দুবাই, ১৪ আগস্ট- দুবাইয়ে বসবাসরত কয়েক হাজার মেয়াদোত্তীর্ণ ও অবৈধ প্রবাসী শ্রমিক বাংলাদেশ কনস্যুলেটে ভিড় করছেন। বৈধভাবে দ্রুত দেশে ফেরত যাওয়া ও ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য তারা সেখানে ভিড় করছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশি কনসাল জেনারেল। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ এ খবর জানিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় ছয় লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত আছেন। কিন্তু সেখানে বাংলাদেশি ব্লু কলার শ্রমিকদের জন্য ভিসা দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এখন নতুন ঘোষণায় মেয়াদোত্তীর্ণ বাংলাদেশি শ্রমিকরা জরিমানা দিয়ে ছয় মাস বসবাসের অনুমতি ও নতুন কাজ পাওয়ার আশা করছেন। অবৈধ প্রবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে আমিরাত সরকার পঞ্চমবারের ক্ষমার ব্যবস্থা চালু করেছে। এবারের ক্ষমার জন্য আবেদন শুরু হয়েছে ১ আগস্ট থেকে এবং তা চলবে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। এর আওতায় দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাসরত বিদেশি শ্রমিকরা কাছের আবাসন ও পররাষ্ট্রবিষয়ক অধিদফতরে আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের সঙ্গে ২২০ দিরহাম দেওয়া সাপেক্ষে অবৈধ শ্রমিকরা নির্বিঘ্নে দেশে ফেরার অনুমতি পাবেন। এর মধ্যে তারাও রয়েছে যারা কাজের ভিসায় দেশটিতে গিয়েছেন কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এছাড়া ভ্রমণ ভিসায় গিয়েও যাদের ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে তারাও দেশটিতে থেকে বৈধভাবে চলে আসার জন্য পাসপোর্টকে বৈধ করতে পারবেন। আর যারা আরও সময় ধরে সেখানে থাকতে চান তাদের ৫২০ দিরহাম অতিরিক্ত ফি দিতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস থেকে নতুন পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে। তাদের নিকটবর্তী আমের টাইপিং সেন্টারে যেতে হবে এবং ছয় মাসের অস্থায়ী ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। বাংলাদেশ মিশনের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক প্রচারণার কারণে শ্রমিকদের মধ্যে সাড়া পড়েছে। প্রতিদিন কয়েক হাজার আবেদন জমা পড়ছে। আবেদনগুলো গ্রহণ করতে মিশনের কর্মকর্তাদের দিনে ১২ ঘণ্টা করে কাজ করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ কনস্যুলেটের দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষা করছিলেন ২৬ বছরের মুজাফ্ফর মোল্লা। তিনি এসেছেন নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে। তিনি বলেন, ২০০০ সালে দুবাইয়ে এসেছি, আমি একজন মেকানিক। গত দুই বছর ধরে অবৈধভাবে অবস্থান করছি। এখন নতুন কাজ পাওয়ার আশা করছি। কর্মকর্তারা বলছেন, আমি ১০ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পেয়ে যাব। তখন আমি আমের সেন্টারে গিয়ে ছয় মাসের অস্থায়ী ভিসা পাবো। গাড়ির গ্যারেজে আমার বন্ধুরা রয়েছে। তারা বলেছে কাজ পেতে আমাকে সহযোগিতা করবে। গত চার বছর ধরে ফুজাইরাহতে অবৈধভাবে বসবাস করছেন ২২ বছরের শিবলি খাতুন। তিনি বলেন, নিয়োগকর্তা আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম। এরপর থেকেই বিভিন্ন ছোটোখাটো কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছি। দেশে পরিবারকে টাকা পাঠাতে হয়। আমি নিশ্চিত নই যে, আমি বৈধ হতে পারবো কিনা। চেষ্টা করছি এবং আশাবাদী যে, নতুন পাসপোর্ট পেলে নতুন কাজ খোঁজার জন্য আমি ছয় মাস সময় পাবো। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল এস. বদিরুজ্জামান বলেন, গত সপ্তাহে আমরা প্রায় এক হাজার ট্রাভেল পারমিট দিয়েছি এবং নতুন পাসপোর্টের জন্য আড়াই হাজার আবেদন গ্রহণ করেছি। এগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে দেওয়া হবে। বদিরুজ্জামান বলেন, আমিরাত সরকারের সঙ্গে আমাদের দারুণ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশিরা এখানে পর্যটক ও বাণিজ্যিক ভিসায় আসছেন। আমরা আশাবাদী আমাদের প্রবাসীরা এখানে ব্লু কলার কাজও পাবেন। আমরা চাই বেশিরভাগ বাংলাদেশি শ্রমিকরা জরিমানা দিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে নতুন কাজ পান। আমিরাত সরকার এই ক্ষমা প্রদানের মধ্য দিয়ে বড় ধরনের মানবিক কাজ করছে। আমাদের দিক থেকেও আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কনসাল জেনারেল আরও বলেন, ক্ষমাপ্রার্থীদের আমরা যতটা সম্ভব সহযোগিতা করছি। যেখানে সম্ভব জরিমানা কম রাখা হচ্ছে এবং যাদের আর্থিক সঙ্গতি নেই তাদের বিনামূল্যে বিমান টিকিটের ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। এমিরেটস এয়ারলাইন্সও বাংলাদেশের জন্য বিমান টিকিটে ৩০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন আর/১৭:১৪/১৪ আগস্ট



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2PcRQmS
August 15, 2018 at 01:06AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top