আচ্ছা বাংলাদেশের এক নম্বর ব্যাটসম্যান কে? কোন প্রতিষ্ঠিত দলের বিপক্ষে ভক্ত-সমর্থক আর জাতি কার ব্যাটের দিকে তাকিয়ে থাকে? কোন ব্যাটসম্যানের ভাল খেলা, জ্বলে ওঠা, রান পাওয়া এবং লম্বা ইনিংস খেলার ওপর বাংলাদেশের ব্যাটিং সাফল্য-ব্যর্থতার প্রায় ৫০ ভাগ নির্ভর করে? বোদ্ধা-পন্ডিত, বিশেষজ্ঞ হবার প্রয়োজন নেই। পাড়ার, গলির অবুঝ কিশোরও অবলীলায় বলে দেবে, নামটা তামিম ইকবাল। সে-ইতো বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে মূল সম্পদ। বড় নির্ভরতা। একই ভাবে যদি জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশের সেরা অলরাউন্ডার তথা সবচেয়ে কার্যকর ক্রিকেটার, উজ্জ্বল পারফরমার এবং নাম্বার ওয়ান ম্যাচ উইনার কে? এক বাক্যে সবাই বলে দেবেন-সাকিব আল হাসান। খুব বেশী তথ্য-উপাত্ব আর পরিসংখ্যান ঘাটাঘাটির দরকার নেই। স্মৃতির আয়নায় দাড়ালেই ভেসে উঠবে তামিম ও সাকিবের অর্জন, কৃতিত্ব, প্রাপ্তি আর কীর্তির ছবি। সন্দেহাতীতভাবে গত ১০ বছর বাংলাদেশের ব্যাটিং-বোলিংয়ের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকার নাম তামিম-সাকিব। টিম বাংলাদেশের সাফল্যের স্বার্থক রুপকারও এ দুই বন্ধু। তাদের ছাড়া বিশ্ব ক্রিকেটের বড় আসর কিংবা মহাদেশীয় পর্যায়ে বড় সাফল্য বহু দূরে, একটি ম্যাচ জিততেও যে তামিমের চওড়া ব্যাট ও সাকিবের অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সের দরকার পড়ে। বাংলাদেশের খেলার দিন দর্শক, ভক্ত-সমর্থক তথা গোটা জাতির চোখ মূলত স্থির থাকে তামিম ও সাকিবের দিকে। বাংলাদেশের জয় তথা সাফল্য মানেই যে তামিম ও সাকিবের কার্যকর পারফরম্যান্স। তারা দুজন একসঙ্গে একই দিনে জ্বলে ওঠা মানেই দিন শেষে জয়ের দেখা পাওয়া। একজনের ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্সেও ধরা দিয়েছে অনেক জয়। তাইতো তামিম ও সাকিব সবচেয়ে জনপ্রিয়, দর্শকপ্রিয়। কিন্তু অবাক করা সত্য এই যে, এবারের এশিয়া কাপে সেই উজ্জ্বলতম তারকা তামিম ও সাকিব ছাড়াই ফাইনালে বাংলাদেশ। সেটা এমনি এমনি নয়। অদম্য আকাঙ্খা, স্পৃহা, প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি, আত্মনিবেদন আর সামর্থ্যের সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটিয়ে অনেক বাঁধা-বিপত্তি এবং প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে সাফল্যের সিড়ি বেয়ে এবারের এশিয়া কাপে ফাইনালে মাশরাফির বাংলাদেশ। মুশফিক এখন যেন অধিনায়ক মাশরাফির মোহনলাল। পলাশির আম্র কাননে ইংরেজদের সাথে বাংলার শেষ স্বাধীন নবার সিরাজদৌলার যুদ্ধে যেমন সেনাপতি মোহনলালই ছিলেন সর্বোচ্চ বিশ্বাসী, বিশ্বস্ত, আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক। এবারের এশিয়া কাপে মুশফিকও সেই ভূমিকায়। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের সাথে প্রায় একা লড়ে দলকে লড়িয়ে পুজি গড়ে দিয়েছেন এ প্রচন্ড পরিশ্রমী, অধ্যবসায়ী, পরিপাটি ব্যাটিং শৈলির উইলোবাজ। সঙ্গে পঞ্চ পান্ডবের আরেকজন মাহমুদউল্লাহও রেখেছেন সাধ্যমত অবদান। এর বাইরে কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ পাকিস্তানের সাথে অস্তিত্বের লড়াইয়ে রেখেছেন দারুণ কার্যকর ভূমিকা। তার বুদ্ধিদীপ্ত ও অতি কার্যকর এবং সমীহ জাগানো বোলিংয়ের সাথেই আসলে কুলিয়ে উঠতে পারেনি পাকিস্তানীরা। এর সঙ্গে মোহাম্মদ মিঠুন আর মেহেদি মিরাজও রাখছেন সহায়ক ভূমিকা। শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে চাপে, সংকটে ও বিপদে তার দুটি হাফ সেঞ্চুরি দলকে গভীর সংকট থেকে উদ্ধার করেছে। ঐ দুই ম্যাচে মুশফিকের সাথে মিঠুনের দায়িত্বশীল ব্যাটিং দলকে খাদের কিনারা থেকে উঠে দাড়াতে রেখেছে বড় ভূমিকা। সর্বোপরি অধিনায়ক মাশরাফির সাহসী, বলিষ্ঠ এবং কুশলী নেতৃত্বে দুর্বার বাংলাদেশ। ওপেনিংটা ভাল হচ্ছেনা। ঘুরে ফিরে মিডল অর্ডারে মুশফিক, মিঠুন আর মাহমুদউল্লাহই ভরসা। তারাই ত্রানকর্তার ভূমিকায়। পঞ্চ পান্ডবের দুই মূল স্তম্ভ তামিম-সাকিব ইনজুরির কারণে দলে নেই। কিন্তু অবাক করা সত্য, তারপরও পাকিস্তানের বিদায় ঘন্টা বাজিয়ে ফাইনালে মাশরাফির বাংলাদেশ। এমন নয় তামিম ও সাকিব ছাড়া আগে কখনই খেলেনি বাংলাদেশ। খেলেছে মোটে ৭টি ম্যাচ। তবে বিভিন্ন সময় ইনজুরি ও অন্য কারণে হয় তামিম না হয় সাকিব খেলেননি। সে সময় যে বাংলাদেশ জেতেনি, তা নয়। জিতেছে। ২০১০ সালের অক্টোবরে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪-০তে সিরিজ বিজয়ের মিশনে ছিলেন না তামিম। আবার ২০১৩ সালে ব্র্যান্ডন ম্যাককালামের কিউই বাহিনী যখন ৩-০তে হোয়াইটওয়াশ হয়, সেবার ছিলেন না সাকিব আল হাসান। কিন্তু দুজনার একসাথে দলের বাইরে চলে যাওয়া, তাও এশিয়া কাপের ফাইনালের আগে- এটা অনেক বড় ঘাটতি। শুন্যতা। প্রায় একযুগ ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন তামিম-সাকিব। দলের মূল চালিকাশক্তি, বড় নির্ভরতা তথা নিউক্লিয়াস। সেই ২০০৭ সালে ভারতের বিপক্ষে জোড়া হাফ সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে একদিনের ক্রিকেটে (৫০ ওভারের ফরম্যাটে) নিজেদের আগমন ধ্বনি দিয়েছিলেন তামিম-সাকিব। তারপর সময় গড়ানোর সাথে সাথে দুজন হয়েছেন উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর। টিম বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তামিম বনে গেছেন এক নম্বর ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশের টপ অর্ডার তথা ফ্রন্টলাইন ব্যাটিংটা চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খান পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যর ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। তার ভাল খেলা, জ্বলে ওঠা, রান পাওয়া আর বড় ইনিংস খেলা মানেই বাংলাদেশের ব্যাটিং ভাল হওয়া। স্কোরলাইন বড় আর মোটা তাজা হওয়া। মোদ্দা কথা বাঁহাতি ওপেনার তামিমই ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে বড় স্তম্ভ। আর ব্যাট ও বল হাতে সাকিব হয়ে গেছেন আশার প্রদীপ। এ দুই তারা জ্বলে ওঠা মানেই বাংলাদেশের আকাশে সাফল্যের লাল সূর্য্য ওঠা। বাংলাদেশের সাফল্যে তামিম ও সাকিবের অবদান কতটা? একটা ছোট পরিসংখ্যানেই তা জানা হয়ে যাবে। এ মুহুর্তে টেস্ট এবং টি টোয়েন্টি ফরম্যাটের মত ওয়ানডেতেও বাংলাদেশের টপ স্কোরার তামিম। দ্বিতীয় সর্বাধিক রান সংগ্রহকারী এবং দ্বিতীয় সর্বাধিক উইকেট শিকারী সাকিব। কিন্তু এ আসরে সেই তামিম প্রায় খেলতেই পারেননি। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বাধিক জয়ের স্বার্থক রুপকার সাকিবও পাকিস্তানের সাথে অঘোষিত সেমিফাইনালের আগে আঙুলের ব্যাথায় ছিটকে পড়েছেন। তাই আজ ফাইনালে তামিমের সাথে নেই সাকিবও। অনেকদিন পর এবারের এশিয়া কাপে একটি নতুন ইতিহাস রচিত হয়েছে। এই আসরে পাঁচ খেলায় বাংলাদেশ যে তিনটিতে জিতেছে, তার একটিতেও ম্যাচ সেরা পারফরমার তামিম কিংবা সাকিব নন। তামিমতো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই হাতের কব্জিতে বল লেগে আহত। আর হাতের আঙুলে ব্যাথা নিয়ে খেলা সাকিবও পাকিস্তানের সাথে হওয়া ম্যাচের আগে পর্যন্ত চার ম্যাচে একবারও ম্যাচ জেতানো ভূমিকা রাখতে পারেননি। তারপরও আজকের ফাইনালে তামিম ও সাকিবের অভাববোধ হচ্ছে। ভক্ত ও সমর্থকদের আফসোস ও অনুশোচনা- ইশ আজকের ফাইনালে যদি তামিম ও সাকিব থাকতেন? এমন মনে হবার কারণ অনেক। ইতিহাস জানাচ্ছে অন্য সব দলের মত ভারতের বিপক্ষেও তামিম ও সাকিব বাংলাদেশের সেরা পারফরমার। ভারতের বিপক্ষে ১৮ ম্যাচে ১৭ বার ব্যাটিং করার সুযোগ পাওয়া তামিম এখন পর্যন্ত সেঞ্চুরি হাঁকাতে না পারলেও সাত-সাতটি হাফ সেঞ্চুরির মালিক। সর্বোচ্চ ৭০। ৮৫.৫৪ স্ট্রাইকরেট আর ৩৩.৭৬ গড়ে মোট রান ৫৭৪। ভারতের সাথে এশিয়া কাপের ফাইনালে কেন তামিমের কথা মনে হবেনা? এবারের এশিয়া কাপের রবিন লিগের ম্যাচটির আগে ভারতীয়দের সাথে শেষ সাক্ষাতেও তামিমই ছিলেন টপ স্কোরার। গত বছর ১৫ জুন ইংল্যান্ডের বার্মিংহামের এ্যাজবাষ্টনে ভারতের বিপক্ষে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালেও এ বাঁহাতি ওপেনারের ব্যাট থেকে এসেছিল সর্বোচ্চ ৭০। মূলত তামিমের ঐ ইনিংসটির ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশ ২৬০ (২৬৪)এর ঘরে পৌঁছেছিল। ভারতের বিপক্ষে ব্যাট হাতে তামিমের খুব কাছাকাছিই আছেন সাকিব। এখন পর্যন্ত ভারতের সাথে মোট ১৭ টি ওয়ানডে খেলে ১৬ ইনিংসে সাত বার পঞ্চাশের ঘরে পা রেখে রান করেছেন ৫২৫। সর্বোচ্চ তামিমের চেয়েও বেশী ৮৫। গড় (৩৫.০০) আর স্ট্রাইকরেটও (৮২.৮) বেশ ভাল। সাকিবের মানে বল হাতে ভারতের বিপক্ষে রেকর্ড আহামরি নয়। ১৭ খেলায় উইকেট ১৮ টি। একবারের জন্য পাঁচ বা চার উইকেট পাননি। সেরা বোলিং ২৭ রানে তিন উইকেট। ওভার পিছু রান দেয়ার গতিও তুলনামুলক বেশী; ৪.৯৯। তারপরও অলরাউন্ডার সাকিব অনেক বড় নির্ভরতা। আশা-আকাঙ্খার প্রতীক। এমন দুজন অতি কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য পারফরমার ছাড়া ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে লাল সবুজের বাংলাদেশ-আফসোস হয় বৈকি! দেখা যাক মাশরাফির নেতৃত্বে আজ দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে বাকিরা তামিম-সাকিবের অভাব, ঘাটতি ও শূন্যতা কতটা পূরণ করতে পারেন ? তথ্যসূত্র: জাগো নিউজ২৪ আরএস/ ২৮ সেপ্টেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2Oksciq
September 28, 2018 at 08:01PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top