ঢাকা, ১২ সেপ্টেম্বর- বাংলা সংগীতের এক উজ্জল নক্ষত্রের নাম রোমানা মোর্শেদ কনক চাঁপা। অসংখ্য গান গেয়ে মানুষের মন জয় করে আছেন তিনি। ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ এই প্রথিতযশা কণ্ঠশিল্পীর জন্মদিন ছিল। ১৯৬৯ সালের এই দিনে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। যেখানে জন্মদিন নিয়ে মানুষের আগ্রহের কোন শেষ নেই, সেখানে কনক চাঁপার এই দিনটি নিয়ে আলাদা ভাবে কোন আগ্রহ নেই। কনক চাঁপা বললেন, প্রতিটি কর্মদিবসই আমার জন্মদিন। কাজের মাঝেই এবং কাজের জন্যই আমার জন্ম। আমি একজন আপাদমস্তক কন্ঠশ্রমিক।যে মহামানব হযরত মুহাম্মাদ সঃএর জন্য এই পৃথিবীর জন্ম তাঁর জন্মদিন মৃত্যু দিবস পালন যেখানে নিয়ম নাই সেখানে আর কারো জন্মদিবস পালন অর্থহীন। যদিও সেপ্টেম্বর মাস এবং এগারো সংখ্যা আমার খুবই প্রিয়। হাজার হলেও আমি মানুষ, নিজেকে ভালবাসি, তাই হয়তো এর বাইরে যাওয়ার সাধ্য আমার নাই। তবে আমি কখনোই আমার জন্মদিন এবং মৃত্যু দিন পালন করা হোক এ আমি চাই না। তবে জন্মদিনে বেশ কিছু ইচ্ছে অনিচ্ছের কথা জানিয়েছেন এই শিল্পী। কনক চাঁপা বলেন,এ বছর আমি উনপঞ্চাশ এ পা রাখবো। কর্মহীন দীর্ঘজীবন আমার খুবই অপছন্দ। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকতে চাই, সুরের সাথে ন্যায়ের সাথে ভালো কাজের সাথেই থাকতে চাই। আরো ভালো কিছু কাজ করতে চাই। এই আমার বড় ইচ্ছা। মৃত্যুর পর শহীদ মিনারে যেতে চাইনা একদমই। এটাও আমার বড় ইচ্ছা, মসজিদের পাশে কবর চাই এটাও আরেকটি সুপ্ত ইচ্ছা। কনক চাঁপা আরও বলেন,সত্যিকার অর্থেই জন্মদিন এর প্রতি আলাদা কোন দুর্বলতা আমার নেই একথা দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই। আর আমি কোন সেলিব্রিটি বা তারকা নই যে আমার জন্ম তারিখ কাউকে মনে রাখতে হবে।বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতের উন্নতি করার জন্য আমি গান গাইনি, আমি গান গেয়েছি নিজের জীবিকার তাগিদে তাই দেশের মানুষের কাছে সুশীল সমাজের কাছে, সরকারের কাছে আমার কোনই চাওয়া নেই, আক্ষরিক অর্থেই এক ফোঁটাও চাওয়া পাওয়া নেই। জন্মদিন তো দুরের কথা। ছোট বেলার জন্মদিনের স্মৃতি ও একজন শিল্পী হয়ে ওঠার পিছের গল্পও শোনালেন কনক চাঁপা। বললেন, জন্মদিন! সবাই একটা নির্দিষ্ট তারিখে জন্ম নেয়। কারো বাবা-মা সে তারিখ মনে রাখে, কারো বাবামা জন্ম দিয়ে বাচ্চা লালন করার তাগিদে সেই তারিখ ভুলে যান। আমি সৌভাগ্যবান কারণ আমার বাবা সে তারিখটি সযত্নে নিজ ডায়েরির পাতায় লিপিবদ্ধ করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু সেই তারিখে কেক কেটে মোম জ্বালিয়ে স্বজনদের দাওয়াত করে উৎসব পালনের রেয়াজ আমাদের পরিবারে ছিল না। যখন কিশোরী হয়ে উঠছিলাম তখন দুয়েক বছর বান্ধবীদের ডেকে মা পায়েস চানাচুর কেক নুডলস কলা দিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন বটে। এর পরই বিয়ে হয়ে গেলো সেই কিশোরী থাকতেই। স্বামী একজন মিউজিক ডিরেক্টর। বলা যায় দুজনই বেকার। গান গাওয়ার জন্য বিটিভি, বাংলাদেশ বেতারে যাওয়ার রিক্সা ভাড়া জোটানোও ভয়াবহ কঠিন কাজ ছিল! জীবন বাঁচাতে জীবিকার পেছনে ছুটতে ছুটতে এই কিশোরী তখন দুবাচ্চার মা। তবুও গান গেয়ে যেভাবে মানুষের মনে নিজ পরিচয় নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম তাতে এখনকার যুগ হলে স্টার হয়ে যেতাম। ইউটিউব এ ভিউ কোটির ঘর ছাড়িয়ে যেতো কিন্তু কখনোই বুঝতে সক্ষম হইনি যে আমার গান মানুষ শোনে বা আমি জনপ্রিয় কেউ! চুরাশি সালে পয়লা ছবির গান গাইলেও নব্বই দশকে ছবির গান গাওয়া নিয়মিত হল। তখন থেকেই জীবন আর আমার হাতে রইলো না।এবং জন্মদিন ভুলেই গেলাম। কত জন্মদিন মঞ্চে রেকর্ডিং স্টুডিওতে পার করেছি ইয়ত্তা নেই। কেউ জানতোও না মাইক্রোফোন এ দাঁড়ানো কন্ঠশ্রমিকের আজ জন্মদিন। যাদের আন্ডারে অর্থাৎ যে মিউজিক ডিরেক্টর দের সুরে গান গাইতে সারাদিন সারামাস স্টুডিওতে কাটিয়েছি, অথবা এফডিসির কেউ, তাঁরাও বলতে পারবেন না আমার জন্মদিন কবে। কখনো কোন পেপার পত্রিকার কাছ থেকে শুভেচ্ছা শুভকামনা পাইনি।ঘরের মানুষ ও প্রায় বছরই ভুলে গেছেন একথা। ভুলে যাওয়াটা নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই হয়েছে। কত জন্মদিন ফ্লাইট এ কাটিয়েছি, ইকোনমি ক্লাসের যাত্রী বলে ফ্লাইটের তরফ থেকেও সে শুভাশিস পাইনি।ছেলেমেয়ে মেয়ে জামাই, আমার অনলাইন স্কুলের সন্তান সম ছাত্রছাত্রীরা , তারা যদিও জন্মদিন পালন করে এখন খুব আগ্রহভরে। কিন্তু এখন আর এইসব সেভাবে আমাকে টানে না। উল্লেখ্য, কনক চাঁপার বাবার নাম আজিজুল হক মোর্শেদ। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয় কনক চাঁপা। অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়ে তিনি বাংলা গানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন। চলচ্চিত্র, আধুনিক গান, নজরুল সঙ্গীত, লোকগীতি সহ প্রায় সবধরনের গানে কনক চাঁপা সমান পারদর্শী। তিনি ৩২ বছর ধরে সংগীতাঙ্গনে কাজ করে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত চলচ্চিত্রের তিন হাজারেরও বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন কনক চাঁপা। প্রকাশিত হয়েছে ৩৫টি একক গানের অ্যালবাম। গানের পাশাপাশি লেখক হিসেবেও কনকচাঁপার সুখ্যাতি রয়েছে। ২০১০ সালের অমর একুশে বইমেলায় স্থবির যাযাবর, ২০১২ সালের অমর একুশে বইমেলায় মুখোমুখি যোদ্ধা ও ২০১৬ সালের অমর একুশে বইমেলায় মেঘের ডানায় চড়ে নামে তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে কনক চাঁপার। কনকচাঁপা বিখ্যাত কন্ঠশীল্পি বশীর আহমেদের ছাত্রী। দীর্ঘদিন তাঁর কাছে উচ্চাঙ্গ, নজরুল সঙ্গীতসহ অন্যান্য ভারতীয় সঙ্গীতের তালিম নিয়েছেন। তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে, অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন, তোমাকে চাই শুধু তোমাকে চাই, ভাল আছি ভাল থেকো, যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে জীবনে অমর হয়ে রয় (খালিদ হাসান মিলুর সাথে), আমার নাকেরই ফুল বলে রে তুমি যে আমার, তোমায় দেখলে মনে হয়, আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে, অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে, তুমি আমার এমনই একজনসহ অনেক গান। গানের জন্য রুমানা মোর্শেদ কনক চাঁপা ৩ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া তিনি বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার, দর্শক ফোরাম পুরস্কার, প্রযোজক সমিতি পুরস্কারসহ আরও অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। তথ্যসূত্র: জাগো নিউজ২৪ আরএস/ ১২ সেপ্টেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2N9qT68
September 12, 2018 at 04:29PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন