রায়গঞ্জ, ৪ অগাস্টঃ রোজগারের আশায় উত্তরপ্রদেশের রায়বেরেলিতে কাজ করতে গিয়েছিল উত্তর দিনাজপুরের বেশ কয়েকজন শ্রমিক। কাজ করার সময় মাটির নিচে ধসে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ছ’জনের। আহত আরও দুই। চিকিৎসা চলছে রায়গঞ্জেই। এই ঘটনার পরে নড়েচড়ে বসল উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। এবার থেকে ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়ার আগে জেলা শ্রম দপ্তরের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক করার প্রক্রিয়া হাতে নিতে চলেছে জেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্ত করার পাশাপাশি নিজের বাড়ি ছেড়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার আগে মজুরদের বিশেষ পরিচয়পত্র দেওয়া যায় কি না তা নিয়েও ইতিমধ্যে তৎপর সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা।
সীমান্তবর্তী এই অনগ্রসর জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ফি বছর হাজার হাজার যুবক পেটের টানে ভিটামাটি ছেড়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেয়। দালালদের হাতে ধরেই একেবারে বেআইনিভাবে ভিন রাজ্যের নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত হয় তারা। মুম্বই, পঞ্জাব, গুজরাট, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ ও পানিপথ বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন নির্মাণ কাজে এদের নিযুক্ত করা হয়। বিশেষ করে গোয়ালপোখর, চোপড়া, চাকুলিয়া, করণদিঘি, টুঙ্গিদিঘি, রায়গঞ্জ ও ইটাহারের প্রত্যন্ত এলাকার কমবয়সী ছেলেরা মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দালালের ফাঁদে পা দিয়ে ভিন রাজ্যে চলে যায়। এদের প্রত্যেকের বয়স গড়ে ১৪ থেকে ২৫ বছর। আর এই বয়সের ছেলেদেরই মূলত দালালদের মুখ্য লক্ষ্য। বাইরে এদের দিয়ে কম টাকায় বেশি কাজ করানো সম্ভব হয়। এর ফলে সুবিধে হয় দললালদের। তবে শ্রমিকের ন্যূনতম তথ্য স্থানীয় শ্রম দপ্তরে নেই। এমনকি প্রতিদিন কত শ্রমিক এই জেলা থেকে অন্য রাজ্যে যাচ্ছে তার কোনো হিসেব নেই পঞ্চায়েত দপ্তর থেকে জেলার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। যেসব দালাল বা বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থার হয়ে বাইরের রাজ্যে দিনমজুরের কাজে যোগ দেওয়া হয় সেসব এজেন্সির অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৈধ কাগজপত্র থাকে না। ফলে ভিন রাজ্যে কাজ করতে করতে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মৃত্যু হলেও কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করার আইনি পথ থাকে না।
উত্তর দিনাজপুর জেলা শ্রম দপ্তর সূত্রে জানানো হয়, প্রায় তিন লক্ষ অসংগঠিত শ্রমিকের নাম বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা যোজনা আওতায় নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু সেই সব নথিভুক্ত শ্রমিক ভিন রাজ্যে কোন কাজে নিযুক্ত নেই। এই জেলার মধ্যে নির্মাণ কাজ থেকে শুরু করে পরিবহন কর্মী, মাটির কাজ, কাঠমিস্ত্রি ইত্যাদি কাজ করেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ডেপুটি লেবার কমিশনার সোমনাথ রায় বলেন, ‘সমস্ত ধরনের অসংগঠিত শ্রমিকদের সরকারি প্রকল্পের আওতায় আনার জন্য বিভিন্ন ক্যাম্প করা হয়, যাতে শ্রমিকরা সরকারি বিভিন্ন সুযোগ হাতে পায়। কিন্তু বাইরের রাজ্যে পাড়ি দেওয়া শ্রমিকদের কোন হিসেব নেই। ফলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়ার আগে শ্রম দপ্তরের অনুমোদন শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক করার জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। সেইসঙ্গে জেলায় কত শ্রমিক বাইরে কাজ করছেন তা জানার চেষ্টা চলছে। পরিচয় পত্রের প্রয়োজনে এবার থেকে সচিত্র পরিচয় পত্রের ব্যবস্থা করা হবে।’
সংবাদদাতাঃ বিশ্বজিৎ সরকার
from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal https://ift.tt/2vAhGIh
August 04, 2018 at 10:12PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন