০ জুলাই অাসামে প্রকাশিত হয় জাতীয় এই খসড়া তালিকা। এনআরসিএর কাছে জমা পড়া ৩.২৯ কোটি আবেদনকারির মধ্যে চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় ২.৮৯ কোটির মানুষের নাম। তালিকা থেকে বাদ পড়ে প্রায় ৪০ লাখ বাসিন্দা। সেই বাদ পড়া তালিকায় রয়েছে হায়দার আলি। যদিও হায়দারেরই ১০ বছর বয়সী সঙ্গী জইরুল আলি খান, প্রধান শিক্ষক তাজেম শিকদার এবং সহকারী শিক্ষক নৃপেণ রাভা-এই তিনজনেরই নাম উঠেছে ওই তালিকায়। খসড়া তালিকায় নাম উঠেছে বড়খালিয়া-নস্করা গ্রামের বাসিন্দা হায়দার আলির মা জয়গন খাতুন, ১২ বছর বয়সী তার ভাই ও ৬ বছর বয়সী বোনের নামও। এমনকি তার দাদা আলম খানের নামও রয়েছে ওই খসড়া তালিকায়। তবে ২০১১ সালে কোকরাঝাড়ে একটি সংঘর্ষে মারা যাওয়ার কারণে হায়দারের বাবা রূপনাল খানএর নাম স্বাভাবিক ভাবেই ওঠেনি। নাগরিক পঞ্জি নিয়ে কোন ধারনা না থাকা ছোট হায়দারের জানায় আমি জাতীয় নাগরিকপঞ্জি সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমাদের গ্রামের শিক্ষিত ব্যক্তিরা যা বলেন আমি সেই মতোই চলি। যদিও গত বছর আগস্ট মাসের ওই বন্যার পানিতে দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন নিয়ে হায়দার জানায় সেদিন সবকিছুই পানির তলায় ছিল। ফলে স্কুলের অন্য শিক্ষার্থীরাও সাঁতার কেটে ওখানে যেতে ভয় পাচ্ছিল। কিন্তু আমি ও জাইরুল দুই জনেই সাঁতার কেটে পতাকা উত্তোলনের জায়গা পৌঁছে যাই, সেখানে দাঁড়িয়ে পতাকা তুলি পরে জাতীয় পতাকাকে স্যালুট করি। তালিকা থেকে হায়দারের নাম বাদ পড়া নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাজেম শিকদার জানান হায়দারের মা সহ সব গ্রামবাসীরাই চায় তাকে ভারতীয় নাগরিক বলে ঘোষণা দিয়ে এনআরসি তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হোক। নাম বাদ পড়ার পরই হায়দারের মা স্থানীয় এনআরসি সেবাকেন্দ্রে গিয়ে ছেলের ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে সেটি জমাও দেন। যদিও আগামী ১৬ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পরই এই বিষয়টি পরিস্কার হতে পারে। হায়দারের প্রতিবেশি স্থানীয় কলেজ শিক্ষক কলিমুদ্দিন মন্ডল জানান আমাদের সমাজের কিছু মানুষ প্রায় বাংলাদেশি বলে তিরস্কার করে কিন্তু আমরা প্রকৃত ও দেশপ্রেমী ভারতীয়। আমরা আশা করি চূড়ান্ত তালিকায় হায়দারের নাম উঠবে। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন আর/১০:১৪/১৫ আগস্ট
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2OFTKeK
August 16, 2018 at 06:28AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন