গত ১ ও ২ সেপ্টেম্বর টরন্টোতে অনুষ্ঠিত ৪র্থ বিশ্ব সিলেট সম্মেলন ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত। সম্মেলনটি উৎসর্গ করা হয় মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল মোহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানির স্মৃতির প্রতি। সম্মেলন স্থলের প্রধান ফটকে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন তোরণ থেকে শুরু করে সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশিত স্যুভেনির, প্রকাশিত অনুষ্ঠানসূচি, একটি বিশেষ স্থানে ওসমানির প্রতিকৃতি স্থাপন, সর্বোপরি প্রধান মঞ্চের নাম ওসমানী মঞ্চ নামকরণের মাধ্যমে অভ্যাগতদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। নতুন প্রজন্ম জানতে পারে শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সিক্ত এই মহান ব্যক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং তিনি সিলেটেরই কৃতী সন্তান। সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষন সেমিনার পর্বের প্রথমেই ছিল মুক্তিযুদ্ধে সিলেট শীর্ষক সেমিনার। বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ডা. জিয়া উদ্দিনের সঞ্চালনায় বক্তারা তুলে ধরেন মহান মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত নানান ঐতিহাসিক ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের সেকেন্ড ইন কমান্ড সিলেটের আরেক কৃতি সন্তান জেনারেল রব সহ উঠে আসে বীর মুক্তিযোদ্ধা অনেকের নাম; যারা জীবন বাজি রেখে দেশকে স্বাধীন করতে পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। বীরত্বের জন্য পেয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় পদক ও পুরষ্কার। বক্তারা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধে সেসব শহীদদের- যারা অকাতরে প্রাণ দিয়েছিলেন দেশের জন্য। বাঙালি জাতির অহঙ্কার মহান মুক্তিযুদ্ধকে এমনভাবে চিত্রায়িত করতে দেখে অনেকেই চোখের জল সংবরণ করতে পারেননি। জাতির চিন্তা চেতনাকে তুলে ধরে উদ্যোক্তারা দর্শক-অতিথিদের কাছে কেবল নন্দিতই হননি; ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা বলেছেন, উত্তর আমেরিকার কোন সংগঠন মুক্তিযুদ্ধকে এভাবে তুলে ধরতে আজ পর্যন্ত কোথাও তারা দেখেননি। সম্মেলনে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান ইকবাল বাহার চৌধুরি প্রযোজিত এ হিরো অব লিবারেশন ওয়ার: আতাউল গণি ওসমানি প্রামাণ্যচিত্র এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী মকবুল চৌধুরি পরিচালিত ১৯৭১ সালে প্রবাসি বাঙালিদের ভূমিকা নিয়ে তৈরি এওয়ার্ড প্রাপ্ত প্রামাণ্যচিত্র নট এ পেনি, নট এ গান প্রদর্শণ করা হয়। সম্মেলনের কনভেনর রাশেদা কে চৌধুরি বলেন, বিশ্ব সিলেট সম্মেলনে আমরা একদিকে যেমন সিলেটের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে তুলে ধরেছি, পাশাপাশি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকেও নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। হাজার হাজার দর্শকদের উপস্থিতি প্রমাণ করে সম্মেলন সফল হয়েছে এবং আগামীতে টরন্টোর এ সম্মেলন মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। সিলেট বিশ্ব সম্মেলনে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রেজার ১৯৭১এর উদ্যোগে আলোকচিত্র প্রদর্শনীটি ছিল এক অনন্য সংযোজন। স্মৃতিচিত্রে সিলেট: এক্সিবিশন থ্রো দ্য লেন্সেস অব রজার গোয়েন অ্যান্ড আনিস মাহমুদ শীর্ষক প্রদর্শনীর আলোকচিত্রী দুজনের মধ্যে রজার গোয়েন বয়সে প্রবীণ ও মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পরে ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে সরাসরি ফিল্ডফোটোগ্র্যাফি করতে ঘুরে বেড়িয়েছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের আনাচকানাচে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি বিলেতের বিভিন্ন শহরে ক্যামেরা নিয়ে মিছিল-সমাবেশের দলিলায়ন করে বেড়িয়েছেন। রজার গোয়েন বিলেতে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে-পড়া ভিনদেশি এক মুক্তিযোদ্ধা। ব্রিটিশ আলোকচিত্রী রজার গোয়েনের ছবিগুলো সত্তর দশকের প্রথমদিকে শহর ও প্রত্যন্ত সিলেট চিত্রায়িত করেছেন। ফটোজার্নালিস্ট আনিস মাহমুদের কাজে একদম সাম্প্রতিক সিলেট ধরা রয়েছে পূর্ণায়ত প্রকৃতি ও প্রাণ নিয়ে। একটি মায়াবী জনপদের দুই দূরবর্তী সময়ের চিত্রকর্মসমূহ দর্শকের চোখে যেন সচলায়ত চিরসময়ের সিলেট জনপদটিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ট্রেজার ১৯৭১এর উদ্যোক্তা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীটির কিউরেটর উজ্জ্বল দাশ জানিয়েছেন, সম্মেলনে অভ্যাগতরা খুব মনযোগ সহকারে ছবিগুলোর প্রতি তাদের আগ্রহ দেখিয়েছেন। নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরাও খুটিয়ে খুটিয়ে ছবিগুলো দেখছিলো। স্মৃতিচিত্রে সিলেট প্রদর্শনী সম্পর্কে সম্মেলনে আগত অতিথিদের মন্তব্য হলো: এটি একটি অনন্য ও প্রশংসনীয় প্রয়াস। ছবিগুলো থেকে বর্তমানের সিলেট এবং পুরোনো সিলেটের বৈচিত্র্যময় ইতিহাসের খোঁজ পাওয়া যায়। সম্মেলনে কানাডা ও আমেরিকার বেশ কয়েকজন প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাকে এওয়ার্ড প্রদান করে সম্মানিত করা হয়। এরা হলেন- মাসুক মিয়া, রঙলাল দেব চৌধুরি, রাশেদা আমিন, আব্দুল মজিদ চৌধুরি, গাজি সাদ উদ্দিন আহমেদ, ডা. জিয়া উদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ তুতিউর রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান উদ্দিন ও বাবলা দেব। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের এক অজানা অধ্যায় যুদ্ধশিশু নিয়ে গবেষণা করায় অটোয়া প্রবাসী মুস্তফা চৌধুরিকে এওয়ার্ড প্রদান করা হয়। বীরমুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের প্রতিনিধিদের হাতে এওয়ার্ডগুলো তুলে দেন সম্মেলনের কনভেনর রাশেদা কে চৌধুরি, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. খলিকুজ্জামান এবং জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব ঢাকার সভাপতি সি এম তোফায়েল সামী। সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সম্মেলনের চীফ কো-অর্ডিনেটর ইন্তেখাব চৌধুরি তুহিন।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2Qje0nY
September 10, 2018 at 07:25PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন