ঢাকা, ২০ অক্টোবর- খুব বেশি পেছনে তাকানোর দরকার নেই। এই বছরের হিসেব ট্যালি করলেই বেড়িয়ে আসবে দল হিসেবে এ মুহূর্তে জিম্বাবুয়ের চেয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। মাঠের পারফরম্যান্স, ফল, অর্জন, প্রাপ্তি এবং পরিসংখ্যান- সবই বাংলাদেশের কথা বলবে। এই তো গত জুলাই মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ক্যারিবীয়দের ২-১ এ সিরিজ হারিয়ে বিজয়ীর বেশে দেশে ফিরে এসেছে মাশরাফির দল। আর মাত্র এক মাস আগে আরব আমিরাতে মহাদেশীয় ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণী আসর এশিয়া কাপে পাকিস্তান (৩৭ রানে), শ্রীলঙ্কাকে (১৩৭ রানে) হারিয়ে ফাইনালে সময়ের সেরা ওয়ানডে দল ভারতের সাথে সমানতালে লড়ে একদম শেষ বলে গিয়ে হার মেনেছে মাশরাফির দল। সেখানে পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে শেষ দুই সিরিজে আট ম্যাচে জয়ের দেখাই পায়নি জিম্বাবুয়ানরা। ২০১৮ সালে ২৩টি ওয়ানডে খেলে জিম্বাবুয়ে জিতেছে মাত্র ৪ ম্যাচে। তার তিনটি আবার আফগানিস্তান, হংকং ও আয়ারল্যান্ডের মত কমজোরি ও নিচু সারির দলের বিপক্ষে। প্রতিষ্ঠিত শক্তিগুলোর বিপক্ষে এ বছর জিম্বাবুয়ের জয় মোটে একটি। সেটাও বাংলাদেশের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে। এ বছর ১৭ জানুয়ারি এই শেরে বাংলায় লঙ্কানদের বিপক্ষে ১২ রানে জিতেছিল জিম্বাবুয়ানরা। তারপর বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই বার, পাকিস্তানের সাথে পাঁচবার ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনবারের মোকাবেলায় একটিও জয় নেই। এমন এক দুর্বল দলের বিপক্ষে এশিয়া কাপে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখানো মাশরাফি বাহিনীর হোম সিরিজ। জিম্বাবুয়ান ক্যাপ্টেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা যদিও মানতে চান না বাংলাদেশ ফেবারিট। তবে আসল সত্য হলো, সব হিসেব নিকেশেই এগিয়ে টাইগাররা। তার মানে মাসাকাদজার দল আন্ডারডগ। এশিয়া কাপের মত অমন এক বড় মঞ্চে দাপুটে পারফরম্যান্স দেখানোর পর দূুর্বল কমজোরি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ শিবিরের মনোভাব কি? স্বাগতিকরা কি নিজেদের ফেবারিট ভেবে জিম্বাবুয়ানদের হালকা ভাবে দেখছে? অধিনায়ক মাশরাফির ভাবনা কি? জিম্বাবুয়েকে কি হিসেবের মধ্যেই আনছেন না ? নিশ্চয়ই জানতে খুব ইচ্ছে করছে। তাহলে শুনুন, মাশরাফি খুবই বাস্তববাদি। কথা-বার্তায় পরিষ্কার, মাশরাফি অনেক সতর্ক-সাবধানি। অনেক সাজানো গোছানো জবাবে পরিষ্কার ফুটে উঠেছে এশিয়া কাপের মত অমন বড় ইভেন্টে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার মত রাঘব বোয়াল শিকারের পর জিম্বাবুয়ের মত ছোট মাছ শিকারের তাড়া কমেনি একটুও। ভালো খেলে জয়ের ইচ্ছে ও তাগিদ আছে পুরোপুরি। এমন এক দুর্বল দলের বিপক্ষে শ্রীহীন সিরিজে নিজ দলকে অনুপ্রাণিত ও উজ্জিবীত করার ফর্মূলা আছে তার কাছে। মাশরাফি জানেন, তার দল ফেবারিট। কিন্তু তা নিয়ে বড় গলায় কথা বলার চেয়ে সতর্ক-সাবধানে করণীয় কাজগুলো করার চিন্তা মাথায়। পাশাপাশি জিম্বাবুয়েও বাংলাদেশকে হারাতে পারে। অতীতে হারিয়েছে। এবারও যে হারাতে পারবে না, বাংলাদেশ হারতে পারে-এমন চিন্তাও আছে মাথায়। দ্বিতীয় অনুভব, জিম্বাবুয়েকে হারালে হয়তো তেমন সাড়া পড়বে না। কিন্তু খারাপ খেলে হারলে তীর্যক কথা হবে। সমালোচনার তীর গায়ে এসে লাগবে। তাই নিজ দলকে অনুপ্রাণিত করতে মাশরাফির মুখে এমন কথা, এশিয়া কাপে তামিম ও সাকিবকে ছাড়া যেভাবে যেই ধরনের ক্রিকেট খেলে এসেছি, এরপর এই ধরনের সিরিজ খেলতে নেমে পারফরম্যান্স খারাপ হলে অনেক কথা ওঠবে। সে চিন্তাটা অবচেতন মনে কাজ করে সবার। এটাও কিন্তু এক রকম মানসিক চাপ। মাশরাফি সেই চাপ কাটিয়ে ওঠার পথ খুঁজে বেড়াচ্ছেন, কিন্তু আমার মতে, ওই জায়গাটায় কাজ করা প্রয়োজন। এমন না যে জিম্বাবুয়ের কাছে আমরা কখনো হারিনি বা হারতে পারব না। এমন কিছু না। এরপর জিম্বাবুয়ানদের লাইন আপে যে মাসাকাদজা, ব্রেন্ডন টেলর, এলটন চিগুম্বুরা ও সিকান্দার রাজার মত অভিজ্ঞ ও পরিণত ক্রিকেটার আছেন। তাদের দিকে ইঙ্গিত করে মাশরাফি বলেন, ওদেরও কজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছেন। সতর্ক মাশরাফি নিজ দলকে ভালো খেলায় অনুপ্রাণিত করতে গিয়ে দলের ক্রিকেটারদের বোঝাচ্ছেন, প্রতিপক্ষ এবং তার শক্তি ও সামর্থ্য বড় নয়। আসল কথা হলো, দলগত খেলা হলেও ক্রিকেটে ব্যক্তিগত অর্জন-কৃতিত্বও বড় করে দেখা হয়। পরিসংখ্যানের খাতায় সব দলের বিপক্ষে রেকর্ডই সমান। প্রতিপক্ষ যেই হোক না কেন, ব্যক্তিগত অর্জন, কৃতিত্ব কিন্তু সমান। সেটা ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দ. আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড কিংবা পাকিস্তান, ওয়েষ্ট ইন্ডিজ যার বিপক্ষেই হোক না কেন; এখানে একজন ক্রিকেটার যদি সেঞ্চুরি করেন, সেটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অংশ হিসেবেই গণ্য হবে। কেউ যদি পাঁচ উইকেট পান তাহলে পাঁচ উইকেটই ধরা হবে। মাশরাফি তার সহযোগিদের বোঝাচ্ছেন, যে প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই খেলি না কেন, এই অর্জনগুলো করা কিন্তু কঠিন। দলকে চাঙা রাখতে এবং ভালো খেলায় উজ্জীবিত করতে টাইগার অধিনায়কের আরও দাওয়াই আছে। তার কথা, প্রত্যেক ক্রিকেটারকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ভালো খেলতে উদ্বুদ্ধ হওয়া জরুরি। মাশরাফির উপলব্ধি, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে আসলে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি শুরু, বিশ্বকাপের আগে এমন চারটি সিরিজ আছে খেলার মত এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রস্তুত হবার জন্য। সেই প্রস্তুতিতে পূর্ণ শক্তির জিম্বাবুয়েকে পাওয়া তাই ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখতে চান টাইগার অধিনায়ক। এ নিয়ে তিনি বলেন, জিম্বাবুয়ানরা তাদের সেরা দলটা পাঠিয়েছে। যা আমাদের জন্য ভালোই হয়েছে। সূত্র: জাগোনিউজ২৪ আর/১২:১৪/২০ অক্টোবর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2yUImFd
October 21, 2018 at 05:35AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top