বর্ধমান, ১১ সেপ্টেম্বরঃ এবার অনার কিলিংয়ের নিদর্শন পশ্চিমবঙ্গ। মেয়ের ভিনধর্মে বিয়েতে আপত্তি। তাই পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে খুন করা হল বছর ১৯ এর তরুণীকে। কলকাতা থেকে গ্রেফতার তরুণীর বাবা ও দাদা।
৩১ অগাস্ট সকালে বর্ধমান থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে নবগ্রামে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের পাশে ধান খেতের মধ্যে এক তরুণীর দেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। গোলাপি সালোয়ার কামিজ পরে থাকা ওই তরুণীর মুখ থেঁতলে দেওয়া হয়েছে ভারী কিছু দিয়ে। অজ্ঞাতপরিচয় লাশ হিসেবে তরুণীর দেহ চলে যায় হাসপাতালের মর্গে। ময়নাতদন্তের সময় চোখে পড়ে তরুণীর দেহে লেখা দুটি ফোন নম্বর। সেই সেই ফোন নম্বরের সূত্র ধরেই পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর থানার পুলিশ মুম্বইতে হদিশ পায় করণ সিংহ নামে এক যুবকের। মুম্বই পৌঁছয় জেলা পুলিশের দল। সেখানে ওই যুবককে তাঁরা মৃত তরুণীর ছবি দেখাতেই জানতে পারেন মেয়েটির নাম জেহানা খাতুন। বাড়ি বিহারের মুজফ্ফরপুরের ইলাদাদ গ্রামে। ওই একই গ্রামে করণও থাকেন।
এরপরই পুলিশের তদন্তকারী দল জানতে পারেন জেহানার সঙ্গে করণের সম্পর্কের কথা। করণ অন্য ধর্মের হওয়ায় সেই সম্পর্ক মেনে নেয়নি জেহানার পরিবার। একবার করণকে বিয়ে করবে বলে পালিয়ে গিয়েছিল জেহানা। কিন্তু তারপর মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে যান জেহানার বাবা মহম্মদ মুস্তাক। মেয়েকে বুঝিয়ে করণের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতেও বলেন।
এরপর করণের কাছ থেকেই পুলিশ জানতে পারে জেহানার বাবা মুস্তাক এবং দাদা জাহিদ কলকাতার পার্ক সার্কাসে থাকেন। কলকাতায় তাঁরা গাড়ি চালান। অন্যদিকে, পুলিশের একটি দল জেহানার বিহারের বাড়ি পৌঁছয়। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, কয়েকদিন আগেই জেহানাকে কলকাতায় নিয়ে গিয়েছে তাঁর বাবা ও দাদা।
সেই সূত্র ধরেই রবিবার রাতে কলকাতায় পার্ক সার্কাস এবং আনন্দপুর এলাকায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। আটক করা হয়, জেহানার বাবা এবং দাদাকে। জেরার মুখে বাবা মুস্তাক স্বীকার করে নেন যে, মেয়েকে খুন করেছেন তিনি।
জেহানার বাবা-দাদা জানিয়েছেন, অন্য ধর্মের ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক তাঁদের গ্রামের কেউ মেনে নেয়নি। একঘরে করা হয়েছিল তাঁদের। তারপর গ্রামের মাতব্বররদের নিদান ছিল, মেয়েকে গ্রামের বাইরে কোথাও থেকে বিয়ে দিয়ে আসতে হবে মুস্তাককে।
মুস্তাক জানিয়েছেন, গাড়ি চালাচ্ছিলেন জাহিদ। পেছনের আসনে ছিলেন মুস্তাক এবং জেহানা। জেহানাকে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থাতেই গাড়ির মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। যাতে কেউ চিনতে না পারে তারজন্য দেহ টেনে ধান খেতে নিয়ে গিয়ে পাথর দিয়ে মাথায় মুখে আঘাত করে মুখ বিকৃত করা হয়। মুস্তাকের কথায় স্পষ্ট, মেয়ের প্রাণের চেয়েও সামাজিক বিধি তাঁর কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশের সামনেও বুক চিতিয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টিতেই স্পষ্ট সেকথা জানালেন জাহানার বাবা।
মঙ্গলবার বর্ধমান আদালতে হাজির করা হয় মুস্তাক এবং জাহিদকে।
from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal https://ift.tt/2N2794l
September 11, 2018 at 08:10PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন